যুদ্ধ বন্ধে ‘কার্যকর আলোচনায়’ থাকবে ইউক্রেন ও ইউরোপীয়রা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:৩১

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা ‘কার্যকর হলে’ পরবর্তীতে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলোকেও এতে যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
তিনি বলেন, সৌদি আরবে রাশিয়ার সাথে বৈঠকে শান্তি চুক্তিতে রাশিয়ার আগ্রহ পর্যবেক্ষণ করবে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোর যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ এটি।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন টেলিভিশন সিবিসিতে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন রুবিও। এই আলোচনার মধ্য দিয়ে তারা যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা খতিয়ে দেখবে বলে মত দেন মার্কিন এই রাজনীতিবিদ।
এর আগে স্থানীয় সময় শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) একজন মার্কিন আইনপ্রণেতা ও বৈঠকের পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কয়েকদিনের মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে বসতে যাচ্ছেন রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে কাউকে এই আলোচনায় রাখা হচ্ছে না।
এছাড়া ইউক্রেনে নিযুক্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত কেইথ কেলগ জানিয়েছেন, ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় ইউরোপের কোনো ভূমিকা থাকবে না। এর আগে ইউরোপীয় দেশগুলোকে ওয়াশিংটন একটি প্রশ্নাবলি পাঠিয়ে জানতে চেয়েছে, কিয়েভের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তারা কী কী অবদান রাখতে পারে।
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি ) এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। বৈঠকটি আয়োজন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব। ইতোমধ্যে বৈঠকে অংশ নিতে সৌদি পৌঁছেছেন রুবিও।
তবে রুবিও জানান, ভিন্ন একটি রাজনৈতিক সফরে তিনি আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছিলেন। তিনি নিশ্চিত করেন, স্থানীয় সময় রোববারই (১৬ ফেব্রুয়ারি) বৈঠকে অংশ নিতে সৌদি আরব যাবেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ ও হোয়াইট হাউসের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ।
ইউক্রেন-ইউরোপীয়দের বাদ দেয়ায় উদ্বেগ
তবে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের এই আলোচনায় খোদ ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ না জানানোতে উদ্বেগ প্রকাশ করে কিয়েভ। এর পাশাপাশি আলোচনায় ইউরোপকে অর্ন্তভুক্ত না করায় তাদের পাশ কাটিয়ে শান্তি চুক্তির আলোচনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন ইউরোপীয় নেতারা।
এর আগে, বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সরাসরি বৈঠক করতে একমত হওয়ার কথা জানায় ট্রাম্প। তাদের মধ্যে ফোনালাপের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়।
ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপে ইউরোপীয় দেশগুলো আশঙ্কা করেছে, তাদের বাদ দিয়েই হয়তো এমন একটি শান্তি চুক্তি হতে যাচ্ছে, যা তাদের নিজেদের নিরাপত্তার ওপরও প্রভাব ফেলবে। বিশেষত সেটি যদি রাশিয়ার অনুকূলে হয়।
তবে তাদের এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, সৌদিতে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার কেবল সূত্রপাত হতে যাচ্ছে। অগ্রগতি হলে অবশ্যই ইউক্রেন ও ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোকে আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হবে।
রুবিও সিবিসিকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে পুতিনের ফোনালাপ হয়েছে। সেখানে শান্তির আলোচনায় পুতিনের আগ্রহ দেখতে পেয়েছেন তিনি। সে সময় প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) এই সঙ্ঘাত বন্ধে ও ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজের ইচ্ছা পোষণ করেন।’
তিনি জানান, ‘একটি ফোনকল কখনো যুদ্ধ থামিয়ে শান্তি আনতে পারে না। আগামী কয়েকদিনের আলোচনা ও বৈঠকটি নিশ্চিত করবে আদৌ শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা।’
রুবিও নিশ্চিত করেছেন যুদ্ধ বন্ধের যেকোনো অর্থপূর্ণ আলোচনা ইউক্রেন কিংবা ইউরোপীয় দেশগুলোকে বাদ দিয়ে হবে না।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে পুতিনের ফোনালাপের পর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও টেলিফোনে কথা বলেছেন। একটি দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতির জন্য একে অপরের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে সিবিসিতে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানতে চাওয়া হলে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান রুবিও। তবে তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসন রাশিয়ার ওপর যে একতরফা নিষেধাজ্ঞাগুলো দিয়েছে, সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে তাদের। তবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে কিনা; তা নিশ্চিত করেননি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রৗ।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর গেল তিন বছর ধরে সেই যুদ্ধ চলছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সূত্র : সিবিসি/ইউএনবি