যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে সেনা মোতায়েনের নির্দেশ ট্রাম্পের
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:১৫
অভিবাসন রোধে দক্ষিণ সীমান্তে সেনাবাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সামরিক বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিবিএস নিউজকে বলেছেন, এক হাজার সেনা সদস্য এবং পাঁচ শ’ নৌ-বাহিনীর সদস্যদের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগো এবং টেক্সাসের এল পাসোতে স্থানান্তরিত করা হবে।
তারা সেখানে ‘সীমান্ত মিশন’ নিয়ে কাজ করবে। তবে তারা আইন প্রয়োগের কাজে জড়িত থাকবে না বলে জানান এই কর্মকর্তা।
দু’টি সি-১৭ এবং দু’টি সি-১৩০ বিমান, হেলিকপ্টারসহ এ সেনা সদস্যদের মেক্সিকোর নিকটবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে পাঠানো হবে।
ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা সচিব রবার্ট সেলেসেস বলেছেন, পাঁচ হাজারেরও বেশি ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ সরানোর জন্য সামরিক বিমান সরবরাহ করা হবে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটকে ট্রাম্পের সর্বশেষ নির্বাহী আদেশ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে পনের শ’ অতিরিক্ত সেনা পাঠানো হবে বলে এ তথ্য জানান তিনি।
যারা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করবে তাদের পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন লেভিট।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এমন একটি সময়ের জন্য অপেক্ষা করছে, যাতে আমাদের প্রতিরক্ষা বিভাগ প্রকৃতপক্ষে দেশের নিরাপত্তাকে গুরুত্বের সাথে নেয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের এক নম্বর অগ্রাধিকার এবং প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যেই সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন।’
লেভিট আরো জানান, ট্রাম্পও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করাকে’ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
লেভিট বলেন, ‘তোমাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়া হবে, গ্রেফতার করা হবে, তোমাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে, এসো না।’
হাউসে পাস অবৈধ অভিবাসন বিল, শিগগিরই আইনে স্বাক্ষর করবেন ট্রাম্প
অবৈধ অভিবাসন রোধে হাউসে ২৬৩-১৫৬ ভোটে ‘লেকেন রাইলি’ আইনের একটি সংশোধিত সংস্করণ পাস হয়েছে। সোমবার শপথ নেয়ার পর আইন সভায় প্রথম জয় এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের।
যেহেতু এটি ইতোমধ্যেই সিনেটে পাস হয়েছে, তাই বিলটি এখন আইনে পরিণত হওয়ার জন্য তার ডেস্কে স্বাক্ষরের জন্য যাবে।
অনিবন্ধিত একজন অভিবাসীর হাতে নিহত এক নারীর নামে নামকরণ করা হয়েছে এই বিলটির।
বিলটিতে কর্মকর্তাদের সুনির্দিষ্ট অপরাধে অভিযুক্ত, গ্রেফতার বা দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এমন অনিবন্ধিত অভিবাসীদের আটক করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আটকযোগ্য অপরাধের পরিধি বাড়ানোর জন্য সিনেটে চূড়ান্ত সংস্করণে দু’টি সংশোধনী যুক্ত করা হয়েছে।
৪৫ জনেরও বেশি হাউস ডেমোক্র্যাট সংশোধিত সংস্করণটিকে সমর্থন করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
১২ জন সিনেট ডেমোক্র্যাট বিলটিকে সমর্থন করেছেন। অভিবাসন বিষয়ে তারা যে ডানপন্থী হতে পারেন এটি সেদিকেই ইঙ্গিত করে।
দক্ষিণ সীমান্তের তথ্য
মেক্সিকোর দক্ষিণ সীমান্তজুড়ে অভিবাসনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ‘রেকর্ডসংখ্যক’ অবৈধ অভিবাসী সীমান্ত অতিক্রম করার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন এবং বর্তমান অভিবাসনকে ‘আক্রমণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
বাইডেন প্রশাসনের সময়ে সীমান্ত অতিক্রম রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছিল। তবে ট্রাম্প নির্বাচনে জয়লাভ করার এবং ক্ষমতা গ্রহণের আগেই এ সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে শুরু করে।
মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অভিবাসন নিয়ে আলোচনা চলছে
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউমের বলেছেন, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অভিবাসন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মেক্সিকোর স্থানীয় সময়ে এক দৈনিক সংবাদ সম্মেলনে শেইনবাউম বলেছেন, মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুয়ান রামন দে লা ফুয়েন্তে এবং সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্কো রুবিও মঙ্গলবার প্রথম ফোনালাপ করেছেন।
শেইনবাউম কথোপকথনটিকে ‘আন্তরিক’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, এই দুই কর্মকর্তা অভিবাসন এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে লক্ষ্য দিয়েছেন।
এই প্রেসিডেন্টের মতে, এটি চলমান কথোপকথনের একটি অংশ।
শেইনবাউম আরো বলেছেন, মেক্সিকো ট্রাম্পের একটি প্রস্তাবে রাজি হয়নি, যেখানে আশ্রয়প্রার্থীদের দাবিগুলো প্রক্রিয়াধীন থাকাকালীন মেক্সিকোতে অপেক্ষা করতে হবে।
দুর্যোগ-ত্রাণ নিয়ে নতুন বাজেট যুদ্ধ শুরু : ট্রাম্প
ফক্স নিউজে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, কংগ্রেসে বাজেট নিয়ে লড়াই করতে হবে।
বাজেটে লস অ্যাঞ্জেলস এবং উত্তর ক্যারোলিনার জন্য দুর্যোগ সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
দাবানলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেছেন, ‘লস অ্যাঞ্জেলসের সব কিছু বদলে গেছে। কারণ লস অ্যাঞ্জেলসে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে।’
অনুষ্ঠানের উপস্থাপক শন হ্যানিটি বলেন, উত্তর ক্যারোলিনার ভোটাররা তাকে (ট্রাম্পকে) ভোট দিয়েছে এবং সেপ্টেম্বরে হারিকেন হেলিনের কারণে তারা এখনো ভুগছে।
এ সময় ট্রাম্প বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা উত্তর ক্যারোলিনা নিয়ে চিন্তা করে না।’
রাজ্যগুলোকে ফেডারেল তহবিল দেয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি বরং দেখতে চাই রাজ্যগুলো তাদের নিজস্ব সমস্যার সমাধান করছে।’
তিনি আরো দাবি করেন, ক্যালিফোর্নিয়া দাবানল মোকাবেলায় ব্যবহার করার পরিবর্তে সমুদ্রে পানি ফেলার অনুমতি দিচ্ছে।
যখন ট্রাম্প এ কথা বলছিলেন তখন লস অ্যাঞ্জেলসে নতুন করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া দাবানলের মধ্যে আবার নতুন করে স্থানান্তরের আদেশ জারি করা হচ্ছিল।
২১ জানুয়ারি দায়িত্ব নেয়ার পরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসন ঠেকাতে একের পর এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
জন্মগত নাগরিকত্বের সংজ্ঞা নির্ধারণের আদেশ থেকে শুরু করে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা পর্যন্ত, ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগেই যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
এর কয়েক ঘণ্টা আগেই, হাজার হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করা হয়।
কারণ নতুন প্রশাসন ‘সিবিপি অন’ অ্যাপ বাতিল করে। এই অ্যাপের মাধ্যমে মূলত সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের জন্য আগে থেকেই বুকিং করতে হয়।
ট্রাম্প তার উদ্বোধনী ভাষণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ‘সমস্ত অবৈধ প্রবেশ বন্ধ করা হবে’ এবং লক্ষাধিক ‘অবৈধ অভিবাসী’ ফেরত পাঠানো হবে।
তিনি মেক্সিকোর মাদক চোরাকারবারি চক্রগুলোকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দেয়ার একটি আদেশেও স্বাক্ষর করেছেন।
সূত্র : বিবিসি