২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭ মাঘ ১৪৩১, ২০ রজব ১৪৪৬
`

টিকটক ডুবালেন ট্রাম্প, ত্রাতাও হলেন তিনি

টিকটক ডুবালেন ট্রাম্প, ত্রাতাও হলেন তিনি - ছবি : সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম মেয়াদে টিকটক নিষিদ্ধে নেয়া উদ্যোগের নেতৃত্বে ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদে আকস্মিকভাবে সেই তিনিই এই ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপটির ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত হলেন। যদিও টিকটককে একেবারে স্বস্তি না দিয়ে একটা প্যাঁচ রেখে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

স্থানীয় সময় সোমবার (২০ জানুয়ারি) শপথ নেয়ার পর টিকটক নিষেধাজ্ঞার আইন কার্যকরে আরো ৭৫ দিন বিলম্ব করতে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন তিনি। এ সময়ে ট্রাম্প এই আভাসও দিয়েছেন যে অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে সচল রাখতে হলে দেশটির সরকারকে অর্ধেক মালিকানা দিতে হবে।

কেবল এখানেই থেমে যাননি। চীনকে হুমকি দিয়ে বলেছেন- ‘টিকটকের সাথে মার্কিন চুক্তির অনুমোদন দিতে যদি বেইজিং ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশটির বিরুদ্ধে নতুন করে রাজস্ব আরোপ করা হবে।’

জনপ্রিয় অ্যাপটি নিষিদ্ধের আইন দেশটির সুপ্রিমকোর্ট বহাল রাখায় শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দিনের শেষভাগে অ্যাপল ও গুগলসহ মার্কিন অ্যাপ স্টোর থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। তখন এক বার্তায় টিকটক জানিয়েছে, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে, টিকটিক নিষিদ্ধ করে একটি আইন যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর করা হয়েছে। যে কারণে এখন থেকে ব্যবহারকারীরা আর অ্যাপটিতে ঢুকতে পারবেন না।’

কিন্তু পরের দিনই আবার অ্যাপ স্টোরে দেখা দেয় টিকটক। রোববার (১৯ জানুয়ারি) রাতে সামাজিকমাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘টিকটক ফিরেছে, আমাদের হাতে এটির কোনো বিকল্প নেই।’

খবরে বলা হয়, এই নিষিদ্ধ অস্থায়ী হলেও এতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া রাজনীতি, সামাজিকমাধ্যমের বাজার, চীন-মার্কিন সম্পর্ক ও লাখ লাখ টিকটক ব্যবহারকারীর ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৭ কোটি বাসিন্দা টিকটক ব্যবহার করেন। সাংস্কৃতিক ও আর্থিকভাবে তারা এই অ্যাপটির ওপর নির্ভরশীল।

বিশেষ করে মার্কিন তরুণ-তরুণীদের মধ্যে অ্যাপটির জনপ্রিয়তা অস্বাভাবিক। তারা খবরাখবর পেতে, বিনোদনের খোঁজে ও অর্থ উপার্জনে দিনের বড় একটা সময় টিকটকে ডুবে থাকেন।

এর আগে কখনো যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সামাজিকমাধ্যম নিষিদ্ধ করা হয়নি। গত বছরের এপ্রিলে কংগ্রেসে দ্বিদলীয় ভোটে পাশ হয় আইনটি। গেল শুক্রবার মার্কিন সুপ্রিমকোর্টও আইনটিকে বহাল রেখেছে। এতে চীনা মালিকানার অন্য অ্যাপসগুলোও নিষিদ্ধ কিংবা বিক্রি করতে বাধ্য করতে ব্যাপক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনকে।

তবে তারা আইনটিকে একতরফাভাবে ব্যবহার করবে কি না; তা এখনো পরিষ্কার না। কিন্তু ট্রাম্পের আগের মেয়াদে সামাজিকমাধ্যম, জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি নিয়ে যে নাটকীয় সব বিতর্ক ওঠেছিল- টিকটকের ঘটনা এবার সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।

টিকটক ছাড়াও মার্কিন অ্যাপস্টোর থেকে ভিডিও সম্পাদনার অ্যাপ ক্যাপকাট, লাইফস্টাইল অ্যাপ লেমন৮ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।

হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার আগে নিজের সামাজিকমাধ্যমে ট্রাম্প বলেন, ‘টিকটক নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে সময় বাড়াতে চাই, যাতে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষায় তাদের সাথে একটি চুক্তি করতে পারি।’

এর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘শপথ নেয়ার পর টিকটককে ৯০ দিন সময় দিতে চাই। যদি সেটা করি, তবে সোমবার সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কিছু সামাজিকমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারেও তা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছিল। চীন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বিল বিশপ বলেন, ‘টিকটক নিয়ে মার্কিন ঘরোয়া রাজনীতিও তোলপাড়। কিন্তু এখন পর্যন্ত যা কিছু ঘটছে, সবই ট্রাম্পের অনুকূলে।’

‘যদি আইন কার্যকর হয়ে টিকটক বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর সেই দায় চাপাবেন তিনি। কারণ বাইডেন প্রশাসনের অধীনেই আইন প্রণয়ন হয়েছে। আবার যদি টিকটক ফিরে আসে বহালতবিয়তে, তাহলে ট্রাম্প হবেন ত্রাতা। সামাজিকমাধ্যম ও ব্যবহারকারী- দু‘পক্ষ থেকে প্রশংসায় ভাসবেন ট্রাম্প,’ বলেন বিল বিশপ।

ট্রাম্পের আনুকূল্য পেতে ব্যস্ত টেক জায়ান্টরাও

টিকটক নিষিদ্ধ ও পুনর্বহাল করার ঘটনা এমন একটা সময় ঘটেছে, যখন বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি ও প্রধান নির্বাহীরা অধীর আগ্রহে ট্রাম্পের সাথে সম্পর্ক বিনির্মাণের চেষ্টা করছে।

ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে ২০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে তার সাথে নজিরবিহীন সম্পর্ক উপভোগ করছেন টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। নিজে মাঠে নেমে ট্রাম্পের জন্য ভোট চেয়েছেন সামাজিকমাধ্যম এক্সের ওই মালিক।

এছাড়াও ফ্লোরিডার মার-আ-লাগো রিসোর্টে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম এই প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করেছেন মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জুকারবার্গ। এখানেই ক্ষান্ত হননি ফেসবুকের এই সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে তাল মিলিয়ে নিজের সামাজিকমাধ্যমগুলোর নীতিমালায়ও পরিবর্তন এনেছেন ব্যাপক।

সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে চলতি মাসের শুরুতে মেটার সামাজিকমাধ্যমে তৃতীয় পক্ষের ফ্যাক্ট-চেকিং বন্ধ করে দিয়েছেন জুকারবার্গ। পাশাপাশি বিদ্বেষ প্রচার নিয়ন্ত্রণে যে নীতিমালা ছিল, তা-ও শিথিল করা হয়েছে। বৈচিত্র্য ও ন্যায্যতার নীতিমালারও ইতি টেনেছেন তিনি।

পাশাপাশি আলটিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপের (ইউএফসি) প্রধান নির্বাহী ও প্রেসিডেন্ট ডানা হোয়াইটকে মেটার পরিচালনা বোর্ডে নেয়া হয়েছে। ট্রাম্পের প্রভাবশালী মিত্র হিসেবে দেখা হয় টানা হোয়াইটকে।

ট্রাম্পের সান্নিধ্য পেতে তার অভিষেক তহবিলে ১০ কোটি ডলার করে সহায়তা দিয়েছেন ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অ্যাল্টম্যান, অ্যামাজন, মেটা ও গুগল। পাশাপাশি নিজেদের প্ল্যাটফর্মের নীতিমালায়ও পরিবর্তন এনেছেন তারা।

একইভাবে ট্রাম্পের অনুকূল্য পাওয়ার চেষ্টা করছেন টিকটকের প্রধান নির্বাহী শু চু। গেল ডিসেম্বরে তিনি মার-আ-লাগোতে গিয়ে তার সাথে দেখা করেন। এমনকি ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়াশিংটনে এসে হাজির হয়েছেন শু চু।

টিকটক নিষিদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের রায় সম্পর্কে জানতে জাইলে সতর্কভাবে ট্রাম্পের তারিফ করেন তিনি। অ্যাপটির ভাগ্যও তার ওপর ছেড়ে দেন। শু চু বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক চালু রাখার একটি উপায় খুঁজে পেতে আমাদের সাথে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। যে কারণে আমি তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’

‘ট্রাম্প আমাদের যে সমর্থন দিয়েছেন, তাতে আমরা সন্তুষ্ট ও কৃতজ্ঞ, তিনি সত্যিকার অর্থে আমাদের প্ল্যাটফর্মটিকে বুঝতে পেরেছেন,’ বলেন টিকটকের প্রধান নির্বাহী।

যখন টিকটক বন্ধ হয়ে যায়, তখন ছোট্ট একটি বার্তা দেয়া হয় যে, ‘দুঃখিত, টিকটক এখন বন্ধ আছে’। পরে ট্রাম্পকে অন্তর্ভুক্ত করে মোটামুটি বড় একটি বার্তা দেয়া হয়।

রোববারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক বন্ধ করতে দেশটির কেন্দ্রীয় আইনে বলা হয়েছিল। তবে ট্রাম্পের শপথের আগে আইনটি কার্যকর করার কোনো ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন। কিন্তু প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা ও নিশ্চয়তা না পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক অচল করে দেয় বাইটড্যান্স।

তাদের এই অবস্থানকে কপট হিসেবে আখ্যায়িত করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন ফিনার। তিনি বলেন, ‘খোলাখুলিভাবে বললে, তাদের এই অনুভূতির মধ্যে কোনো সরলতা নেই। আমি মনে করি, আমরা খুবই পরিষ্কার- টিকটক বন্ধ করার দরকার ছিল না।’

অনেক আগ থেকেই টিকটক বিক্রির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসছে বাইটড্যান্স। কিন্তু জনপ্রিয় এই অ্যাপটির ওপর আগে থেকেই নজর পড়েছে বহু বিনিয়োগকারীর, যাদের মধ্যে ট্রাম্পের সাবেক অর্থমন্ত্রী স্টিফেন মানুচিন ও ধনকুবের ব্যবসায়ী ফ্রাককোর্টও রয়েছেন।

কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক পলিসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক সারাহ ক্রেপস বলেন, ‘বাইটড্যান্স বিনিয়োগ ছেড়ে দেবে বলে মনে হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত এমন কোনো আভাস তাদের কাছ থেকে মিলছে না।’
সূত্র : এএফপি


আরো সংবাদ



premium cement
সুইজারল্যান্ডে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা তথ্য উপদেষ্টার সাথে অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের মতবিনিময় দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে বিপিএলে ব্যর্থ বাংলাদেশের ব্যাটাররা ফিলিস্তিনি সাবেক এমপির বর্ণনায় ইসরাইলি কারাগারের অমানবিক পরিস্থিতি দুই গ্রামের ব্যাপক সংঘর্ষে রণক্ষেত্র কোম্পানিগঞ্জ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিস্কারে আল্টিমেটাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ পিলখানা হত্যাকাণ্ড : ১৭৮ বিডিআর জোয়ানের কারামুক্তিতে বাধা নেই পিএসএলে দল না পেয়ে হতাশ নন তাসকিন তাড়াশে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় উত্তেজনা

সকল