১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

ক্ষমতা নেয়ার আগেই বিশ্ব কূটনীতিতে ঝড় তুলছেন ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প -

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসে ফেরেননি। তবে এরই মধ্যে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের উপস্থিতি জোরালভাবে জানান দিচ্ছেন। আগের মতোই তিনি কূটনৈতিক সৌজন্য উপেক্ষা করে বিতর্কিত মন্তব্য ও পদক্ষেপ নিচ্ছেন, যা মিত্রদের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প আন্তর্জাতিক রাজনীতির অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। তার অপ্রত্যাশিত আচরণ এবং আনপ্রেডিক্টেবল কার্যকলাপ তাকে বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রে রেখেছে। ইতোমধ্যেই তিনি দেখিয়েছেন যে তার বক্তব্য এবং কৌশল মিত্রদের বিভ্রান্ত করতে পারে। তবে তার সমর্থকরা একে ফলাফলমুখী কার্যক্রম হিসেবে দেখছেন।

গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খালের প্রসঙ্গ
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড এবং পানামা খাল দখলের সম্ভাবনা নিয়ে সামরিক শক্তি ব্যবহারের কথা বলেছেন। গ্রিনল্যান্ড, যা ন্যাটো মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বশাসিত অঞ্চল এবং পানামা খাল, যা ২৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র পানামার কাছে হস্তান্তর করেছিল, এই দু’ক্ষেত্রেই তার বিতর্কিত মন্তব্য উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।

এছাড়া ট্রাম্প কানাডার প্রতি বিদ্রূপ করে বলেছেন, তারা যদি যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হতে না চায়, তবে বাড়তি শুল্কের চাপে পড়তে হবে।

‘আমেরিকা ইজ ব্যাক’-এর পরে
২০২০ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, ‘আমেরিকা ফিরে এসেছে।’ বিদায়ী বক্তব্যে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র এখন তার মিত্রদের সাথে আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

ডেমোর্ক্যাটিক নীতিনির্ধারকরা ট্রাম্পের অবস্থানকে ‘বিভাজন সৃষ্টিকারী’ বলে আখ্যা দিলেও স্বীকার করেছেন যে রাশিয়া ও চীনের মতো শক্তিগুলোর হুমকি মোকাবিলায় তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রাসঙ্গিক।

ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রগতি
ট্রাম্পের কূটনৈতিক কার্যক্রম অন্যান্য প্রেসিডেন্টদের তুলনায় ভিন্ন। গাজা যুদ্ধের মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী কাতারের আমির ইতোমধ্যেই ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত এবং বিদায়ী বাইডেন প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য প্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।

তবে কিছু ক্ষেত্রে ট্রাম্প ঐতিহ্যবাহী পথেও হাঁটবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে রিপাবলিকানদের মূলধারার নেতাদের মধ্যে ধরা হয়। তারা নিরাপত্তাভিত্তিক একটি দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন এবং বিশেষত ল্যাটিন আমেরিকায় বামপন্থীদের মোকাবিলায় আরো সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

ইউক্রেন সঙ্কটে সম্ভাবনা
ইউক্রেন ইস্যুতে ট্রাম্পের দল ইতোমধ্যেই কূটনীতির সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেছে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইউক্রেনকে শক্তিশালী করে রাশিয়ার সাথে আলোচনায় সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার একটি পথ তৈরি করা হবে।

ইতালির পররাষ্ট্র কমিটির চেয়ার লিয়া কোয়ারতাপেলের মতে, ইউক্রেন ইস্যুতে রিপাবলিকানদের সাথে আলোচনায় অপ্রত্যাশিত ইতিবাচকতা দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি কঠিন আলোচনা প্রত্যাশা করেছিলাম, কিন্তু রিপাবলিকানদের কাছ থেকে সহযোগিতার ইচ্ছা লক্ষ্য করেছি, যা আমাদের আশাবাদী করেছে।’

জলবায়ু পরিবর্তন এবং ট্রাম্পের অবস্থান
ট্রাম্পের আগের প্রশাসন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে এসেছিল। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি কি এই নীতিতে পরিবর্তন আনবেন, নাকি আরো কঠোর অবস্থান নেবেন- তা নিয়ে জল্পনা চলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বিশ্ব যখন উদ্বিগ্ন, তখন তার প্রশাসনের অগ্রাধিকার কী হবে, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের ভূমিকা
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান পারমাণবিক চুক্তি পুনর্বিবেচনার বিষয়টি ট্রাম্প আবার সামনে আনবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া ইসরাইল-সৌদি আরব সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা কেমন হবে, তা সবার নজর কাড়ার মতো একটি বিষয়।

বাণিজ্য ও অর্থনীতি
ট্রাম্প প্রশাসন চীনের সাথে আবারো বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। মার্কিন অর্থনীতিকে অভ্যন্তরীণভাবে শক্তিশালী করতে এবং মিত্রদের ওপর চাপ বাড়াতে তিনি শুল্কের ব্যবহারে আরো সক্রিয় হবেন বলেও মনে করা হচ্ছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অপ্রত্যাশিত নেতৃত্ব ও বিতর্কসৃষ্টিকারী কৌশলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছেন। তার সমর্থকদের মতে, এই পদ্ধতি প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে কার্যকর হবে। তবে সমালোচকদের আশঙ্কা, তার কর্মকাণ্ড মিত্রদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ককে দুর্বল করে তুলতে পারে। ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের এই অগ্রযাত্রা বিশ্ব রাজনীতির চিত্রকে নতুন রূপ দিতে পারে।
সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement