নেতানিয়াহুকে বাঁচাতে আইসিসির বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিল পাস
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:২২
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসির কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের একটি বিল অনুমোদন করেছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক যুদ্ধ-মন্ত্রী ইয়োভ গ্যাল্যান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অপরাধে জড়িত হওয়ার দায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় তাদের রক্ষার লক্ষ্যে এই বিল পাস করেছে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ।
ওই পরিষদে এই লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে পক্ষে ২৪৩ ও বিপক্ষে ১৪০টি ভোট পড়ে। এই বিলের বক্তব্য তুলে ধরেন রিপাবলিকান প্রতিনিধি চিপ রয় ও ব্রায়ান মাস্ট। এই বিল এখন চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের জন্য মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চ-কক্ষ সিনেটে পাঠানো হবে। সিনেটে রিপাবলিকান দলের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বর্তমানে। তাই মনে করা হচ্ছে, ইসরাইলি নেতাদের ওপর জারি করা আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সবচেয়ে কঠোর ভাষার নিন্দা জানানো হবে মার্কিন সিনেটে।
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ বা সিনেট দেশটির ও এর মিত্রদের মাধ্যমে সুরক্ষিত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা, তাদের আটক করা ও তাদের সম্পর্কে কোনো তদন্ত চালানোর তৎপরতায় জড়িত ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকবে এইসব ব্যক্তির সম্পদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং তাদের ভিসা সুবিধা বাতিল করা।
গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে হেগ-কেন্দ্রীক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি গাজায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধ অপরাধের দায়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার সাবেক যুদ্ধ-মন্ত্রী গ্যাল্যান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ফলে বিশ্বের প্রায় ১২৬টি দেশে এ দুই যুদ্ধ অপরাধীকে গ্রেফতার করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই ১২৬ টি দেশের মধ্যে বিভিন্ন দেশের সরকার জানিয়ে দিয়েছে যে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ও তার সাবেক যুদ্ধ-মন্ত্রী এই দেশগুলো সফর করলে তাদেরকে অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে।
এর আগে এই গ্রেফতারি পরোয়ানার জবাবে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের উদ্যোগ নিলেও সিনেটে এ নিয়ে ভোটাভুটি হয়নি। সে সময় সিনেট ছিল ডেমোক্রেট দলের নিয়ন্ত্রণে। গতকালের তথা বৃহস্পতিবারের এই ভোটাভুটিতে মার্কিন প্রতিনিধিরা এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত ইসরাইলের পক্ষে ভোট দিলেন।
এদিকে, মার্কিন জন-প্রতিনিধি ইলহান ওমর এই বিলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। বিলটির বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার পর তিনি এক্স সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে নারকীয় অপরাধের প্রমাণ তুলে ধরার কাজে নিয়োজিত মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবীসহ অন্যদেরকে বীর হিসেবে সম্বর্ধনা জানানো উচিত, তাদের শাস্তি দেয়া উচিত নয় যদিও যে যুদ্ধ-অপরাধীদের তারা চিহ্নিত করেছেন তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। আরেকজন মার্কিন জনপ্রতিনিধি রাশিদা তালিবও একই সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, এই বিলের মাধ্যমে গণহত্যায় আসক্ত নেতানিয়াহুকে রক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে যাতে সে গাজায় গণহত্যা অব্যাহত রাখতে পারে।
গাজায় গত ২০২৩ সনের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি গণহত্যা অভিযানে প্রায় ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছে আরো এক লাখেরও বেশি গাজাবাসী।
অবশ্য আজ ব্রিটেনের ল্যান্সেট চিকিৎসা সাময়িকী ল্যান্সেট জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধের প্রথম নয় মাসে নিহতের যে সংখ্যা ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশ করেছে বাস্তবে এই সংখ্যা তার চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি।
দ্য ল্যান্সেট মেডিক্যাল জার্নাল জানিয়েছে, গাজার জনসংখ্যার প্রতি ৩৫ জনের একজন গত জুলাই মাসের শেষ নাগাদ পর্যন্ত নিহত হয়েছে যা সেখানকার জনসংখ্যার প্রায় দুই দশমিক নয় শতাংশ। ল্যান্সেট সাময়িকীর সাম্প্রতিক গবেষণা বা তদন্ত অনুযায়ী গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সর্বমোট সংখ্যা প্রায় ৬৪ হাজার ২৬০ জন।
সূত্র : পার্সটুডে
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা