প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় প্রত্যয়ন করলো যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০১
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সোমবার অধিবেশনে বসে প্রত্যয়ন করে যে, নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করেছে। এর মাধ্যমে দু’সপ্তাহ পর ট্রাম্পের অভিষেক এবং হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয়বার চার বছরের মেয়াদের ক্ষেত্র তৈরি হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, দেশের ৫০টি রাজ্যের প্রতিটির ইলেক্টরাল কলেজ নির্বাচনের ফলাফল গণনা পরিচালনা করেন ক্ষমতাসীন ভাইস প্রেসিডেন্ট। এর ফলে, হ্যারিসকে তার নিজের পরাজয়ের ফলাফল প্রত্যয়িত করতে হলো।
নির্বাচনের ফলাফল আইন অনুযায়ী যে তারিখে প্রত্যয়িত করতে হবে, সেই ৬ জানুয়ারি আইনপ্রণেতারা ব্যাপক নিরাপত্তা এবং তুষার ঝড়ের মধ্যে ক্যাপিটল ভবনে সমবেত হন। গোটা প্রক্রিয়া দ্রুত এবং কোনো অঘটন ছাড়াই সম্পন্ন হয়।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার ভূমিকায় হ্যারিস কংগ্রেস অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন, তিনি তার নিজের পরাজয়সহ ফলাফল পড়ে শোনান। কংগ্রেস সভাকক্ষ করতালিতে ফেটে পড়ে, প্রথমে রিপাবলিকানরা ট্রাম্পের ৩১২ ইলেক্টরাল ভোটের জন্য, তারপর ডেমোক্র্যাটরা হ্যারিসের ২২৬ ভোটের জন্য। আধা ঘণ্টার মধ্যে গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
ধারণা করা হয়েছিল যে, সোমবার ফলাফলের প্রত্যয়ন হবে আনুষ্ঠানিকতা মাত্র, কোনো ধরনের বিপর্যয় নয়। চার বছর আগে ট্রাম্প ২০২০ নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে পরাজয় পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন এবং তার সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হামলা করে বাইডনের জয়ের প্রত্যয়ন আটকানোর চেষ্টা করে।
হ্যারিস এক ভিডিও বার্তায় তার ভূমিকাকে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্যে একটি ‘পবিত্র দায়িত্ব’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যেমন দেখেছি, গণতন্ত্র বেশ ভঙ্গুর হতে পারে এবং আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হচ্ছে নিজেদের মূল্যবোধের জন্য লড়াই করা।’
ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হ্যারিস ৫ নভেম্বর নির্বাচনের ফলাফল পরিষ্কার হয়ে যাবার পর পরাজয় স্বীকার করেন। নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ রাজ্যেই ট্রাম্প জয় লাভ করেন, যা নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করে দেয়।
ভাইস প্রেসিডেন্ট তাদের ভূমিকায় সংসদের উচ্চকক্ষ সেনেটের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং হ্যারিস আরো কয়েকটি ভাইস প্রেসিডেন্টের তালিকায় যোগ দেবেন যারা নিজেদের পরাজয়ের আনুষ্ঠানিক প্রত্যয়ন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন।
রিচার্ড নিক্সন সেটা করেন ১৯৬০ সালে, জন এফ কেনেডির কাছে পরাজিত হবার পর। আল গোরও সেটা করেন যখন সুপ্রিম কোর্টের রায় ২০০০ সালের নির্বাচনে জর্জ বুশকে জয়ী ঘোষণা করে।
চার বছর আগের দাঙ্গা
কংগ্রেসে ইলেক্টরাল কলেজের ভোট গণনা দীর্ঘ দিন ধরে নির্বাচন প্রক্রিয়ার একটি আনুষ্ঠানিকতা ছিল মাত্র। কিন্তু চার বছর আগে এই প্রক্রিয়া হট্টগোলে পরিণত হয় যখন হাজার দু’য়েক ট্রাম্প সমর্থক ক্যাপিটল ভবন হামলা করে ১৪০ জন পুলিশ অফিসারকে আহত করে, কংগ্রেস সদস্যদের অফিস কক্ষ তছনছ করে এবং ভবনে ভাঙচুর করে। আইনপ্রণেতারা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন।
ট্রাম্প ২০২১ সালে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে দাবি করেন তিনি যেন ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ রাজ্যগুলোর ভোট বাতিল করে দেন। ট্রাম্প কোনো প্রমাণ ছাড়া দাবি করেন যে, ভোটের নিয়মনীতি এবং গণনায় জালিয়াতির মাধ্যমে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
কিন্তু পেন্স বাতিল করতে অস্বীকার করেন। পরে ট্রাম্প দাবি করেন যে, ‘যা করার প্রয়োজন ছিল তা করার সাহস মাইক পেন্সের ছিল না।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাপিটলে দাঙ্গা দমন করার কয়েক ঘণ্টা পর, পেন্স ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের এবং ট্রাম্পের পরাজয়ের ফলাফল প্রত্যয়ন প্রক্রিয়ায় সভাপতিত্ব করেন।
পেন্স দু’বছর পর বলেন, ‘ফলাফল উল্টে দেয়ার কোনো অধিকার আমার ছিল না এবং ক্যাপিটলে দাঙ্গার জন্য ট্রাম্পকে দোষারোপ করেন।’
তিনি বলেন, ‘তার বেপরোয়া কথাবার্তা ওই দিন আমার পরিবার এবং ক্যাপিটলে অন্য সবাইকে বিপন্ন করেছিল এবং আমি জানি ইতিহাস ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দায়ী করবে।’
সূত্র : ভিওএ