মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকার বিরুদ্ধে চীনের পাল্টা নিষেধাজ্ঞা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:৫৪
চীন আমেরিকার কয়েক ডজন কোম্পানির কাছে পণ্য রফতানি নিষিদ্ধ করেছে। চীনা কোম্পানির বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওই নিষেধাজ্ঞা দিলো।
চীনা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষার জন্য’ রফতানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় আমেরিকার ২৮টি কোম্পানিকে যুক্ত করেছে। জেনারেল ডাইনামিক্স, বোয়িং ডিফেন্স, স্পেস অ্যান্ড সিকিউরিটি, লকহিড মার্টিন এবং রেটন ডিফেন্স মিসাইল ইন্ডাস্ট্রিজ এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে। এছাড়া এই কোম্পানিগুলোর কাছে ডুয়েল পারপাস আইটেম রফতানিও নিষিদ্ধ করেছে চীন।
চীন এমন এক সময় এই প্রতিক্রিয়া দেখালো যখন তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত চাপ মোকাবেলা করার ক্ষমতা অর্জন করেছে। আমেরিকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন চীনসহ আরো কয়েকটি দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর ভারী শুল্ক আরোপ করা হবে।
২০ জানুয়ারি ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করার পর বেইজিং এবং ওয়াশিংটনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যা ঘটতে পারে তা মোকাবেলা করার জন্য চীন নিজেকে প্রস্তুত করছে বলে মনে হচ্ছে।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ভারী শুল্ক আরোপ করে চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধকে কঠোর করেছিলেন এবং এখনো তিনি সেদিকেই অগ্রসর হতে বদ্ধপরিকর।
যদিও ট্রাম্প বাহ্যত আমেরিকার অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প খাতগুলোকে রক্ষা করতে চীনের সাথে ব্যবসার ক্ষেত্রে শুল্ক বৃদ্ধি করা এবং প্রযুক্তি সহযোগিতায় কঠোরতা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। তবুও এটা স্পষ্ট যে চীনের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বৈশ্বিক আধিপত্য হারানোর বিষয়ে উদ্বিগ্ন।
প্রকৃতপক্ষে ওয়াশিংটনের লক্ষ্য হলো বিশ্বের দক্ষিণ-পূর্ব অক্ষের তিন শক্তিকে ধ্বংস কিংবা দুর্বল করা। ওই তিনটি শক্তি হলো ইরান, রাশিয়া এবং চীন। পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ ও অস্থিরতা বৃদ্ধি, ইউক্রেনে যুদ্ধের আগুনে ঘি দেয়া এবং চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধকে তীব্রতর করা ইত্যাদি ব্রিকস জোট কেন্দ্রিক বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলীয় শক্তিগুলোর উত্থানকে মোকাবিলা করার মার্কিনি কৌশল।
বাণিজ্যিক এবং আর্থিকখাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্রিকসের সাফল্যের ব্যাপারে ট্রাম্প সম্প্রতি যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তাতে বোঝা গেছে আমেরিকা ব্রিকসের কার্যক্রমের প্রতি উদাসীনতার ভান করলেও ভেতরে ভেতরে খুবই উদ্বিগ্ন। অতএব, রফতানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং আমেরিকার কোম্পানিগুলোকে ডুয়েল পারপাস আইটেম রফতানি নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে চীন যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক, সামরিক এবং নিরাপত্তা চাপের বিরুদ্ধে দক্ষিণ বিশ্বের শক্তির প্রমাণ।
যেমনভাবে দক্ষিণ বিশ্বের অপর দুই শক্তি ইরান এবং রাশিয়াও হোয়াইট হাউসের অনেক ষড়যন্ত্র বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়া ও ইউক্রেনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও নিরাপত্তা চাপকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে সফল হয়েছে।
অতএব, হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিশন হলো, বেইজিংয়ের ওপর সর্বাত্মক আঘাত হানা, যাতে চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক অগ্রগতির বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি সুরক্ষা প্রাচীর তৈরি করা যায়।
তবে পশ্চিমা শক্তিগুলোর একচেটিয়া প্রযুক্তির সীমানা অতিক্রম করা এবং আকর্ষণীয় বিশ্ব বাজার বৃদ্ধি ইত্যাদি বিবেচনায় এটা কল্পনা করা কঠিন যে আমেরিকা শুল্ক চাপ আরোপ করে চীনকে তার সীমানায় সীমাবদ্ধ করতে পারবে।
সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস, ইকোনমিক টাইমস, পার্সটুডে ও অন্যান্য
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা