১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ভারতীয় বংশোদ্ভূত নবনিযুক্ত এফবিআই প্রধানকে ঘিরে কেন বিতর্ক

ক্যাশ প্যাটেল - ছবি : এপি

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্যাশ প্যাটেল। আগামী জানুয়ারিতে দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর সংস্থাটির নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন তিনি। তবে তার এ নিয়োগকে ঘিরে নানা সমালোচনা দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে ক্যাশ প্যাটেলের যোগ্যতা নিয়ে। এমনকি এফবিআইপ্রধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তিনি কতটুকু নিরপেক্ষ থাকতে পারবেন, তা নিয়েও কথা হচ্ছে।

ট্রাম্পের মতো এফবিআইয়ের সমালোচনা করে এসেছেন ৪৪ বছর বয়সী এই ক্যাশ প্যাটেল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ‘ডিপ স্টেটের’ (রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্র) অস্তিত্ব আছে বলেনও প্রচার করেছেন। ডিপ স্টেট হলো, কোনো দেশের সরকারের ওপর গোপনে নিয়ন্ত্রণ করা সরকারি বা সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্ঘ। ট্রাম্পকে নিয়ে এফবিআই পক্ষপাতদুষ্ট বলেও মনে করেন ক্যাশ। সংস্থাটিকে ঢেলে সাজানোর পক্ষেও তিনি।

এফবিআইপ্রধান পদে ক্যাশ প্যাটেলকে নিয়োগ দিয়ে ট্রাম্প এদিকেও ইঙ্গিত দিলেন যে এফবিআইয়ের বর্তমান প্রধান ক্রিস্টোফার রে-কে পদ থেকে সরানোর যে হুমকি এত দিন তিনি দিয়ে আসছিলেন, তা কার্যকর করতে চলেছেন। অথচ প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সময় রিপাবলিকান দলের সমর্থক ক্রিস্টোফারকে তিনিই নিয়োগ দিয়েছিলেন। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৭ সালে।

কে এই ক্যাশ প্যাটেল
ক্যাশ প্যাটেলের পুরো নাম কাশ্যপ প্রমোদ বিনোদ প্যাটেল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ভারতের গুজরাট রাজ্য থেকে অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন তারা বাবা-মা। তিনি ক্যাশ ইউনিভার্সিটি অব রিচমন্ড থেকে ক্রিমিনাল জাস্টিস অ্যান্ড হিস্টোরি বিষয়ে স্নাতক করেন। এছাড়া পেস ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনেও পড়াশোনা করেছেন তিনি।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালে মার্কিন প্রশাসনে যোগ দিয়েছিলেন ক্যাশ প্যাটেল। তখন তিনি ৪০ বছর বয়সী একজন আইনজীবী, সরকারি কাজে অভিজ্ঞতা ছিল কম। ট্রাম্প প্রশাসনে দ্রুত তার উত্থান হয়েছিল। কিছু গণমাধ্যমের ভাষ্যমতে, ক্যাশের এই উন্নতির পেছনে ছিল ট্রাম্পের প্রতি তার পূর্ণ আনুগত্য। এমন খবরও শোনা গিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএর) উপ-পরিচালক পদে ক্যাশ প্যাটেলকে নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। এর জেরে তখন সংস্থাটির তৎকালীন পরিচালক জিনা হাসপেল পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ সব পদে কাজ করেছেন ক্যাশ প্যাটেল। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সন্ত্রাসবিরোধী বিভাগ দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পরে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের চিফ অব স্টাফ পদে কাজ করেছেন। হোয়াইট হাউসে দায়িত্ব পালনের আগে ক্যাশ প্যাটেল মার্কিন কংগ্রেসের হাউস ইন্টেলিজেনস কমিটিতে ছিলেন। সেখানে তিনি ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

 ক্যাশ প্যাটেল কেন ট্রাম্পের পছন্দ
ট্রাম্প প্রায়ই এফবিআই ঘিরে নিজের অবিশ্বাসের কথা সামনে এনেছেন। তার অভিযোগ ছিল সংস্থাটি রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোয় তার বাড়িতে এফবিআইয়ের তল্লাশির পর এ অভিযোগ তিনি আরো জোরদার করেছিলেন। ওই তল্লাশিতে মার্কিন সরকারের গোপন নথি পাওয়া গিয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, নথিগুলো অবৈধভাবে নিজের কাছে রেখেছিলেন ট্রাম্প।

সরকারি নজরদারি ও ‘ডিপ স্টেট’ নিয়ে ট্রাম্প ও ক্যাশ প্যাটেল দু’জনই সংশয় প্রকাশ করে আসছেন। ‘গভর্নমেন্ট গ্যাংস্টারস’ নামে ক্যাশ প্যাটেলের লেখা একটি বই রয়েছে। সেখানে তিনি কথিত ডিপ স্টেটের বিরুদ্ধে লিখেছেন। এফবিআই ও মার্কিন বিচার বিভাগ ঘিরে ট্রাম্প যে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চান, তার সমর্থকেরা নির্বাচনে ক্যাশ প্যাটেলের পক্ষে ছিলেন।

ট্রাম্পের ভাষ্যমতে, ক্যাশ প্যাটেল এফবিআইয়ে ‘বিশ্বস্ততা, সাহসিকতা ও সততা’ ফিরিয়ে আনবেন। সংস্থাটির দায়িত্ব পেলে আমেরিকায় ‘মহামারির মতো’ বেড়ে চলা অপরাধে লাগাম টানবেন তিনি। অভিবাসীদের অপরাধী চক্রগুলোকে ধ্বংস করে দেবেন। একইসাথে মার্কিন সীমান্তে মানব ও মাদক পাচার বন্ধ করবেন ক্যাশ।

নিউইয়র্কে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার শুনানি চলাকালে অল্প যে কয়েকজন তার সাথে আদালতকক্ষে ছিলেন, তাদের একজন ক্যাশ প্যাটেল। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ট্রাম্প ‘অসাংবিধানিক সার্কাসের’ শিকার হয়েছেন। এছাড়া ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল বদলানোর চেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় ট্রাম্পের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তিনি।

এফবিআইয়ের পরবর্তী প্রধান হিসেবে গত শনিবার ক্যাশ প্যাটেলের নাম ঘোষণা করেন ট্রাম্প। এরপর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটিক দলের সদস্য গ্যারি কনোলি ক্যাশকে একজন ‘গোঁড়া ব্যক্তি’ আখ্যায়িত করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লেখেন, ট্রাম্পের বেছে নেয়া ‘অযোগ্য, বিপজ্জনক ও পুরোপুরি উদ্ভট’ একঝাঁক মানুষের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে খারাপ।

এফবিআই ঘিরে ক্যাশ প্যাটেলের অবস্থান কী
ক্যাশ প্যাটেলের দেয়া বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও বিবৃতিতে তার একটি সংকল্প ফুটে উঠেছে। সেটি হলো তিনি এফবিআইকে পুরোপুরি বদলে দেবেন এবং সংস্থাটির কাজকর্মে বড় পরিবর্তন আনবেন। ক্যাশের ভাষ্যমতে, এফবিআইয়ের কর্তৃত্ব সীমিত করতে চান তিনি। একইসাথে যেসব সরকারি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের কাছে তথ্য ফাঁস করেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

চলতি বছরের শুরুতে একটি সাক্ষাৎকারে ক্যাশ প্যাটেল বলেছিলেন, এফবিআইয়ের কার্যক্রম থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজকে বাদ দেবেন তিনি। এছাড়া ওয়াশিংটন ডিসির পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউয়ে এফবিআইয়ের প্রধান কার্যালয় বন্ধ করে দেবেন। সেখানে পরদিনই ‘ডিপ স্টেট’–বিষয়ক একটি জাদুঘর খুলবেন তিনি। আলাদা একটি সাক্ষাৎকারে ক্যাশ প্যাটেল বলেছিলেন, শুধু সরকারই নয়, গণমাধ্যম থেকেও ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করবেন।

তবে যতই বিতর্ক আর সমালোচনা থাকুক না কেন, ক্যাশ প্যাটেলকে নিয়ে ট্রাম্পের উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। সম্প্রতি নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি বলেছেন, ক্যাশ একজন মেধাবী আইনজীবী, তদন্তকারী এবং ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগানের পক্ষের যোদ্ধা।

সূত্র : আল জাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement
প্যাভিলিয়ন বাতিলসহ ৪ দফা দাবিতে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালককে স্মারকলিপি জনআকাঙ্ক্ষা ও সরকারের পথচলা অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের জন্য বাংলাদেশ নারী দল ঘোষণা গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিচয় মিলেছে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে ভারত, প্রত্যাশা আসিফ মাহমুদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ব্র্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করব : ভিসি ৪৭তম বিসিএসের আবেদনের নতুন সময় জানালো পিএসসি জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসা সহায়তার আশ্বাস সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার মানবসেবার জন্যই হাসপাতাল করেছি : জামায়াত আমির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের আয়কর নথি জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত চট্টগ্রামে সাবেক এমপি মোতালেবসহ ২৪৮ জনের নামে মামলা

সকল