২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ট্রাম্প ক্ষমতা নেয়ার আগেই বিদেশী শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরতে বলছে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

বিদেশী শিক্ষার্থীরা ভয় পাচ্ছেন যে ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন - ছবি - বিবিসি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের আগেই বিদেশী শিক্ষার্থী ও কর্মীদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

সম্প্রতি ইমেল বার্তার মাধ্যমে তাদের বিষয়টি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প জয়লাভের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের মধ্যে এমনিতেই দিন দিন উদ্বেগ বাড়ছে। এর মধ্যে আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হঠাৎ এমন সতর্কবার্তায় অনেকে রীতিমত চিন্তায় পড়ে গেছেন।

‘বিদেশী শিক্ষার্থীরা এখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে,’ বিবিসিকে বলছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো ডেনভারের অধ্যাপক ক্লোই ইস্ট।

রিপাবলিকান পার্টির নেতা ট্রাম্প এবার ক্ষমতায় বসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অভিযান চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ কাজে সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনে মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এই অভিযানের ফলে যারা বেকায়দায় পড়তে পারেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশী শিক্ষার্থী রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।

অভিবাসী ও বিদেশী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা ‘হায়ার এড ইমিগ্রেশন পোর্টালে’র তথ্যে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনথিভুক্ত বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে চার লাখেরও বেশি।

যদিও ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়ে বলছেন যে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের রাখার জন্য তারা বড় ধরনের আবাসনের ব্যবস্থা করবেন।

ট্রাম্পের হবু প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়েছেন যে তারা নির্বাসনের তালিকায় অনথিভুক্ত অভিবাসীদের জন্য বিশাল হোল্ডিং সুবিধা তৈরি করবে।

অভিজ্ঞ অভিবাসন কর্মকর্তা ও ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন ‘সীমান্ত জার’ টম হোম্যান বলেছেন যে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ভয়ঙ্কর অপরাধী ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি- এমন মানুষজনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়নের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিবেন।

সে হিসেবে, শিক্ষার্থীদের খুব একটা ভয় পাওয়ার কথা না বলা হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, তাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েই গেছে।

‘অভিবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তার ফলে বিদেশী শিক্ষার্থীরা এখন ভীষণ চাপে রয়েছেন,’ বিবিসিকে বলেন অধ্যাপক ইস্ট।

তিনি আরো বলেন, ‘ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না এবং পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি পাবেন কি না, সেটি নিয়েও এখন অনেক শিক্ষার্থী চিন্তায় রয়েছেন।’

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা নিবেন। ফলে তার আগেই নিজেদের বিদেশী শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের শীতকালীন ছুটি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার পরামর্শ দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস।

‘২০১৬ সালে প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের জারি করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার অভিজ্ঞতার থেকেই অফিস অব গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স সতর্কতা হিসেবে এই পরামর্শটি দিচ্ছে,’ বলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ২০১৭ সালে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ থেকে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন, যেখানে বেশ কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশ ছাড়াও উত্তর কোরিয়া ও ভেনেজুয়েলার নাগরিকদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

প্রথম দফায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু কঠোর নিয়ম চালু করার প্রস্তাব করেছিলেন রিপাবলিকান এই নেতা।

ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটসের মতো ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং ওয়েসলিয়ান ইউনিভার্সিটিও তাদের বিদেশী শিক্ষার্থী ও কর্মীদের ২০ জানুয়ারির আগে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে।

অন্যদিকে, ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে একটি ওয়েবিনার পর্যন্ত আয়োজন করতে দেখা গেছে, যেখানে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিদেশী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

কঠোর অভিবাসন নীতির মাধ্যমে ট্রাম্প মূলত সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে চালু হওয়া একটি কর্মসূচির ইতি টানতে চাচ্ছেন, যে কর্মসূচিটি শিশু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে এতদিন সুরক্ষা দিয়ে আসছিল।

বিদেশী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা এখন তাদের পড়াশোনা ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন, তাদেরই একজন হলেন ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের আর্লহাম কলেজে অধ্যয়নরত জাপানি নাগরিক অই মায়েদা।

‘২০২৬ সালের মে মাসে আমার স্নাতক পাস করার কথা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যে আমাদের জন্য মার্কিন প্রশাসন একটু বেশিই বিপজ্জনক হতে চলেছে। পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে সামনে ভালো কিছু হওয়ার বিষয়ে আমি খুব একটা আশাবাদী না,’ বলেন অই মায়েদা।

তিনি আরো বলেন, ‘(ট্রাম্প) বলেছেন যে তিনি শুধুমাত্র অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চান। কিন্তু বেশ কয়েকবার তাকে এর বাইরেও ব্যবস্থা নেয়ার প্রচেষ্টা চালাতে দেখা গেছে। কাজেই আমি মনে করি, তার এই সিদ্ধান্তের ফলে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভিসায় প্রভাব পড়তে পারে, যার ফলে তাদের নিজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়াও বেশ সহজ হয়ে যাবে।’

ট্রাম্পের ভিসা নীতি
অভিবাসীদের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে নীতি নিয়ে এগোবেন বলে জানিয়েছেন, তাতে অন্য দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

নির্বাচনে দাঁড়ানোর শুরু থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ তুলেছেন, অবৈধ অভিবাসীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের চাকরিতে ‘ভাগ বসাচ্ছে’।

বস্তুত ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে, বিশেষত প্রযুক্তি খাতে কাজ করেন এবং তারা ‘এইচ-১বি’ ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান।

ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেও ‘এইচ-১বি’ ভিসা সংক্রান্ত নিয়মের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন এবং তখন এর বেশ প্রভাবও বিভিন্ন খাতে পড়তে দেখা গিয়েছিল।

এখন দ্বিতীয় মেয়াদেও একই নীতি অব্যাহত রাখতে চান ট্রাম্প, যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী নাগরিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাবে।

বর্তমান বাইডেন প্রশাসনের নীতি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এবং অপরাধ করেনি- এমন নথিপত্রহীন অভিবাসীদের সুরক্ষায় সহায়তা করছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের সীমান্তের দায়িত্ব পাওয়া টম হোম্যান ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি বাইডেন প্রশাসনের এই নীতি উল্টে দিবেন।

তিনি আরো বলেছেন, অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতার ও বিতাড়ন অভিযান চালানোর সময় একটি নিশানাভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করবেন।

তবে শহর-উপশহরজুড়ে গণহারে অভিযান চালানো হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
কুমিল্লা সীমান্তে মাদকসহ ভারতীয় নাগরিক আটক এশিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে রাশিয়ার পাল্টা হুমকি ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তানে নিহত আরো ৬, সেনা মোতায়েন রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ বিয়ের প্রলোভনে আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনই চীন-মেক্সিকো-কানাডার ওপর শুল্ক আরোপ করবেন আ’লীগ ইসলামী আদর্শকে জঙ্গিবাদ বলে এখন জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে : আলাউদ্দিন সিকদার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কঠোর হয়ে দমন করতে চাই না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শরণখোলা প্রেসক্লাবের নির্বাচনে আলী সভাপতি-আনোয়ার সম্পাদক রিমান্ড শেষে কামরুল-জ্যাকবকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ

সকল