২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১, ২০ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

কমলা হ্যারিস কেন ট্রাম্পকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বললেন

কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প - সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও আসন্ন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে মন্তব্য করেছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস।

বুধবার বিকেলে ওয়াশিংটন ডিসিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ভাইস-প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীর প্রতি এই ‘সংক্ষিপ্ত কিন্তু আক্রমণাত্মক’ মন্তব্য করেন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক চিফ অব স্টাফ জন কেলিকে উদ্ধৃত করে ট্রাম্পকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন ও অস্থির’ বলে অভিহিত করেছেন কমলা হ্যারিস।

জন কেলি নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে ‘ফ্যাসিস্ট’-এর সাথে তুলনা করেছেন।

কমলা হ্যারিস জন কেলিকে উদ্ধৃত করে আরো বলেছেন, সাবেক এই প্রেসিডেন্টের সাথে ‘ফ্যাসিস্টের সাধারণ সংজ্ঞার মিল আছে।’

কমলা হ্যারিস অভিযোগ করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের হিটলার-প্রীতি আছে। তিনি ‘একচেটিয়া ক্ষমতা’ চেয়েছিলেন।

পরে তাকে আবারো জিজ্ঞেস করা হয় যে ট্রাম্প ফ্যাসিবাদী, এটা তিনি বিশ্বাস করেন কিনা। জবাবে তিনি হ্যাঁ সূচক উত্তর দেন।

এদিকে, কমলা হ্যারিসের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘তিনি বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথা বলেই যাচ্ছেন। আমাকে অ্যাডলফ হিটলার এবং তার মনে আরো যা যা কিছু আছে, বলে ডাকতে যাচ্ছেন।’

তিনি কমলাকে ‘কমরেড কমলা হ্যারিস’ হিসেবে সম্বোধন করেছেন। তবে তিনি কমলা হ্যারিসকে ‘গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ’ বলেও বর্ণনা করেন।

তবে ট্রাম্পের প্রচারণা দল ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ এনেছে। প্রচারণা দলের মুখপাত্র স্টিভেন চেয়াং বলেছেন, কমলা হ্যারিস ক্রমশঃ মরিয়া হয়ে উঠছেন। কারণ তিনি নড়বড়ে হয়ে পড়েছেন এবং তার প্রচারণা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এই অবস্থায় এক পক্ষ আরেক পক্ষের নামে বিষেদগার করবে, এটা একরকম স্বাভাবিক প্রবণতা।

এ ধরনের বাকযুদ্ধের মূল লক্ষ্য থাকে, সমর্থকদের ভোট দেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করা ও প্রতিপক্ষের প্রচারাভিযানকে ব্যাহত করা।

ডেমোক্রেটিক গ্রুপ থার্ড ওয়ে’র পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিস্ট ম্যাট বেনেটের মতে, কমলা হ্যারিস কেন জন কেলির বক্তব্যকে ধরে মন্তব্য করেছেন, তা স্পষ্ট।

কমলাকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, ‘তিনি এখন যা করছেন, তা কৌশলগত। তার এটা নিশ্চিত করা দরকার ছিল যে জন কেলি যা বলেছেন, ভোটাররা যেন তা জানতে পারেন এবং সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের এই সর্বশেষ মন্তব্যটিকে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা প্রচারণা কৌশলও বলা যেতে পারে, যেন দ্বিধা-দ্বন্দে থাকা রিপাবলিকানের সমর্থকরা ডেমোক্রেটিক প্রার্থীকে ভোট দেয়।

নির্বাচনকে নিয়ে করা বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে।

দেশটির বড় বড় শহরগুলোর আশপাশে ফিলাডেলফিয়া, ডেট্রয়েট, ফিনিক্সের মতো ছোট শহর আছে। সেসব শহরতলীতে শিক্ষিত কর্মজীবীদের বসবাস। তারা বরাবরই রিপাবলিকানের পক্ষে ভোট দিয়েছে।

কিন্তু এবার জরিপগুলো থেকে সেসব স্থানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার ঘাটতি টের পাওয়া যায়।

বেনেট বলেন, অসন্তুষ্ট রিপাবলিকানদেরকে, বিশেষ করে যারা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেবেন কি দেবেন না- তা নিয়ে সংশয়ে আছে, কমলা তাদের দলে টানতে চাইছেন।

নেব্রাস্কার ডেভিন ডেভেলাসকো বরাবরই ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পদে অযোগ্য।

যদিও তিনি মনে করেন, কিছু রিপাবলিকান আছে, যারা তার মতো কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেবেন।

তবে তিনি বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট সম্বন্ধে করা দাবিগুলো একঘেয়ে।

জন কেলির মন্তব্যকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এই প্রতিবেদন যখন প্রকাশ হলো, আমি এতে হতবাক হইনি। এতে খুব বেশি পরিবর্তন নেই।’

রিপাবলিকান স্ট্র্যাটেজিস্ট ডেনিস গ্রেস গিটশাম বলেন, ভোটাররা ২০১৬ সাল থেকে ট্রাম্প সম্পর্কে একই ধরনের বক্তব্য শুনে আসছেন।

তাই মোড় ঘুরাতে হলে নতুন কোরো বিতর্ক লাগবে।

তিনি বলেন, ‘আপনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিত্ব পছন্দ করেন না বলে যদি তার বিরুদ্ধে ভোট দেন, তাহলে আপনি ইতোমধ্যেই একজন নির্ধারিত ভোটার।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু আপনি যদি এমন কেউ হন যিনি তার নীতিগুলো দেখছেন এবং তা আপনার কাছে ভাইভ বা ব্যক্তিত্বের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, তবে আপনি সেই ব্যক্তির সাথে হাঁটতে যাচ্ছেন যিনি হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন সবচেয়ে ভালো করেছেন।’
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement