রাজপরিবারের প্রতি ভালবাসা চিরস্থায়ী করতে সচেষ্ট ছিলেন রানি এলিজাবেথ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:১০, আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:১৫
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের দীর্ঘ রাজত্বকাল জুড়ে ছিল তার কঠোর কর্তব্যপরায়ণতা এবং ব্রিটিশ সিংহাসন ও ব্রিটিশ জনগণের উদ্দেশ্যে তার জীবনকে নিবেদন করার ব্যাপারে নিষ্ঠা ও অঙ্গীকার।
দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে যখন ব্রিটেনের প্রভাব ক্রমশ কমেছে, সমাজে আমূল পরিবর্তন এসেছে, রাজতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তখনো অনেকের কাছে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ছিলেন এক ধ্রুবতারা।
উত্তাল নানা সময়ের মধ্যেও ব্রিটেনের রাজতন্ত্রকে তিনি যেভাবে টিকিয়ে রেখেছেন তা বিশেষভাবে স্মরণীয়। তা আরো স্মরণীয় এ কারণে যে তার জন্মের সময়ও কেউ ভাবেননি তার ভাগ্যে রয়েছে ব্রিটেনের সিংহাসনে আরোহণ।
এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি উইন্ডসর জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৬ সালের ২১এপ্রিল। তার বাবা অ্যালবার্ট, ডিউক অফ ইয়র্ক ও মা সাবেক লেডি এলিজাবেথ বোওজ -লিওন-এর তিনি ছিলেন প্রথম সন্তান। অ্যালবার্ট ছিলেন পঞ্চম জর্জের দ্বিতীয় সন্তান।
এলিজাবেথ ও তার বোন মার্গারেট রোজ দু’জনেই লেখাপড়া শিখেছেন বাড়িতে। মার্গারেটের জন্ম হয় ১৯৩০ সালে। পরিবারের ভালবাসার আবহে বেড়ে উঠেছিলেন দু’বোন। বাবা অ্যালবার্ট ও দাদা পঞ্চম জর্জ দু’জনেরই খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন এলিজাবেথ।
রানির যখন ছয় বছর বয়স তখন তার ঘোড়ায় চড়া বিষয়ক প্রশিক্ষককে তিনি বলেছিলেন, ‘তিনি গ্রামের গৃহিণী হতে চান যার অনেক ঘোড়া ও কুকুর থাকবে।’
বলা হয়, খুবই ছোটবেলা থেকেই তিনি অসাধারণ দায়িত্ববোধের পরিচয় দেন । ব্রিটেনের ভাবী প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন, ‘তার চরিত্রে যে কর্তৃত্ববোধ ছিল, তা একজন শিশুর পক্ষে ছিল খুবই আশ্চর্যজনক।’
প্রাতিষ্ঠানিক স্কুলে শিক্ষা না পেলেও ভাষার প্রতি এলিজাবেথের ভাল দখল ছিল, তিনি সাংবিধানিক ইতিহাস পড়েছিলেন বিস্তারিতভাবে।
সমবয়সী মেয়েদের সাথে যাতে তিনি সামাজিকভাবে মেলামেশা করতে পারেন এজন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল গার্ল গাইডের বিশেষ একটি সংস্থা।
উত্তেজনার বছরগুলো :
রাজা পঞ্চম জর্জ ১৯৩৬ সালে মারা যাওয়ার পর তার সর্বজ্যেষ্ঠ পুত্র ডেভিড, অষ্টম এডওয়ার্ড উপাধি পান।
তবে দু’বার বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া আমেরিকান এক ধনী নারী ওয়ালিস সিম্পসনের সাথে তার বিয়ে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় সে বছরের শেষ দিকেই তাকে সিংহাসন ত্যাগ করতে হয় ।
এলিজাবেথের বাবা ডিউক অফ ইয়র্ক অনিচ্ছার সাথে সিংহাসনে বসেন রাজা ষষ্ঠ জর্জ হিসেবে এবং তার অভিষেক অনুষ্ঠান কিশোরী এলিজাবেথকে দারুণভাবে মুগ্ধ করে। পরে প্রিন্সেস এলিজাবেথ লিখেছিলেন ওই অনুষ্ঠান ছিল অসাধারণ সুন্দর।
ইউরোপে তখন উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। সেই পটভূমিতে নতুন রাজা ষষ্ঠ জর্জ, তার স্ত্রী ও দু’কিশোরীকে নিয়ে রাজতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে উদ্যোগী হন।
ওই সময় ১৯৩৯ সালে, ১৩ বছরের কিশোরী প্রিন্সেস এলিজাবেথ তার বাবা ও মা, রাজা ও রানির সাথে গিয়েছিলেন ডার্টমাউথে রয়াল নেভাল কলেজে।
সেখানে এলিজাবেথ ও তার বোন মার্গারেটের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে গ্রিসের যুবরাজ প্রিন্স ফিলিপের, যিনি ছিলেন তাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়।
প্রণয় পর্ব ও বাধা-বিপত্তি :
সেখানেই তাদের প্রথম সাক্ষাৎ ছিল তা নয়, তবে তখন থেকেই এলিজাবেথ, ফিলিপ সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
এলিজাবেথের বয়স যখন ১৮, তখন ১৯৪৪ সালে ফিলিপের প্রতি তার প্রণয় গভীর হয়ে ওঠে। তিনি ঘরে ফিলিপের ছবি রাখতেন, দু’জন দু’জনকে চিঠি লিখতেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে তরুণী প্রিন্সেস এলিজাবেথ আধাসামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে লরি চালানো ও লরির সার্ভিস করার শিক্ষা নেন।
যুদ্ধ শেষে প্রিন্স ফিলিপকে তিনি বিয়ে করতে চাইলে তাকে বেশ বাধার মুখে পড়তে হয়। এলিজাবেথ ছিলেন রাজার অনেক আদরের কন্যা। ফিলিপের বিদেশী বংশ পরিচয়ের কারণে রাজা তার হাতে মেয়েকে তুলে দিতে রাজি হননি।
পিতার মৃত্যু :
কিন্তু তাদের ইচ্ছারই জয় হয় শেষ পর্যন্ত। ১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর এলিজাবেথ ও ফিলিপ ওয়েস্টমিনস্টার গির্জায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ফিলিপের উপাধি হয় ডিউক অফ এডিনবারা। তিনি নৌবাহিনীর কর্মকর্তা পদেই বহাল থাকেন।
বিয়ের পর ফিলিপ নৌবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে মাল্টায় যান এবং বিয়ের প্রথম কয়েক বছর তারা স্বাভাবিক বিবাহিত জীবন কাটান। এ সময়ই তাদের প্রথম পুত্র চার্লসের জন্ম হয় ১৯৪৮ সালে এবং ১৯৫০ সালে জন্ম হয় কন্যা অ্যানের।
১৯৫২ সালে যখন এলিজাবেথের বয়স ২৫, তখন রাজা ষষ্ঠ জর্জ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যা নেন। একদিকে ছিল যুদ্ধের বছরগুলোর অতিরিক্ত চাপ, সেইসাথে রাজা চিরকাল খুব বেশি ধূমপান করতেন।
এলিজাবেথ তার স্বামীকে নিয়ে ওই বছর বিদেশ সফরে যান বাবার হয়ে দায়িত্ব পালন করতে। এলিজাবেথের বয়স তখন ২৫। চিকিৎসকের পরামর্শ উপেক্ষা করে রাজা তাকে বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে গিয়েছিলেন। সেটাই ছিল পিতা ও কন্যার শেষ সাক্ষাত।
এলিজাবেথ কেনিয়ায় বসে পিতার মৃত্যু সংবাদ পান। সাথে সাথে ফিরে আসেন তিনি ব্রিটেনের রানি হিসাবে। সেই মুহূর্তের কথা স্মরণ করে তিনি বলেছিলেন, ‘এক অর্থে আমার কোনো শিক্ষানবিশী হয়নি। আমার বাবা মারা যান খুব অল্প বয়সে। কাজেই অনেকটা হঠাৎ করেই দায়িত্ব নিতে এবং সাধ্যমত দায়িত্ব পালনে উদ্যোগী হতে হয়েছিল আমাকে।’
অভিষেক
১৯৫৩ সালের জুন মাসে আনুষ্ঠানিক অভিষেক অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসন আরোহণ ও শপথ গ্রহণ লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখেন টেলিভিশনের পর্দায়। যদিও ওই সময় প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল এই অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচারের বিরোধিতা করেছিলেন।
যুদ্ধের পর ব্রিটেন তখন কঠিন অর্থনৈতিক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ভাষ্যকাররা তার অভিষেককে ব্যাখ্যা করেছিলেন 'নতুন এলিজাবেথান যুগ' হিসাবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলশ্রুতিতে ব্রিটিশ উপনিবেশ তখন গুটিয়ে এসেছে। নতুন রানির দায়িত্ব নিয়ে তিনি যখন ১৯৫৩ সালে কমনওয়েলথ দেশগুলোতে দীর্ঘ সফরে বেরলেন, তখন ভারতীয় উপমহাদেশসহ অনেক দেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়েছে।
রানি এলিজাবেথ ছিলেন প্রথম ব্রিটিশ রাজশাসক যিনি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফর করেন। অনুমান করা হয় তাকে সামনাসামনি দেখতে অস্ট্রেলিয়ার এক তৃতীয়াংশ মানুষ রাস্তায় ভেঙে পড়েছিল।
রাজতন্ত্র থেকে রাজপরিবার
ক্রমশ রাজতন্ত্রের প্রতি সাধারণ মানুষের অবিচ্ছিন্ন আনুগত্যে বদল আসতে শুরু করে। সমাজের মধ্যে নানা ধ্যানধারনাও দ্রুত বদলাতে থাকে। রানিও যুগের পরিবর্তনের সাথে তাল মেলান। ক্রমশ 'রাজতন্ত্র'-এর জায়গা নেয় 'রাজ-পরিবার'। রানির রাজত্বকালের মূল স্তম্ভ হয়ে ওঠে সাংবিধানিক সততা রক্ষা ।
হ্যারল্ড ম্যাকমিলান ১৯৬৩ সালে পদত্যাগ করার পর একটি সাংবিধানিক জটিলতা তৈরি হয় এবং একটি রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে চলে আসেন রানি এলিজাবেথ। সেই সময় রানি ও রাজতন্ত্রকে সরকারের দৈনন্দিন কার্যকলাপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সরকারের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড থেকে দূরে চলে যান রানি। রানির দায়িত্ব সীমিত থাকে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন, দেশের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত থাকা আর সরকারকে পরামর্শ দেয়ার মধ্যে।
১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে, বাকিংহাম প্রাসাদ সিদ্ধান্ত নেয় যে রাজপরিবারকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। রানি এবং তার পরিবারও যে আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের মত নানা কাজ করেন তা দেখাতে বিবিসিকে 'রয়্যাল ফ্যামিলি' নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরির অনুমতি দেয়া হয়।
রানির দৈনন্দিন ঘরসংসারের নানা ছবি ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। অনেকে বলেন, ওই তথ্যচিত্র রাজপরিবারের প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থা ও ভালবাসা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে। তবে সমালোচকরা কেউ কেউ বলেন, রাজপরিবারকে নিয়ে মানুষের মনে যে দীর্ঘদিন একটা রহস্য ও রোমাঞ্চ ছিল এই ছবি তা ধ্বংস করে দেয়।
কেলেঙ্কারি ও বিপর্যয় :
রানি এলিজাবেথ তার দায়িত্ব পালনে নানা দেশে ভ্রমণ অব্যাহত রাখেন। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের পর তিনি আমেরিকা সফরে যান। তিনিই ছিলেন প্রথম ব্রিটিশ রানি, যিনি অ্যামেরিকান কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেন।
এর এক বছরের মধ্যে তার পরিবারে নানা ধরনের কেলেঙ্কারি ও দুর্যোগের ঘটনা শুরু হয়। রানির দ্বিতীয় ছেলে ডিউক অফ ইয়র্ক ও স্ত্রী সারা আলাদা হয়ে যান।
মেয়ে প্রিন্সেস অ্যান ও স্বামী মার্ক ফিলিপসের বিয়ে ভেঙে যায়। প্রিন্স ও প্রিন্সেস অফ ওয়েলস, অর্থাৎ চালর্স ও ডায়ানা বিয়েতে যে গভীরভাবে অসুখী এ খবর জানাজানি হয় । তারাও আলাদা হয়ে যান।
রানির প্রিয় বাসভবন উইন্ডসর কাসেলে ওই বছরই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়। ওই ভবন মেরামতের খরচ সাধারণ মানুষ জোগাবে নাকি তা রানির তহবিল থেকে ব্যয় করা উচিত তা নিয়ে চলে তুমুল বিতর্ক।
রানি ১৯৯২ সালকে ব্যাখ্যা করেন ‘অ্যানাস হরিবিলিস’ অর্থাৎ ‘দুর্যোগের বছর’ হিসেবে।
ডায়ানার মৃত্যু :
একদিকে ইউরোপের সাথে নতুন জোট গঠনের মধ্যে দিয়ে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সাথে ব্রিটেনের যোগাযোগ কিছুটা শিথিল হয়ে আসা, অন্যদিকে ব্রিটেনে রাজতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে জনমনে অব্যাহত বিতর্ক। এর মধ্যেও যখন রানি রাজপরিবারের উজ্জ্বল স্তম্ভ হিসাবে তার দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট, তখন প্রিন্সেস ডায়ানার আকস্মিক মৃত্যু ব্রিটেনের রাজপরিবারের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হয়ে আসে।
১৯৯৭ সালের আগস্টে প্যারিসে গাড়ি দুর্ঘটনায় ডায়ানা মারা যাবার পর রানির বিরুদ্ধে ওঠে সমালোচনার ঝড়। যখন প্রাসাদের বাইরে বিশাল মানুষের ঢল- ফুলের শ্রদ্ধার্ঘ্যে ভরে উঠেছে প্রাসাদের ফটকের বাইরের রাস্তাঘাট, তখন সেই শোকের মুহূর্তের সঙ্গে রানির আপাতদৃষ্টিতে একাত্ম হতে না পারায় মানুষ সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে।
মানুষের উত্তাল সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত রানিকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে হয়। যে ভাষণে তিনি পুত্রবধূ ডায়ানার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং সময়ের সাথে রাজ-পরিবারকে বদলানোর অঙ্গীকার দেন।
উৎসবের বছরগুলো :
রাজপরিবারের প্রতি ব্রিটেনের মানুষের আগ্রহ, উদ্দীপনা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ২০০২ সালে মহাসমারোহে উদযাপিত হয় রানির সিংহাসন আরোহণের সুবর্ণ জয়ন্তী। এরপর রানির ৮০ বছরের জন্মদিনে উইন্ডসরের রাস্তায় সাধারণ মানুষের সাথে তার বিশেষ সাক্ষাত-সফর, রানি ও প্রিন্স ফিলিপের বিয়ের ৬০তম বার্ষিকী উৎসব এবং ২০১১ সালে রানির নাতি উইলিয়াম ও ক্যাথরিনের বিয়ে ও ২০১২ সালে রানির সিংহাসন আরোহণের হীরক জয়ন্তী।
সবশেষ ২০২২ সালের জুন মাসে মহা-সমারোহে উদযাপিত হয়েছে রানির সিংহাসন আরোহণের ৭০তম বার্ষিকী বা প্লাটিনাম জয়ন্তী।
এসব উদযাপন উপলক্ষে জনতার উচ্ছ্বাস ও অংশগ্রহণ রাজপরিবারকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল যে ব্রিটেনের বহু মানুষ এখনও রাজপরিবার নিয়ে আগ্রহী। রাজপরিবারের প্রতি জনগোষ্ঠির অন্তত এক অংশের আনুগত্য লোপ পায়নি।
দায়িত্বে অটল :
২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ব্রিটিশ রাজসিংহাসনে আসীন থাকার গৌরব অর্জন করেন। তার বাবার প্র-পিতামহী রানি ভিক্টোরিয়ার রাজত্বকালের মেয়াদ ছিল এর চেয়ে কম।
তবে এই গৌরব নিয়ে রানি কখনও বাড়াবাড়ি করেননি। তার নিজস্ব বিনয়ী স্টাইলে তিনি বলেছিলেন, এমন কোনো সম্মান অর্জনের লক্ষ্য আমার কখনই ছিল না। এর এক বছর পর ২০১৬ সালে রানি তার ৯০ বছরের জন্মদিন পালন করেন।
নব্বই বছর পার করেও তিনি তার রাজ দায়িত্ব চালিয়ে গেছেন। ২০১৭ সালে তার স্বামী ডিউক অফ এডিনবারা, প্রিন্স ফিলিপ অবসর নেয়ার পরেই তিনি একাই তার দায়িত্ব পালন করেছেন।
রানির দীর্ঘদিনের জীবনসঙ্গী প্রিন্স ফিলিপ ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে মারা যান।
তার কর্মজীবনে বিচলিত হবার মত নানা মুহূর্ত এসেছে, কিন্তু রানি সবসময়ই তার স্থৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন পরিস্থিতি তিনি দৃঢ় হাতে নিয়ন্ত্রণ করছেন।
রানির রাজত্বকালের শুরুর সময় ব্রিটিশ রাজতন্ত্র যে শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল, যে রাজতন্ত্রের প্রতি মানুষের তখন প্রবল আনুগত্য ছিল, তার রাজত্বকালের শেষ সময়ে সেই উচ্ছ্বাস ও আনুগত্যে কিছুটা ভাঁটা পড়েছিল বটে, কিন্তু ব্রিটিশ জনগণের হৃদয়ে রাজপরিবারের প্রতি ভালবাসা যাতে চিরস্থায়ী হয়, তা নিশ্চিত করতে সারা জীবন সচেষ্ট ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
তার সিংহাসন আরোহণের রজত জয়ন্তীর সময় তিনি ৩০ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময় তার এক অঙ্গীকারের কথা পুর্নব্যক্ত করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমার বয়স যখন ২১, আমি অঙ্গীকার করেছিলাম আমার জীবন আমি উৎসর্গ করব আমার জনগণের সেবায়। আমি এই প্রতিজ্ঞা রক্ষায় ঈশ্বরের সাহায্য কামনা করেছিলাম। আমার বয়স তখন ছিল অল্প, আমার বিচারবুদ্ধি পরিপক্ক ছিল না। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমি কখনও অনুতাপ করিনি। আমি সেই প্রতিশ্রুতি থেকে কখনো এক চুলও সরে আসিনি।’
সূত্র : বিবিসি