ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন দলের ভেতরে বিদ্রোহ, কতক্ষণ টিকে থাকতে পারবেন বরিস জনসন
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৭ জুলাই ২০২২, ০০:১২
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ক্ষমতাসীন কনসারভেটিভ পার্টির মধ্যে তীব্র বিদ্রোহ এবং মন্ত্রিসভা থেকে একের পর এক পদত্যাগের পর তার প্রধানমন্ত্রীত্ব রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
বুধবার পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে তাকে তীব্র প্রশ্নবানের মুখোমুখি হতে হয়।
সেখানে তিনি বলেছেন, ২০১৯ সালের নির্বাচনে জনগণ তাকে বিপুল ম্যান্ডেট দিয়েছে এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যেতে চান।
এর আগে মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী দু’জন মন্ত্রী ১০ মিনিটের ব্যবধানে পদত্যাগের পর জনসনের নেতৃত্ব এখন বিরাট হুমকির মুখে।
ব্রিটেনের চ্যান্সেলর (অর্থমন্ত্রী) ঋষি সুনাক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ তাদের পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার পর তাদের পথ অনুসরণ করে একের পর এক আরো অনেক জুনিয়র মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। এক সময় তার প্রতি বিশ্বস্ত বলে মনে করা হতো এমন অনেক মন্ত্রী ও এমপিও জনসনকে সরে দাঁড়াতে বলছেন।
কনসারভেটিভ পার্টিতে মাসখানেক আগে বরিস জনসনের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। দলের পার্লামেন্টারি পার্টির ভোটাভুটিতে তিনি ওই যাত্রায় টিকে যান। কিন্তু এবার যেভাবে একের পর এক পদত্যাগ শুরু হয়েছে, তাতে কনসারভেটিভ পার্টির ভেতর তার প্রতি অনুগত অনেককেই পক্ষত্যাগ করতে দেখা যাচ্ছে।
বরিস জনসন ২০১৯ সালে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হন। কিন্তু গত দু’বছর ধরেই তিনি একের পর এক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দলের মধ্যে অনেকের আস্থা হারিয়েছেন।
মূলত একজন এমপি'র বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণের অভিযোগকে ঘিরে বরিস জনসনের প্রধানমন্ত্রীত্ব নিয়ে সর্বশেষ সঙ্কটে পড়েছে।
কনসারভেটিভ পার্টির এমপি ক্রিস পিঞ্চারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তিনি একজনের ওপর যৌন হামলা চালিয়েছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পরও কেন প্রধানমন্ত্রী জনসন পিঞ্চারকে ডেপুটি চীফ হুইপ নিয়োগ করেন- এটি নিয়েই তোপের মুখে পড়েন তিনি।
ওই ঘটনার ফলে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দু’মন্ত্রীর নাটকীয় পদত্যাগ ব্রিটিশ রাজনীতিতে তোলপাড় সৃষ্টি করে। এরপরই একের পর এক জুনিয়র মন্ত্রীরাও পদত্যাগ করতে থাকেন।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একজন মিত্র বলেন, এখন প্রশ্ন, তিনি কিভাবে বিদায় নেবেন? তিনি আরো বলেন, পরিস্থিতি আর তার টিকে থাকার মতো অবস্থায় নেই।
বুধবার পার্লামেন্টে বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কির স্টার্মারও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিকবার পার্লামেন্টে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেবার অভিযোগ তোলেন।
জনসন তার পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তার সরকার অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভালো কাজ করছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলেও জানান তিনি।
বরিস জনসনের বিরুদ্ধে এর আগেও কোভিড মহামারীর বিধি-নিষেধ ভঙ্গ করে ডাউনিং স্ট্রিটের অফিসে ও সরকারি বাসভবনে পার্টি আয়োজনের অভিযোগ উঠেছিল। এজন্য পুলিশ তাকে জরিমানাও করেছে। তবে জনসন গত মাসেই তার দলের এমপিদের এক আস্থা ভোটে জয়ী হন।
কনসারভেটিভ পার্টির নিয়ম অনুসারে, দলের ভেতর আস্থাভোটে জয়ী হওয়ার পর এক বছরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নতুন করে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যায় না। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে ওই নিয়ম বদলানোর দাবি উঠেছে।
যদি ক্ষমতাসীন কনসারভেটিভ পার্টির ওই নিয়ম পাল্টানো হয়। তাহলে জনসনকে সাথে সাথেই দলের পার্লামেন্টারি পার্টিতে নতুন একটি অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে যদি পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয় এবং সেটিতে তিনি হেরে যান, তাহলে হয় তাকে পদত্যাগ করতে হবে, নয়তো নতুন নির্বাচন ডাকতে হবে।
সূত্র : বিবিসি