ব্রিটেনে আঘাত হানছে ইউনিস, লোকজনকে ঘরে থাকার পরামর্শ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:১২, আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:১৫
ব্রিটেনে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এক ঝড় আঘাত হেনেছে। ‘ইউনিস’ নামের এই ঝড় শুক্রবার সকাল থেকেই আঘাত হানা শুরু করলে লোকজনকে তাদের ঘরেই অবস্থানের নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ঝড়ের প্রকোপে অনেক জায়গাতেই ট্রেন ও ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। একইসাথে সব স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ইউনিসের আঘাতের শঙ্কায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে কমপক্ষে ৬৫টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। ঝড়ে আয়ারল্যান্ডে ৫৫ হাজারেরও বেশি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ব্রিটিশ সরকার বলছে, পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১০০ মাইল
ঝড়ের গতি এতোটাই তীব্র যে কিছু কিছু এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা বা রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ব্রিটেনের জন্য এটি বিরল এক ঘটনা।
ইউনিস ঝড়ের আঘাতে মানুষের প্রাণহানিরও শঙ্কা করা হচ্ছে।
ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিস বলছে, ইংল্যান্ডের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চল এবং ওয়েলসে এই রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
তারা বলছে, ইউনিসকে বেশ বিপদজনক ও ক্ষতির ঝড় বলেই মনে করা হচ্ছে।
ইংল্যান্ডে গত এক দশকে চারবার এরকম রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঝড়ের সময় বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১০০ মাইল পর্যন্ত হতে পারে। ইউনিস ঘূর্ণিঝড় না হলেও এর গতি ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রায় পৌঁছে যেতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।
দক্ষিণ ইংল্যান্ডের একটি দ্বীপ আইল অব ওয়াইটের একটি স্থানে বাতাসের গতি ইতোমধ্যে ঘণ্টায় ১২২ মাইল ছিলো বলে রেকর্ড করা হয়েছে।
উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের কোথাও কোথাও তুষারপাতের ব্যাপারেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহ
ব্রিটেনে এক সপ্তাহের মধ্যে এটি দ্বিতীয় ঝড়। এর আগে ডাডলি ঝড়ের আঘাতে স্কটল্যান্ড, উত্তর ইংল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে বহু বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপড়ে গেছে বহু গাছপালা।
আবহাওয়া অফিস বলছে, শুক্রবারের ঝড় ইউনিস ডাডলির তীব্রতাকেও ছাড়িয়ে যাবে এবং এটি হবে গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসের ঝড়ে যেরকম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল এবারেও সেরকম হতে পারে। ৩২ বছর আগের ওই ঝড়ে ৪৭ জন নিহত এবং আরো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
ঝড় ইউনিসের তীব্রতা এতো বেশি যে উপকূলীয় এলাকাগুলোর পাশাপাশি রাজধানী লন্ডনেও সর্বোচ্চ সতর্কতা বা রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বলা হচ্ছে এই ঝড়ের কম বেশি প্রভাব পড়বে সারা দেশে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঝড়ের তীব্রতা এতো বেশি হবে যে বাড়িঘরের ছাদ উড়ে যেতে পারে। ঝড়ের ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে বিদ্যুৎ সংযোগ এবং প্রচুর গাছপালাও উপড়ে যেতে পারে।
শুধু তাই নয়, বাতাসে বিভিন্ন জিনিস উড়ে গিয়ে সেসব প্রাণহানিরও কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিবিসির আবহাওয়াবিদ বেন রিচ বলছেন, ঝড় ইউনিসের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও, যানবাহন চলাচলে বিশৃঙ্খলা এবং উপকূলীয় এলাকায় বড় ধরনের বন্যা হতে পারে।
দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ ওয়েলসের অনেক এলাকায় ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে হাজার হাজার বাড়িতে এখন বিদ্যুৎ নেই।
হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কোথাও বাতাসের ধাক্কায় কোথাও লরি কাত হয়ে পড়ে গেছে।
ঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি
ঝড় ইউনিস মোকাবেলার জন্য প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের নেতৃত্বে কোবরা কমিটি জরুরি বৈঠকে বসেছে।
এর পরই প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেনাবাহিনীকে।
ওয়েলসে রেল চলাচল বাতিল করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বড় বড় কয়েকটি সেতু এবং বহু ফ্লাইটও বাতিল করা হয়েছে। একারণে সম্ভব হলে যাত্রীদের এসব পরিহার করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
শত শত স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
খুব বেশি জরুরি না হলে ঝড় উপদ্রুত এলাকার বাসিন্দাদের শুক্রবার কোথাও না যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সমুদ্র উপকূল থেকে লোকজনকে দূরে থাকতেও বলা হয়েছে।
এছাড়াও আবহাওয়া অফিস থেকে যেসব সতর্কতা জারি করা হয়েছে সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি