২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়া যে ব্রিটিশ এমপি নিজের মৃত্যুর গল্প সাজান

জন স্টোনহাউস, ১৯৫৯ সালে তোলা ছবি - সংগৃহীত

ফ্লোরিডার মায়ামির সমুদ্রতটে একটা স্তূপ থেকে যখন যুক্তরাজ্যের এমপি জন স্টোনহাউসের জামা-কাপড় পাওয়া যায়, তখন অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন তার মৃত্যু হয়েছে। সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময় তলিয়ে গেছেন তিনি। সময়টা ১৯৭৪ সালের ২০ নভেম্বর।

সাঁতার কাটতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে- এই ভাবনা ওই বছরের ক্রিসমাসের আগের দিন পর্যন্ত বজায় ছিল যতক্ষণ না অস্ট্রেলিয়ায় তার সন্ধান মেলে জীবিত এবং একেবারে সুস্থ অবস্থায়।

ওই সময় পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করছিলেন, তখন একাধিক সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন জন স্টোনহাউস।

তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ওই সময় স্থবির হয়ে পড়েছিল, ব্যবসায়িক লেনদেনের ফলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছিল, কমিউনিস্ট গুপ্তচর বলে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং তার সেক্রেটারির সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কও ছিল।

এসব থেকে বাঁচতে লেখক ফ্রেডরিক ফরসিথের উপন্যাস ‘দ্য ডে অফ জ্যাকাল’-এর গল্প অনুকরণ করে দু’জন মৃত ব্যক্তির পরিচয় ধার করে নিজেকে ‘অদৃশ্য’ করে ফেলার পরিকল্পনা করেন তিনি।

ওই ব্রিটিশ রাজনীতিবিদের জীবন কোনো রোমাঞ্চকর গল্পের চাইতে কম নয়। নিজের মৃত্যুর গল্প ফেঁদে ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশের সাথে এই ব্রিটিশ সংসদ সদস্যের নিবিড় যোগ রয়েছে। ১৯৭১-এর যুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই বাঙালি আবেগের সাথেও জড়িয়ে পড়েছিলেন।

বাঙালিদের স্বার্থ নিয়ে তার চিন্তা ভাবনার কারণে বেশ পরিচিতি পান স্টোনহাউস। সম্মান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পর নবপ্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে তাকে নাগরিকত্বও দেয়া হয়েছিল।

‘অদৃশ্য’ হওয়ার পরিকল্পনা
১৯৭৪ সালের নভেম্বরে ব্যবসায়িক কাজে মায়ামি গিয়েছিলেন তিনি এবং সেখান থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান। তারপর নিজের পরিকল্পনা মাফিক অস্ট্রেলিয়ার বিমানে উঠে পড়েন। তার এই অভিযান চলেছিল এক মাসেরও বেশি সময় ধরে।

প্রায় একই সময়ে লর্ড লুকান নামে এক ব্রিটিশ অভিজাত ব্যক্তিও অদৃশ্য হয়ে যান। তিনিও কুখ্যাত ছিলেন। নিজের অজান্তেই তিনিই অস্ট্রেলিয়ায় জন স্টোনহাউজের ধরা পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ান।

স্বাভাবিকভাবেই কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, হঠাৎ বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার মতো তার এই কার্যকলাপকে কিভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন স্টোনহাউস?

১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে সাক্ষাৎকারে তিনি জোরাল দিয়ে বলেছিলেন, ‘শুধুমাত্র সত্য-অনুসন্ধান সফরে গিয়েছিলেন তিনি এবং সেই অনুসন্ধান শুধুমাত্র ভৌগলিক দিক থেকেই ছিল না, রাজনৈতিকসত্ত্বা এবং ব্যক্তিসত্ত্বার দিক থেকেও ছিল।’

রাজনৈতিক ক্যারিয়ার
১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা নিশ্চিতভাবেই তাকে এমন একজন মানুষ বলেই ভেবে থাকবেন, যার কাছে সবকিছুই ছিল ৪৩ বছর বয়সে পোস্টমাস্টার জেনারেল পদ, একজন গ্ল্যামারাস স্ত্রী ও তিন সন্তান।

ভবিষ্যতে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসবেন এমন আলোচনাও হতো তার বিষয়ে। স্টোনহাউসই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ডাকটিকিট প্রবর্তনের তদারকি করেছিলেন। তার রাজনৈতিক জীবনও উল্লেখযোগ্য ছিল।

তবে পরিস্থিতির বদল হতে শুরু করে ১৯৬৯ সালে। কমিউনিস্ট চেকোস্লোভাকিয়া থেকে আসা এক ব্যক্তি দাবি করেন, তথ্য পাচারের জন্য স্টোনহাউসকে ওই দেশের হয়ে (চেকোস্লোভাকিয়ার) নিয়োগ করা হয়েছে। ওই সময় থেকেই জন স্টোনহাউসের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সমস্যা দেখা দিতে থাকে।

তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসনের কাছে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন তিনি। তার কথা বিশ্বাসও করেছিলেন যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী।

স্নায়ু যুদ্ধের সময় অনেকের এমন অভিযোগ বিরল না হলেও তা প্রভাব ফেলেছিল স্টোনহাউসের রাজনৈতিক ভাবমূর্তিতে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে যখন লেবার পার্টি হেরে যায়, তখন বিরোধী আসনে তার জন্য কোনো জায়গা ছিল না।

কিছুটা হতাশ হয়েই লন্ডনে তার ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আরো বেশি করে সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। মূলত রফতানি-সংক্রান্ত ব্যবসা ছিল তার। নিজের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমেই এই ব্যবসার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন তিনি।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়, নতুন উদ্যম দেখা যায় তার মধ্যে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন তিনি। বাঙালিদের সাথে তার আবেগ জড়িয়ে যায়। সম্মানের প্রতীক হিসেবে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তাকে নতুন রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেয়া হয়।

এটা কিন্তু শুধুমাত্র সূচনা ছিল। শিগগিরই তাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয়। ‘ব্রিটিশ বাংলাদেশ ট্রাস্ট’ নামে একটা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে তার সাহায্য চাওয়া হয়। এই ট্রাস্টের উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটেনে বসবাসকারী বাঙালিদের পরিষেবা প্রদান করা।

কিন্তু যেভাবে এই ব্যাংক পরিচালনা করা হচ্ছিল সে বিষয়ে একটা সংবাদপত্রে সমালোচনা করা হয়। ক্রমশ যুক্তরাজ্যের ফ্রড স্কোয়াড (জালিয়াতি-সংক্রান্ত মামলার তদন্তকারী সংস্থা) এবং লন্ডনের ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বাণিজ্য ও শিল্প বিভাগ) তদন্তকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

নেতিবাচক প্রচার এবং সরকারি তদন্তের কারণে ব্যাংকের বেশিভাগ সমর্থকই ধীরে ধীরে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। এই পুরো বিষয়টা স্টোনহাউসকে গভীরভাবে হতাশ করেছিল। মনে হয়েছিল, সহকর্মীদের কাছ থেকে তিনি সম্মানও হারাচ্ছেন।

নতুন পরিচয়
এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে একটা ফন্দি আঁটেন তিনি। এর জন্য প্রথমেই জোসেফ আর্থার মারখামের নামে এক সদ্য মৃত এক ব্যক্তির নাম ভাঁড়িয়ে পাসপোর্টের জাল আবেদন করেন। ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের ওয়ালসাল এলাকার বাসিন্দা ছিলেন ওই ব্যক্তি।

এরপর নিজেকে পরিচয় দেন একজন গ্লোবট্রোটিং এক্সপোর্ট কনসালট্যান্ট (এমন একজন বিশেষজ্ঞ পরামর্শদাতা যিনি বিশ্বজুড়ে কাজের জন্য ঘুরে বেড়ান) হিসেবে। নতুন পরিচয়ের সাথে জুড়ে দেন লন্ডন, সুইজারল্যান্ড এবং মেলবোর্নে ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোকেও।

এখানেই থেমে থাকেনি তিনি। ওয়ালসলে সদ্য মৃত আরেক ব্যক্তি ডোনাল্ড ক্লাইভ মিলদুনের নাম ভাঁড়িয়ে আরেকটা নতুন পরিচয় গড়ে তোলেন। নতুন পরিচয় নিয়ে বাঁচার জন্য তার ব্যবসা থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করেন।

দ্বৈত জীবন
১৯৭৪ সালের ২০ নভেম্বর ফ্লোরিডার মায়ামির সমুদ্রতট থেকে নিখোঁজ হয়ে যান জন স্টোনহাউস। মায়ামির সৈকতে কয়েকটা জামা-কাপড় পড়ে থাকা ছাড়া ৪৯ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদের কোনো চিহ্নই পাওয়া যায়নি ওই সময়।

তিনি কি সমুদ্রে সাঁতার কাটতে গিয়ে তলিয়ে গিয়েছেন, নাকি তাকে হত্যা করে ওই সৈকতেরই কোনো কংক্রিটের ব্লকের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়েছে, নাকি অপহরণ করা হয়েছে- এই কয়েকটা সম্ভাব্য প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছিল সকলের মাথায়।

তার স্ত্রী বারবারা স্টোনহাউসের মনে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না যে তার স্বামী একটা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।

ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কিছু অভাবনীয় গুজব শুনেছি এবং সেগুলো আমার স্বামীর ব্যক্তিত্বের সাথে এতটাই বেমানান যে সে বিষয়ে ভাবাও যায় না আর তার উত্তরও দেয়া যায় না। আমি মনে মনে নিশ্চিত যে এটা একটা দুর্ঘটনা। আমাদের কাছে যে সমস্ত প্রমাণ রয়েছে তা এটাই ইঙ্গিত করে যে উনি ডুবে গিয়েছেন।’

লন্ডন পুলিশের অবশ্য অন্যরকম ভাবনা ছিল।

স্টোনহাউসের সেক্রেটারি এবং গোপন বান্ধবী শিলা বাকলে কিন্তু বন্ধুদের ক্রমাগত বলে চলেছিলেন যে ওই রাজনীতিবিদের মৃত্যু হয়েছে। যদিও আসল ‘গল্পটা’ ২৮ বছর বয়সী বাকলের ভালো করেই জানা ছিল।

নিজের কিছু জামা-কাপড় ট্রাংকে প্যাক করে এর ঠিক এক মাস আগেই অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তার কাছে বেশ কয়েকটা ট্রান্সআটলান্টিক টেলিফোন কলও এসেছিল। জন স্টোনহাউসের অস্ট্রেলিয়ান ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মধ্যে একটার মাধ্যমে সেমি-কোডেড চিঠিও পাঠিয়েছিলেন।

মারখাম ও মিলদুনের নামে ওই দু’টি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এই দুই অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরেই মেলবোর্ন পুলিশ জন স্টোনহাউসের সন্ধান পায়।

ওই সময় লর্ড লুকান নামক কুখ্যাত ব্যক্তির সন্ধানে ছিল পুলিশ। কাকতালীয়ভাবে নভেম্বরে মাসেই তিনিও নিখোঁজ হয়েছিলেন। ৪ নভেম্বর তার সন্তানদের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা এক নারীকে হত্যা করে পালিয়ে যান।

প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান করেছিল যে ব্যক্তিত্বপূর্ণ ইংরেজ পুরুষকে চেকে সই করতে দেখা গিয়েছে, তিনিই লর্ড লুকান। তবে তেমনটা ছিল না।

লর্ড লুকানের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি পুলিশের কাছে ৫০ বছর ধরে একটা রহস্য থাকলেও, জন স্টোনহাউসের ‘অদৃশ্য’ হওয়ার গল্পের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র একমাসের কিছু বেশি সময়। এর মধ্যেই এই মামলার কিনারা করে ফেলে পুলিশ।

ক্রিসমাসের আগের দিন তার আসল পরিচয় স্বীকার করতে বাধ্য হন জন স্টোনহাউস। মেলবোর্নের পুলিশ সদর দফতরে থাকাকালীন যুক্তরাজ্যে বসবাসরত স্ত্রীকে ফোন করতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে জানতে চান স্টোনহাউস। যদিও তার সেই টেলিফোনের কথোপকথনে যে কেউ আড়ি পাতছে এবং রেকর্ড করছে, সে বিষয়ে ধারণাই করতে পারেননি। কিছু না জেনেই বেশ কিছু বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেন।

স্ত্রী বারবারাকে ফোনে তিনি বলেছিলেন, ‘হ্যালো ডার্লিং। এখানে ওরা ভুয়া পরিচয় ধরে ফেলেছে। এসব থেকে তুমি বুঝতেই পারবে যে আমি তোমাকে ঠকাচ্ছিলাম। আমি এর জন্য দুঃখিত, কিন্তু এক অর্থে আমি খুশি কারণ এখন সবকিছুর শেষ হচ্ছে।’

এরপর কিছু দিন স্টোনহাউসকে ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছিল। এরপর প্রথমে তার পরিবার এবং পরে বান্ধবীর সাথে অস্ট্রেলিয়ায় তার সাক্ষাৎ হয়।

পুনরাবির্ভাবের এক মাস পর বিবিসির অস্ট্রেলিয়া সংবাদদাতা বব ফ্রেন্ডকে সাক্ষাৎকার দেন স্টোনহাউস। বব ফ্রেন্ডের সাথে সেই সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য ‘বিভক্ত ব্যক্তিত্বের বিকাশ’কে দায়ী করেন।

তার দাবি ছিল, নতুন পরিচয় নিয়ে তিনি তার পুরনো ব্যক্তিত্বকে মুক্তি দিয়েছিলেন যার (পুরানো ব্যক্তিত্ব) ওপরে বেশ মানসিক চাপ ছিল।

‘কিভাবে স্ত্রী ও পরিবারকে এমন যন্ত্রণার মধ্যে ফেলে দিতে পারলেন?’ এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি চেষ্টা করছিলাম নিখোঁজ হয়ে গিয়ে তাদের জীবনকে সহজ করে দিতে। আমি আমার পুরানো ব্যক্তিত্বর কারণে তাদের ওপর যে মানসিক চাপ তৈরি হয়েছিল, সেটা সরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম।’

জন স্টোনহাউস কিন্তু তখনও এমপি ছিলেন। তার নির্বাচনী এলাকা থেকে ১২ হাজার মাইল দূরে থাকা অবস্থাতে সংসদীয় বেতন না নেয়ার বিষয়ে কোনো পরামর্শ শুনতে চাননি তিনি। বরং পাল্টা যুক্তি দিয়েছিলেন।

ওই সময় তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, ‘অনেক এমপিই বিদেশ সফরে যান এবং ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং ট্যুর (তথ্য অনুসন্ধান করার জন্য সফর) করেন। আমি কেবল ভৌগোলিক দিক থেকেই নয়, একটা রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিসত্ত্বার দিক থেকে একটা ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং ট্যুর করছি।’

তিনি বলেছিলেন, ‘এখন সেই সফরটা খুব আকর্ষণীয় এবং এমপির বেতন নেয়ার দিক থেকে সম্পূর্ণরূপে ন্যায়সঙ্গত হতে পারে যদি আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমার গল্পটা বলতে পারি।’

তিনি আরো বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, একজন এমপিরও কোনোরকম অসুস্থতার বিষয়টা বিবেচনা করা উচিত যেমনটা অন্য কাজে নিযুক্ত কর্মীদের ক্ষেত্রে করা হয়।’

দু’বার মৃত্যু
সাত মাস ধরে অস্ট্রেলিয়ায় থাকার চেষ্টা করে চলেছিলেন স্টোনহাউস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে নির্বাসন দেয়া হয় এবং স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের গোয়েন্দারা তাকে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে যান। ১৯৭৬ সালের আগস্টে, তার ব্যর্থ ব্যবসায়িক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত অভিযোগে ৬৮ দিনব্যাপী বিচারের পর চুরি, জালিয়াতি এবং প্রতারণার অপরাধে তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

এর তিন বছর পর তার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। সেড়ে ওঠার সময় তিনি কারাগারের বাইরে আসেন। জেলে থাকাকালীন তার তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল।

বারবারা স্টোনহাউস তাকে ১৯৭৮ সালে ডিভোর্স দেন। তিন বছর পর, তার সাবেক সেক্রেটারি শিলা বাকলেকে বিয়ে করেছিলেন জন স্টোনহাউস।

১৯৮৮ সালে ‘দ্বিতীয়বার’ এবং সত্যিকারের তার মৃত্যু হয়। একটু কাকতালীয়ভাবেই নিখোঁজ ব্যক্তিদের সম্পর্কে একটা টেলিভিশন অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার তিন সপ্তাহ আগেই ৬২ বছর বয়সে স্টোনহাউসের মৃত্যু হয়।

কিন্তু তার বিরুদ্ধে ওঠা সেই গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ কি সঠিক ছিল যা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে এতটা ক্ষতিগ্রস্থ করেছিল? পুনরায় আবির্ভূত হওয়ার পরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি ‘চেকোস্লোভাকিয়ার গুপ্তচর’ হওয়ার অভিযোগ ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

জন স্টোনহাউসের মেয়ে জুলিয়া কিন্তু (বাবার বিরুদ্ধে ওঠা) বিদেশী শক্তিকে তথ্য পাচারের অভিযোগ আজও অস্বীকার করেন। বাবার পক্ষ সমর্থন করে ২০২১ সালে একটা বইও লিখেছিলেন তিনি।

স্টোনহাউসের ‘এমআই ফাইভ’-এর ফাইল দেখেছেন এমন হাতে গোনা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ এবং অধ্যাপক ক্রিস্টোফার অ্যান্ড্রু।

২০০৯ সালে তার অনুমোদিত ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার ইতিহাসে অধ্যাপক আন্ড্রু এই উপসংহারে পৌঁছেছিলেন যে স্টোনহাউস প্রকৃতপক্ষেই চেকোস্লোভাকিয়ার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করেছিলেন।

২০১২ সালে প্রফেসর অ্যান্ড্রু বলেছিলেন, ‘এই প্রসঙ্গে সত্যিকারের প্রমাণ এসেছিল ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে যখন মিত্র হয়ে ওঠা চেকোস্লোভাকিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা স্টোনহাউসের কিছু ফাইল জনসমক্ষে প্রকাশ করেছিল।’

তিনি বলেছিলেন, ‘তিনি যে গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছিলেন তার গুণমান নিয়ে তারা (চেকোস্লোভাকিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা) বেশ হতাশ ছিল। তাই জন স্টোনহাউস প্রতারণা করেছেন এমন মানুষের যে দীর্ঘ তালিকার রয়েছে, তার সাথে সম্ভবত আমরা চেকোস্লোভাক গোয়েন্দা সংস্থার নামও জুড়ে দিতে পারি।’
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement