২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

তুরস্কে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কেউ, দ্বিতীয় দফায় গড়াতে পারে ভোট

তুরস্কের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট রজপ তাইয়েব এরদোগান - ছবি : সংগৃহীত

তুরস্কের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট রজপ তাইয়েব এরদোগান এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেমাল কুলুচদারুলুর মধ্যে দেশটির কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তুরস্কের সুপ্রিম ইলেকশন কাউন্সিল বা প্রধান নির্বাচন কর্তৃপক্ষ বলছে, এ পর্যন্ত প্রায় সব ভোটই গণনা করা শেষ হয়েছে এবং এরদোয়ান ৪৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কুলুচদারুলু পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ ভোট।

তবে কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশ ভোট পাওয়ায় দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় দফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আঙ্কারায় নিজের সমর্থকদের উদ্দেশে এরদোগান বলেছেন যে- প্রয়োজন হলে তিনি দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে অংশ নেবেন। তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে- তিনি জয় পাবেন।

দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার শপথ নিয়েছেন কুলুচদারুলু। তিনি বলেছেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী মানুষের আস্থা ভোট অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন।

তুরস্কের কিছু দিন আগে ঘটে যাওয়া ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প এবং বাড়তি মুদ্রাস্ফীতির মধ্যেই এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যখন দ্বিতীয় দফার দিকে গড়ানোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তখন তৃতীয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সিনান ওগান যিনি ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তিনি বলেছেন যে- নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ এর ফলাফলকে পাল্টে দিয়েছে।

এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও এরদোগান এবং কেমাল কুলুচদারুলুর এর আগে দেয়া বিবৃতি অনুযায়ী, এরদোগান বলেছেন যে- দ্বিতীয় দফার ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

আনুষ্ঠানিকভাবে যদি এই সিদ্ধান্ত আসে তাহলে এরদোগান দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে অংশ নেবেন না। এমন অবস্থায় তিনি তার সমর্থকদের যে প্রার্থীকে ভোট দিতে বলবেন তা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি আগামী কিছু দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন।

‘আমি আমার জোটের নেতাদের সাথে আলাপ করবো, আমি আমার ভোটারদের সাথে আসছে দিনগুলোতে আলোচনা করবো। আর তারপরেই আমরা একটি সিদ্ধান্ত নেবো এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী ১৪ দিন আমাদের দায়িত্ব পালন করবো,’ তিনি বলেন।

তুরস্কের সুপ্রিম ইলেকশন কাউন্সিলের প্রধান আহমেত ইয়েনের এর আগে বলেছেন, এ পর্যন্ত ৯১ দশমিক ৯৩ শতাংশের বেশি ভোট গণনা শেষ হয়েছে।

দ্বিতীয় দফা ভোট হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এখনো ভোট গণনা চলছে।’

তুরস্কে ছয় কোটি ৪০ লাখ ভোটার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ৫০ লাখ হচ্ছেন নতুন ভোটার, যাদের বয়স ১৮-২২ বছরের মধ্যে, যারা প্রথমবারের মতো ভোট দিয়েছেন।

এরদোগান এবং তার একে পার্টি ২০০২ সাল থেকে দেশটি শাসন করে আসছে। কাজেই এই ভোটাররা তাদের জীবদ্দশায় আর কোনো দলের শাসন দেখেনি।

২০০২ সালের আগের দশকগুলোতে তুরস্কে জোট সরকার শাসন করেছে এবং প্রতি দুই-তিন বছর পর পর নির্বাচনে তাদের পরিবর্তন হয়েছে।

তাই এই তরুণ ভোটার যারা দেশটির অতীতের রাজনৈতিক সমস্যার তোয়াক্কা করে না তারা কী সিদ্ধান্ত নেবে?

তুরস্কের সাম্প্রতিক জরিপ বলছে যে- এদের প্রায় ৭০ শতাংশ তাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে একে পার্টিকে বিশ্বাস করে না।

২৮টি আসন হারাচ্ছে একেপি
তুরস্কের ভোটাররা এবার শুধু তাদের নতুন প্রেসিডেন্টকে নির্বাচন করতেই ভোট দেয়নি বরং পার্লামেন্টের ৬০০ আসন পূরণেও ভোট দিয়েছেন।

এরদোগানের একে পার্টি সবচেয়ে বেশি ভোট পেলেও দল হিসেবে এটি ভালো করেনি।

দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ৯৬ শতাংশ ভোট গণনা শেষে ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে একেপি।

এটি ২০২২ সালে প্রথম নির্বাচনে অংশ নেয়ার পর থেকে দলটির সর্বনিম্ন ভোট পাওয়ার ঘটনা। ওই বছর দলটি ৩৪ দশমিক ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।

এমনকি ওই বছরের পর থেকে দলটি কখনোই ৪০ শতাংশের নিচে ভোট পায়নি।

এছাড়া পার্লামেন্টেও একে পার্টির আসন সংখ্যা কমে গেছে। ২০০২ সালে একেপি পেয়েছিল ৩৬৩টি আসন।

এরপর থেকে প্রতি নির্বাচনেই তাদের আসন সংখ্যা কমতে থাকলেও দলটি ৩০০ আসনের কম কখনোই পায়নি।

২০১৮ সালের নির্বাচনে এই সংখ্যা ২৯৫টিতে গিয়ে ঠেকেছিল। এবারের নির্বাচনে ৩৫ শতাংশ ভোট পাওয়া মানে হচ্ছে একেপি সর্বোচ্চ ২৬৭টি আসন পাবে। তার মানে ২৮টি আসন হারাচ্ছে দলটি।

কিন্তু বাকি তিনটি দলের সমন্বয়ে দলটি আরো ৫৬টি আসন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এগুলো মিলিয়ে এরদোগানের জোট পার্লামেন্টে ৩২৩টি আসন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে তার জোট ৩৪৪টি আসন পেয়েছিল।

এরদোগানের জোটের মধ্যে রয়েছে একেপি, উগ্র-জাতীয়তাবাদী দল এমএইচপি এবং আরো কয়েকটি জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী দল।

গতকাল আঙ্কারায় দলীয় কার্যালয় থেকে সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণ দেন একেপি দলের নেতা এরদোগান।

তিনি তার সমর্থকদের ভোট গণনা শেষ হওয়া পর্যন্ত নজর রাখতে বলেন।

তিনি বলেন, আমরা জানি না যে প্রথম দফাতেই নির্বাচন শেষ হবে কিনা। জনগন যদি দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন গড়াতে চায়, আমরা সেটিও মেনে নেব। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে- প্রথম রাউন্ডেই আমরা ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাবো। এখনো ভোট গণনা বাকি আছে।’

পার্লামেন্টে তার জোট পিপলস অ্যালায়েন্সকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেয়ার জন্য তিনি তার ভোটারদের ধন্যবাদ জানান।

যা বলছেন কুলুচদারুলু
বিরোধীদলীয় নেতা কেমাল কুলুচদারুলু তার জোটের অন্য নেতাদের সাথে ভাষণ দিয়েছেন। এই জোট ন্যাশন’স অ্যালায়েন্স বা ছয়জনের টেবিল নামে পরিচিত।

তিনি বলেন যে- তিনি প্রাথমিক ফলের বিরোধী নন। তবে তিনি কোনো সংখ্যা উল্লেখ করেননি বা এগিয়ে আছেন বলেও দাবি করেননি।

এর পরিবর্তে তিনি বলেন, ‘আমরা এই নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় জিতবো।’

এই নির্বাচনে কোনো ফল না হলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে যে দ্বিতীয় দফা ভোট হবে তিনি তা মেনে নিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন যে- তিনি এটিকে 'পূর্ব নির্ধারিত' হতে দেবেন না।

একই সাথে বারান্দায় দাঁড়িয়ে এরদোগানের দেয়া ভাষণকে উল্লেখ করে বলেন, ‘এই নির্বাচন বারান্দা থেকে জেতা সম্ভব নয়’।

ওই ভাষণে এরদোগান বলেছিলেন যে- তিনি জয় পেয়েছেন।

অল্প সময়ের বক্তব্যে কুলুচদারুলু বলেছেন যে- এরদোগান এবং তার একে পার্টি তাদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাবে না।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement