২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

উদ্বোধনের ১ বছর : ইস্তাম্বুলের সেই মসজিদ থেকে হাফেজ হলো ৩১ শিক্ষার্থী

উদ্বোধনের ১ বছর : ইস্তাম্বুলের সেই মসজিদ থেকে হাফেজ হলো ৩১ শিক্ষার্থী - ছবি : সংগৃহীত

গত বছরের ২৮ মে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক তাকসিম স্কয়ারে একটি নান্দনিক মসজিদের উদ্বোধন করা হয়। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ওই মসজিদ। এর মাত্র এক বছর তিন মাসের মাথায় মসজিদটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হিফজ বিভাগ থেকে অন্তত ৩১ জন শিক্ষার্থী হাফেজ হয়েছে। এ ঘটনা প্রথমবার হওয়ার কারণে তা মসজিদ ও ওই শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে।

স্থানীয় সময় রোববার (২৯ আগস্ট) এ উপলক্ষে মসজিদে আয়োজিত একটি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে ওই শিক্ষার্থীদের বিশেষ সম্মাননা সনদ দেয়া হয়। এর আগে তারা দেশটির ধর্ম অধিদফতরের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়। প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

তাকসিম স্কয়ার মসজিদ পরিচালিত হিফজ ইনস্টিটিউটের পরিচালক রজব জেনিক বলেন, পবিত্র কুরআন হিফজ সম্পন্ন হওয়ার মাধ্যমে আমাদের অদম্য প্রচেষ্টা সাফল্য বয়ে এনেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ধর্ম অধিদফতরের হিফজ বিভাগের প্রধান ইবরাহিম ইয়ালমাজ জানান, তুরস্কে প্রতি বছর অন্তত ১২ হাজারের বেশি মানুষ পবিত্র কুরআন হিফজ সম্পন্ন করেন। এরপর চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তাদের সনদ দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, গত ২৮ মে জুমার নামাজের মাধ্যমে তাকসিম স্কয়ারের মসজিদটি উদ্বোধন করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। ২৬ হাজার ৭১৬ বর্গ ফুট আয়তনের এ মসজিদে একসাথে চার হাজারের বেশি মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। ইস্তাম্বুলের ব্যস্ততম এ স্থানে নির্মিত মসজিদটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপত্যের অনন্য সংযোজন বলে মনে করা হয়।

সর্বপ্রথম ১৯৫০ সালে ইস্তাম্বুলে মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা বন্ধ যায়। অবশেষে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে এরদোগানের হাতে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় এবং শুরুর চার বছরের মাথায় নির্মাণকাজ শেষ হয়। এরদোগান যখন ইস্তাম্বুলের মেয়র, তখন থেকেই এখানে মসজিদ নির্মাণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন তিনি।

তাকসিম স্কয়ার হচ্ছে- ইস্তাম্বুলের ইউরোপীয় অংশে অবস্থিত স্বাধীনতার স্মৃতিধন্য ঐতিহাসিক স্থান। এখানে মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্য প্রায় এক শ’ বছর আগে ১৯২৮ সালে ‘আধুনিক’ তুরস্ক প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা বীরদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।

স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভের পাশাপাশি তাকসিম স্কয়ার আরো বেশ কিছু কারণে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এখানে রয়েছে ইউরোপের দ্বিতীয় প্রাচীনতম রেলস্টেশন, যা ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বছরের প্রায় সব ঋতুতেই তুর্কি এবং ভিনদেশী পর্যটকে মুখরিত তাকসিম স্কয়ার আধুনিক ইস্তাম্বুলের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। তবে ‘তাকসিম’—এই আরবি নামে স্কয়ারটির নামকরণের কারণ হলো- ১৭৩২ সালে সুলতান প্রথম মোহাম্মদের শাসনামলে শহরে পানিবণ্টনের জন্য একটি খাল খনন করা হয়েছিল। খালটি মিলিত হয়েছিল এখানে এসে, যা শহরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলে। ফলে জায়গাটির নাম রাখা হয় ‘তাকসিম স্কয়ার’, বাংলায় যার অর্থ হয় বণ্টনের মাঠ।

তাকসিম স্কয়ার মসজিদটিকেও তুরস্কের অন্য ঐতিহাসিক মসজিদগুলোর মতো ঐতিহ্যবাহী নকশা ও নান্দনিকতা রক্ষা করে নির্মাণ করা হয়েছে। বিখ্যাত আয়া সোফিয়া মসজিদের মতো এই মসজিদের দেয়ালগুলোতে অঙ্কিত হয়েছে আল্লাহ, মোহাম্মদ এবং ইসলামের প্রথম চার খলিফার নাম।

নকশা করেছেন তুরস্কের প্রসিদ্ধ দুই প্রকৌশলী শফিক বারকিয়া ও সালিম দালামান। মসজিদটির উচ্চতা ৩০৩ মিটার। এর তিনতলা আন্ডারগ্রাউন্ডে রাখা হয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা, তাতে অন্তত ১৬৫টি গাড়ি রাখা যাবে। তাছাড়া ১৫৫ বর্গমিটারের একটি দর্শনীয় সাংস্কৃতিক হলরুমও আছে।

সূত্র : আলজাজিরা, টিআরটি আরবি ও তুর্কি ট্যুরস


আরো সংবাদ



premium cement