২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কোনিয়া যেন মসজিদের শহর

কোনিয়া যেন মসজিদের শহর - ছবি : নয়া দিগন্ত

মসজিদের শহর বলা হয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে। এই শহরের অলিতে-গলিতে মসজিদের ব্যাপক উপস্থিতিই দিয়েছে এই খেতাব। তবে যেভাবে ক্রমাগত মসজিদ নির্মিত হচ্ছে তুরস্কের কোনিয়া শহরে, হয়তো একসময় তারাও নিতে পারে মসজিদের শহরের উপাধি।

শহরটিতে একটু পরপরই চোখে পড়বে মসজিদ। কোনোটি বড় আবার কোনোটি ছোট। তবে প্রায় সব মসজিদই একই ধরনের তৈরী। এটা তুরস্কের স্থাপত্য নিদর্শনের একটি ঐতিহ্য।

এবারের পঞ্চম ইসলামী সলিডারিটি গেমসের স্বাগতিক ছিল এই কোনিয়া। ৫৪টি মুসলিম দেশের সাড়ে চার হাজার ক্রীড়াবিদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল এই শহর। তুরস্কের মধ্যবর্তী অঞ্চলের শহর এটি। কোনিয়া এক সময় ছিল তুরস্কের রাজধানী। তা সেলজুক শাসনামলে। অটোম্যান বা উসমানীয় শাসনামলে রাজধানী কোনিয়া থেকে স্থানান্তরিত হয় ইস্তাম্বুলে। পরবর্তীতে আঙ্কারা পায় রাজধানীর খেতাব। বর্তমানে দেশটির সপ্তম বৃহত্তম শহর কোনিয়া। বড় বড় শিল্প কারখানার জন্য বিখ্যাত এই কোনিয়া। সাথে শস্য উৎপাদনের জন্যও।

বিখ্যাত তুর্কি নাগরিক মাওলানা নাসিরুদ্দিন হোজ্জা, মাওলানা জালালউদ্দিন রুমির শহর এই কোনিয়া। জালালউদ্দির রুমির কবরের পাশেই ১ হাজার ৫০০ শতাব্দীতে নির্মিত বিশাল আকারের সুলতান সেলিম মসজিদ। পুরোপুরি ইউরোপিয়ান বিভিন্ন উন্নত শহরের আদলে গড়া এই কোনিয়া শহর। একেবারেই পরিপাটি, পরিচ্ছন্ন, ফুল গাছ আর ফলজ ও বনজ গাছে পরিপূর্ণ এই শহর। রয়েছে কোনিয়া থেকে ইস্তাম্বুল পর্যন্ত দ্রুতগতির ট্রেন সার্ভিস। শহরে অত্যাধুনিক সড়ক ব্যবস্থাপনা। ফ্লাইওভারের সাথে মেট্রো-ট্রাম সব কিছুরই উপস্থিতি। এবারের ইসলামী সলিডারিটি গেমসের ভেন্যু ছিল কোনিয়া শহরের বিভিন্ন প্রান্ত জুড়ে। বিভিন্ন প্রান্তে মাইলের পর মাইল সড়ক আর মেট্রোতে চলেই দেখার সুযোগ এই শহরকে। বেশ প্রশস্ত রাস্তার এক পাশে সাইকেল লেন। সাথেই হাটার রাস্তা বা ফুটপাত। ঢাকা শহরের মতো কোথাও ময়লা আবর্জনার নোংরা ডাস্টবিন নেই।

পুরো শহরে বহুতল ভবনের সংখ্যা কমই। অন্য যেসব বাড়ি বা ভবন আছে তা সবই প্রায় একই ডিজাইনের। আর একটু পরপরই মসজিদের উপস্থিতি। এক কিলোমিটার পরপরই মসজিদ চোখে পড়ে। লক্ষ্যণীয় বিষয় প্রতিটি মসজিদেই মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা আছে। আর অজুখানার ওপর একটি ছোট গম্বুজ ও ছাদ ঢাকা খোলা অজু করার জায়গা।
মসজিদগুলোর কোনোটিতে একটি মিনার। আবার কোনোটিতে চারটি মিনার। কোনোটিতে একটি গম্বুজ। কোনোটিতে ছোট বড় মিলিয়ে অনেক গম্বুজ। প্রতিটি মিনারে উপর চাঁদ খচিত। দুঃখজনক বিষয় ছিল সুলতান সেলিম মসজিদে জুমার নামাজ পড়ার সময় হাফ প্যান্ট পরে (হাঁটু সমান নামানো) কয়েক যুবককে পাওয়া গেল। তারাও দাঁড়িয়ে গেল নামাজে। দূরের উঁচু পাহাড়ে বহুতল ভবনের সারি তৈরী করে সেখানে নতুন শহর তৈরী করা হচ্ছে। সেখানেই একাধিক মসজিদ আছে।

অবশ্য কোনিয়ায় পর্দা পরা মহিলা বা মেয়েদের পাশাপাশি পশ্চিমা সংস্কৃতির খোলামেলা পোশাকও আছে। লক্ষ্যণীয় বিষয় বোরকা ও হিজাব পরা মহিলারা রাস্তায় প্রকাশ্যেই ধুমপান করে। কিছু মহিলা একেবারেই পুরো শরীর ঢেকে (মুখও দেখা যায় না) রাস্তায় বের হন। তবে পরস্পরের সাথে দেখা হলেই তুর্কি মুসলানদের প্রথম বাক্য শুরু হয় সালাম দিয়ে। আমাদের মতো আস সালামু আলাইকুম না বলে ওদের মুখ থেকে বের হয় ‘সালামাইলকুম’। আর খুশির কথা শুনলেই বলে মাশআল্লাহ।

ন্যাড়া পাহাড়ে ঘেরা কোনিয়া শহর। একসময় এই শহরে ছিল রোমান খৃস্টান, গ্রীক আর বাইজেন্টাইনদের শাসন। পরে মুসলমানরা তাদের হটিয়ে দেয়। কোনিয়া শহরের যে অংশ এবারের ইসলামী সলিডারিটি গেমসের ভেন্যু ভিলেজ ছিল তা ৩০ থেকে ৪০ বছর আগে গড়ে তোলা হয়েছে। শহরের এক প্রান্তে বর্তমান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের একে পার্টির অফিস দেখা গেল। তার ছবি আর দল ও তুরস্কের পতাকা উড়ানো অফিসটি। এই কাজটি করেছে ঠিক বাংলাদেশী রাজনৈতিক দলগুলোর অফিস সাজানোর মতো। তবে পোস্টারে ভরে দেয়নি।

আফগানিস্তানের বলখ প্রদেশে জন্ম হলেও বিখ্যাত ইসলামী স্কলার মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি ইরাক, ইরান, সৌদি আরব, সিরিয়া হয়ে কোনিয়ায় মারা যান। মাওলানাকে তুর্কিরা মাভলানা বলে। কোনিয়াতে যেখানে জালালউদ্দির রুমির কবর সেই স্থানটি মাভলানা নামেই পরিচিত। মেট্রো স্টেশনের নামও রাখা হয়েছে মাভলানা নামে। তুর্কি খাবারে তিলের উপস্থিতি বেশী। পিঠা পুলিতে তো আছেই। তিলের তেলে রান্নার সাথে তিলের তৈরী স্যুপও পাওয়া যায়। সাথে ভেড়া, গরু, মুরগীর গোশতও তাদের খাবারের উপাদান। বাহারি মিষ্টি তৈরিও হয় এই কোনিয়াতে।


আরো সংবাদ



premium cement