ইস্তাম্বুল খাল প্রকল্পে সমালোচনার জেরে তুরস্কে ১০ অ্যাডমিরাল গ্রেফতার
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ এপ্রিল ২০২১, ১৫:২৫, আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১১:২৪
তুরস্কের ব্যয়বহুল ইস্তাম্বুল খাল প্রকল্পের বিষয়ে সতর্ক করে তুরস্কের নৌবাহিনীর সাবেক ১০৪ কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ঘোষণার জেরে অবসরপ্রাপ্ত ১০ অ্যাডমিরালকে আটক করা হয়েছে। সোমবার সাবেক তুর্কি নৌ কর্মকর্তাদের ঘোষণায় রাজধানী আঙ্কারার রাষ্ট্রীয় প্রধান কৌঁসুলির তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের আটক করা হয় জানায় রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি।
এছাড়া বয়সের কারণে আরো চার অভিযুক্তকে আটক না করে তিন দিনের মধ্যে আঙ্কারা পুলিশের কাছে হাজিরা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
এর আগে গত মাসে তুর্কি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইস্তাম্বুল খাল প্রকল্প অনুমোদনের পর শনিবার দেশটির নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা প্রকল্পের সমালোচনা করে এক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন।
ঘোষণায় তারা ১৯৩৬ সালে স্বাক্ষরিত মনট্রেউক্স চুক্তিকে বিতর্কিত করায় ইস্তাম্বুল খাল প্রকল্পের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের মতামত এমন কোনো কথা বা কাজ থেকে বিরত থাকার যা মনট্রেউক্স চুক্তিকে বিতর্কের বস্তুতে পরিণত করে।’
তুর্কি নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কৌঁসুলিরা রোববার এক তদন্ত শুরু করেন। তদন্তে ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সাংবিধানিক কাঠামোর বিরুদ্ধে অপরাধের’ অভিযোগে তুর্কি নৌবাহিনীর সাবেক ১৪ অ্যাডমিরালকে অভিযুক্ত করা হয়।
ঘোষণার জেরে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের বিশেষ উপদেষ্টা ও মুখপাত্র ইবরাহিম কালিন এক টুইট বার্তায় জানান, এই ঘোষণা সামরিক অভ্যুত্থানের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘তাদের জেনে রাখা উচিত আমাদের উজ্জীবিত জাতি ও তাদের প্রতিনিধিরা এই মানসিকতা কখনোই মেনে নিবে না।’
তুর্কি সেকুলার সংবিধানের সংরক্ষক হিসেবে নিজেদের বিবেচনা করা সামরিক বাহিনী ১৯৬০ সাল থেকে দেশটিতে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে তিন দফা সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। এ ছাড়া ২০১৬ সালেও অপর একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটনার চেষ্টা হলেও তুর্কি জনসাধারণের প্রতিরোধের মুখে তা ব্যর্থ হয়।
সুইজারল্যান্ডের মনট্রেউক্সে ১৯৩৬ সালে তুরস্কের সাথে অন্য দেশগুলোর স্বাক্ষরিত এই চুক্তিতে তুরস্কের সীমানার অধীন বসফোরাস ও দারদানেলিস প্রণালীর ওপর তুর্কি নিয়ন্ত্রণের স্বীকৃতি দেয়া হয়। তবে চুক্তি অনুযায়ী শান্তি ও যুদ্ধকালীন দুই সময়েই বেসামরিক নৌযানের কোনো বিনিময় দেয়া ছাড়াই পারাপারের সুযোগ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়াসহ কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী দেশগুলোর সামরিক নৌযান এই প্রণালী দিয়ে চলাচলের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিপুল নৌযান পারাপারের ফলে প্রায়ই এশিয়া ও ইউরোপের মাঝের এই প্রণালী পথে নৌজটের সৃষ্টি হয়। নৌজটের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে এই প্রণালীতে।
তুর্কি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রণালীর সমান্তরালে কৃষ্ণসাগর ও ভূমধ্যসাগরকে সংযোগ করা নতুন ইস্তাম্বুল খালের মাধ্যমে প্রণালী পথে নৌ চলাচলের চাপ কমবে।
বসফোরাসের পশ্চিম থেকে শুরু হয়ে ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খাল খননে নয় শ ৮০ কোটি ডলার (বাংলাদেশী ৮৩ হাজার কোটি টাকার বেশি) খরচ হবে।
তবে এই খাল ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণসাগরের মধ্যে বিভিন্ন নৌযানকে চলাচলের সুযোগ দিলেও এর ওপর মনট্রেউক্স চুক্তি প্রযোজ্য হবে না।
সরকারবিরোধীরা বলছেন, এই খাল প্রকল্প অর্থনীতির ওপর বিপুল প্রভাব ফেলার পাশাপাশি স্থানীয় পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
সূত্র : আলজাজিরা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা