সিরীয় সৈন্য প্রত্যাহার না হলে ইদলিবে অভিযান চালাবে তুরস্ক : এরদোগান
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:৩২, আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:৩৮
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যদি দামেস্ক তুর্কি সামরিক অবস্থানগুলো থেকে তার সৈন্যবাহিনী প্রত্যাহার না করে তাহলে শিগগির সিরিয়ার ইদলিবে সামরিক অভিযান চালাবে আঙ্কারা। আর এই অভিযান পরিচালনা করা হবে চলতি মাসের শেষ দিকে।
এর আগেও এরদোগান বলেছিলেন, ইদলিব থেকে সিরীয় সৈন্যবাহিনী যদি প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে তাদের হটাতে ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ তুরস্ক সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে পারে। গতকাল বুধবার মতাসীন একে পার্টির পার্লামেন্ট আইন প্রণেতাদের সাথে এক বেঠককালে এরদোগান এ হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দিন গণনা করছি এবং এটি চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি।’
উত্তর সিরিয়ায় তিনটি সীমান্তে তুরস্কের অভিযানের কথা উল্লেখ করে এরদোগান বলেন, আমাদের আগের অভিযানগুলোর মতোই এ অভিযান হঠাৎ এক রাতেই ঘটতে পারে। এরদোগান জোর দিয়ে বলেছেন, যেকোনো উপায়ে ইদলিবকে একটি সুরতি অঞ্চল হিসাবে গড়ে তুলতে তুরস্ক বদ্ধপরিকর।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, ইদলিবের পরিস্থিতি নিয়ে আঙ্কারা ও মস্কোর মধ্যে বেশ কয়েক দফায় আলোচনা হলেও কোনো ‘কাক্সিত ফলাফল’ আসেনি। এরদোগান বলেন, ‘আলোচনা অব্যাহত থাকবে, তবে এটা সত্য যে আমরা আমাদের দাবি আলোচনার টেবিলে সমাধান করা থেকে অনেক দূরে। ‘তুরস্ক তার নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে।’ ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে অভিযান চালাতে পারি।’ ‘অন্য কথায়, ইদলিবে অভিযান সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
এরদোগানের হুমকির প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা যদি সিরিয়া প্রজাতন্ত্রের বৈধ কর্তৃপ এবং সিরিয়া প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার কথা বলি; তবে অবশ্যই এটি সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হবে।’
তবে পেস্কভ আরও যোগ করেছেন যে, বিদ্যমান চুক্তি অনুসারে আঙ্কারা ‘ইদলিবের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর’ বিরুদ্ধে কাজ করলে মস্কো আপত্তি করবেন না।’ উত্তেজনা যাতে আর বৃদ্ধি না পায় সে বিষয়ে তুরস্কের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন পেস্কভ।’ উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার কয়েকটি বিদ্রোহী দলকে সমর্থন করছে আঙ্কারা। দু’সপ্তাহের ব্যবধানে ইদলিবে সিরীয় সৈন্যরা হামলা চালিয়ে তুরস্কের ১৩ জন সেনাসদস্যকে হত্যা করার পর থেকেই উত্তেজনা চরমে পৗঁছেছে।
সম্প্রতি মস্কোর সহায়তায় আসাদের অনুগতবাহিনী সিরিয়ার শেষ বিদ্রোহী অবস্থানগুলোতে অভিযান চালানো শুরু করার পর এরদোগান এ হুঁশিয়ারি দিলেন। সিরিয়ার সরকারি সৈন্যরা এই অঞ্চলে আক্রমণ পুনরায় পরিচালিত করার পর থেকে প্রায় ৫ লাখ শিশুসহ তিন মাসেরও কম সময়ে প্রায় ৯ লাখ বেসামরিক লোক তাদের বাড়িঘর এবং আশ্রয় কেন্দ্র থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে। এদোগানের হুঁশিয়ারির এক দিন আগেই জাতিসঙ্ঘ ইদলিবে মানবিক পরিস্থিতি চূড়ান্ত অবনতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার প্রধান জানিয়েছেন, এ বছর এই অঞ্চলে হামলায় প্রায় ৩০০ বেসামরিক মানুষ মারা গেছে। এদের মধ্যে সিরিয়া ও রাশিয়ান বাহিনীর হামলায় মারা গেছেন ৯৩ শতাংশ মানুষ।
ঠাণ্ডায় জমে মরছে শিশুরা : সিরিয়ার নতুন বাস্তুচ্যুতদের ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু। সবচেয়ে বেশি পীড়াও তাদেরই সহ্য করতে হয়। জাতিসঙ্ঘের মানবিক বিষয় ও জরুরি ত্রাণবিষয়ক প্রধান মার্ক লোকক বলেন, সিরিয়ার পরিস্থিতি ভয়াবহতার নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। গত সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাস্তুচ্যুতরা ‘আতঙ্কিত’। শিবিরগুলোয় জায়গা নেই। জমে যাওয়ার মতো তাপমাত্রায় তাদের বাইরে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। মায়েরা প্লাস্টিক পুড়িয়ে শিশুদের উষ্ণ রাখার চেষ্টা করছেন। ঠাণ্ডায় নবজাতক ও ছোট শিশুরা মারা যাচ্ছে।
কয়েকদিন আগে সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তের নিকটে কালবিত শিবিরে আরিজ মজিদ আল-হমেইদি নামের পাঁচ মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিবিরের এক কর্মকর্তা আবু আনোয়ার জানান, শিশুটির পরিবার গণমাধ্যমের সামনে আসতে চায় না। শিশুটির মৃত্যুর জন্য তারা নিজেদের দায়ী করছে। তাকে পর্যাপ্ত উষ্ণ রাখতে না পারায় নিজেদের দোষ দিচ্ছে। আনোয়ার আরও বলেন, এখানকার পরিস্থিতি অসহনীয়। এখানে প্রায় পাঁচ হাজার ৫০০ মানুষের ৮০০ পরিবার আছে। অথচ, শিবিরটিতে পানি সরবরাহ করছে মাত্র একটি সংগঠন।
আশ্রয় নেই কোথাও : রুশ বিমান বাহিনীর সমর্থন নিয়ে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সেনারা গত এপ্রিল থেকে ইদলিবে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তীব্র হামলা ও অভিযান শুরু করে। প্রদেশটিতে বসবাস প্রায় ৩০ লাখ মানুষের। তাদের অনেকে সরকারি বাহিনীর দখলে থাকা বিভিন্ন এলাকা থেকে সেখানে গিয়ে জড়ো হয়েছেন। বিদ্রোহীদের সামরিক বাহিনীর এই ধাক্কা সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশ তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতায় ফাটল ধরিয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এক চুক্তি অনুসারে, ইদলিবকে ‘ডি-এস্কালেশন জোন’ বা যুদ্ধ-মুক্ত অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হলেও গত ডিসেম্বর থেকে সখানে সামরিক অভিযান নতুন উদ্যোমে শুরু করেছে সরকার। প্রদেশটির মধ্যে দিয়ে চলে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রাস্তা এমফাইভ হাইওয়ে দখলে চেষ্টা জোরদার করে সরকারি জোট। আলেপ্পো প্রদেশের সাথে বাণিজ্যিক পরিবহন ও যোগাযোগে অন্যতম প্রধান রাস্তা এটি। সূত্র : আলজাজিরা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা