ইদলিবে মুখোমুখি অবস্থানে তুর্কি ও আসাদ সেনারা
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৫ আগস্ট ২০১৯, ০৬:৩৯
সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে তুরস্কের একটি পর্যবেক্ষণ ঘাঁটির চার পাশে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সৈন্যদের অবস্থানকে ঘিরে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত শুক্রবার ওই এলাকায় খুব কাছাকাছি মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে তুর্কি ও আসাদের সৈন্যবাহিনী।
তুরস্কের সমর্থিত বিদ্রোহীদের দ্বারা পরিচালিত অঞ্চলটিতে সিরিয়ার সরকার অভিযানের মধ্যে উভয়পক্ষের সেনাবাহিনীর কাছাকাছি চলে আসার বিষয়টি উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তুলেছে।
বিষয়টি নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান দামেস্কের প্রধান সহযোগী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে এক ফোনালাপে তার উদ্বেগের কথা জানান।
এরদোগান পুতিনকে বলেন, সিরিয়া সরকারের হামলা একটি বড় ধরনের মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে এবং সিরিয়ার সঙ্কটের সমাধানের চেষ্টাকে ক্ষুণœ করেছে। সিরিয়ায় ইদলিবের নিয়ন্ত্রণ নিতে আসাদ সরকার সর্বাত্মক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফোনালাপে এরদোগান পুতিনকে বলেন, ‘এসব হামলা তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।’ অন্য দিকে ক্রেমলিন বলেছে, ‘এ অঞ্চল থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাসবাদী হুমকি হ্রাস করার লক্ষ্যে দুই নেতা পারস্পরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছেন।’
আগামী মঙ্গলবার পুতিনের সাথে দেখা করতে এরদোগান মস্কো সফরে যাচ্ছেন। একটি সরকারি সূত্র মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য জানিয়েছে। এ ছাড়া চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথেও এরদোগান কথা বলবেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
২০১১ সালে আসাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লব শুরু হওয়ার পর থেকে তুরস্ক সিরিয়ায় বিদ্রোহী দলগুলোকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। ইদলিবের নিয়ন্ত্রণ নিতে সিরীয় ও রুশ বিমান হামলার সহায়তা নিয়ে আসাদ সরকারের স্থল বাহিনী বিরোধীদের ঘাঁটির দক্ষিণ থেকে সামনে অগ্রসর হচ্ছে।
আঙ্কারার অভিযোগ, তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করছে আসাদ সরকার। তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার বলেন, রাশিয়াকে আঙ্কারা বলেছে, আসাদ বাহিনীকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সিরিয়ার বিরোধীদলীয় মুখপাত্র ইয়াহইয়া আল আরিদি বলেন, একটি জনপ্রিয় অভ্যুত্থানকে মোকাবেলায় সামরিক পথ বেছে নিয়েছে সরকারি বাহিনী।
তিনি বলেন, ভয়ানক মানব ক্ষয় হচ্ছে। হাজার হাজার লোক তাদের বাড়িঘর থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে যাচ্ছেন। এটা মানবিক বিপর্যয়। আর অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই বিশ্ব তাকিয়ে তাকিয়ে তা দেখছে।
তুরস্ক ইতোমধ্যে ৩৬ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। ইদলিবে সশস্ত্র বিরোধীপক্ষকে নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সিরিয়া, ইরান ও রাশিয়ার ব্যাপক চাপে রয়েছে তুরস্ক। কিন্তু শরণার্থীদের বড় ঢল নিয়ন্ত্রণ ও তুরস্কের স্থল বাহিনীর নিরাপত্তায় বাসার আল আসাদের লাগাম ধরতে রাশিয়াকে প্রয়োজন আঙ্কারার।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার রিসোর্ট সোচিতে এই দুই নেতা ইদলিবে একটি অস্ত্রবিরতির মধ্যস্থতা করেন। রাশিয়ার সমর্থনে বাশার আল আসাদ ও তুরস্কের সমর্থনে বিরোধীরা যাতে বড় ধরনের সঙ্ঘাতে জড়িয়ে না পড়েন, সেটি রোধ করার জন্যই ওই অস্ত্রবিরতি হয়েছিল। কিন্তু ৯ মাস পর সেই চুক্তি ব্যর্থ হয়ে গেছে। সিরীয় সরকার অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ তুরস্কের। ইদলিবে বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এ ছাড়া সিরিয়ার স্থল বাহিনীকে বিমান হামলার সহায়তায় সামনে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে মস্কো। কিন্তু এখন ইদলিবে সিরীয় বাহিনীর সর্বাত্মক হামলায় সমর্থন দিতে পারছে না রাশিয়া। কারণ একটি সামরিক লড়াইয়ের চেয়ে তুরস্কের সাথে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাদের জন্য।
উল্লেখ্য, একটি পর্যবেক্ষণ ফাঁড়িতে সিরীয় বাহিনীর কামান হামলায় মে মাসের শুরুতে দুই তুরস্ক সেনা আহত হয়েছেন। এ ছাড়াও আরো তিনটি হামলা এই প্রশ্ন জাগিয়েছে যে এটি কী পরিকল্পিত নাকি আঙ্কারাকে চাপে ফলতে করা হয়েছে। আর এ ব্যাপারে রাশিয়া অবগত রয়েছে। হুলুসি আকার বলেন, তুরস্ক বাহিনী যেখানে আছে, সেখান থেকে এক পা পেছাবে না।
সূত্র : মিডলইস্ট আই
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা