জুলাইতে এস-৪০০ আসছে তুরস্কের হাতে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:২৫
এ বছর জুলাই মাসেই তুরস্কের হাতে আসতে যাচ্ছে সর্বাধুনিক প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা এস-৪০০। জুলাইতে রাশিয়া এটি হস্তান্তর শুরু করবে বলে জানিয়েছে রাশিয়া রাষ্ট্রীয় অস্ত্র রফতানিকারক সংস্থা রফতানিকারক রসবরন এক্সপোর্ট। ইন্টারফ্যাক্সের বরাত দিয়ে সংবাদটি প্রকাশ করেছে তুর্কি দৈনিক ডেইলি সাবাহ।
সংস্থাটির আলেকজান্ডার মিখাইভ ইন্টারফ্যাক্সকে বলেন, ‘ইতোমধ্যেই সব কিছু নিয়ে আলোচনা ও সমঝোতা হয়ে গেছে। তিনি জানান, এর বাইরে তুরস্কের কাছে যুদ্ধবিমান বিক্রির বিষয়েও আলোচনা করছে রাশিয়া।
রাশিয়ার থেকে তুরস্ক এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষব্যবস্থা ক্রয় করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার হুমকি দিয়েছে। এ নিয়ে আঙ্কারা বলেছে, এস-৪০০ ক্রয় নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত নয় কারণ তুরস্ক ওয়াশিংটনের প্রতিপক্ষ নয় এবং ন্যাটোর জোটের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।
প্রসঙ্গত, তুরস্ক ১৯৯৯ সালে ১০০টি এফ-৩৫ জঙ্গিবিমান কেনার জন্য আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি করেছে। এর মধ্যে গত বছরের ২২ জুলাই প্রথম চালান হিসেবে একটি বিমান হস্তান্তর করে আমেরিকা।
ন্যাটোভুক্ত দেশ তুরস্ক আমেরিকা নেতৃত্বাধীন কয়েকটি দেশের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তৈরি ও কেনার প্রকল্পে যুক্ত রয়েছে। অন্যান্য দেশগুলো হচ্ছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইতালি, নেদারল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে এবং ডেনমার্ক।
তুরস্ক রাশিয়ার এস-৪০০ আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ক্রয়ে অটল থাকলে যুক্তরাষ্ট্র সিনেটে তুরস্কের বিরুদ্ধে অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান না দিতে বিল পাস করে।
এদিকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এস-৪০০ পাওয়ার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে তুরস্ক।
এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা কেন এত আলোচিত
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে সবচেয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে যে অস্ত্রটি তার নাম এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। রাশিয়ার তৈরি এই সমরাস্ত্রটিকে বিবেচনা করা হয় ক্ষেপণাস্ত্র অঙ্গনের সর্বাধুনিক সংস্করণ হিসেবে। নতুন এই অস্ত্রটি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে অনেক দেশ, যাদের মধ্যে রয়েছে এমন দেশ যারা আবার যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। যে কারণে ক্ষুব্ধ ওয়াশিংটন। এই অস্ত্রটিকে কেন্দ্র করে তাই নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সমীকরণ তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
রাশিয়া সমরাস্ত্র তৈরিতে বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় দেশ। তেলের পরেই দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম আয়ের উৎস সমরাস্ত্র বিক্রি। নতুন এই এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাশিয়ার অস্ত্র শিল্পের আলোচিত একটি ‘পণ্য’। উদ্ভাবনের পরই আলোচনার জন্ম দিয়েছে বহুমুখী এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি।
রাশিয়ার এই অস্ত্রটি কিনতে ইতোমধ্যেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন, সৌদি আরব, ভারত, কাতারসহ বেশ কিছু দেশ। এর মধ্যে সৌদি আরব ও ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র, তুরস্কও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের সদস্য। যেসব দেশই এই অস্ত্রটি কেনার ঘোষণা দিয়েছে- তারা যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো কিংবা অন্যান্য মার্কিন সংশ্লিষ্ট জায়গা থেকে কূটনৈতিক হুমকি ও বিরোধীতার মুখে পড়েছেন।
তুরস্ক এ বিষয়ে চুক্তিও করে ফেলেছে রাশিয়ার সাথে। এ নিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল বিরোধীতার মুখোমুখী। তবে বুধবার তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, মার্কিন চাপে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি থেকে কিছুতেই সরে আসবে না তুরস্ক। পরবর্তীতে তুরস্ক এস-৫০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও কিনতে পারে বলে জানান তিনি। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পাদিত অস্ত্র কেনার চুক্তি থেকে তুরস্ককে সরে আসার মার্কিন আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এসব কথা বলেন।
কিন্তু কী আছে এই এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়- যার কারণে এটি এতটা গুরুত্ব পাচ্ছে সবার কাছে? বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই অস্ত্রটির এত আলোচনার জন্ম দিয়েছে দুটি কারণে এক- এটি প্রযুক্তিগতভাবে সর্বাধুনিক, দুই- এটি অনেক দেশের দীর্ঘদিনের মিত্রতার মাঝখানে হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক সাইমন ওয়াজেমান বলেন, ‘এস-৪০০ হচ্ছে এখন পর্যন্ত সর্বাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, পশ্চিমারা এখন পর্যন্ত যা তৈরি করেছে তার চেয়ে অনেক অগ্রসর এটি। এটির রাডার, ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা অন্যান্য সেন্সরের ক্ষমতা অনেক বেশি। এটির রাডার ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকার ওপর নজরদারি করতে পারে। এটির ক্ষেপণাস্ত্রের সীমা ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এটি লক্ষবস্তু নির্ধারণেও অনেক নির্ভুল।’
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই এই অস্ত্রটি স্থাপন করা, প্রস্তুত করা ও ফায়ার করা যায়। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেয়া যায় সহজেই।
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের সামরিক বিশ্লেষক কেভিন ব্রান্ড বলেন, ‘এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটি হলো একের মধ্যে অনেক গুনাগুণ সমৃদ্ধ। এটি দিয়ে দূর পাল্লা, মাঝারি পাল্লার এমনিক স্বল্প পাল্লার রকেট ছোড়া যায়। এটি নির্ভর করবে ব্যবহারকারীর ইচ্ছের ওপর’।
এই বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি সড়ক পথে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেয়া যায়, যেমনটা চায় বেশির ভাগ দেশ’। সেই সাথে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এই অস্ত্রটি হয়তো বিশ্বকে বিপজ্জনক কোন পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে যেতে পারে। এর একটিই কারণ, মার্কিন মিত্ররাও এখন ঝুঁকছে রাশিয়ার এই অস্ত্রের দিকে। যেটি পছন্দ নয় ওয়াশিংটনের।
এস-৪০০ একই সময়ে ৩৬টি লক্ষবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এমনকি একই সময়ে ৭২টি রকেট ছুড়তে সক্ষম। এ আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায় একটি যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ পোস্ট, তিনটি সমন্বয়কারী জ্যাম-প্রতিরোধী পর্যায়ক্রমিক অ্যারে রাডার, বিমানের লক্ষ্যমাত্রা শনাক্ত করা, আটটি বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র কমপ্লেক্স (১২টি ট্রান্সপোর্টার-লঞ্চার, একটি বহু-কার্যকরী চার আলোকসজ্জা ও শনাক্তকরণ রাডার) যুক্ত রয়েছে। এছাড়া এটি একটি প্রযুক্তিগত সহায়তা ব্যবস্থা, একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরিবহন যানবাহন ও একই সঙ্গে এটি প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা।
এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার প্রথম দিকের ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে ন্যাটো সদস্য তুরস্ক। গত আগস্টে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান এক বক্তৃতায় বলেছেন, তার দেশ যত দ্রুত সম্ভব এস-৪০০ স্থাপন করবে। আর রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০১৯ সালে তারা এই অস্ত্রটি সরবরাহ করতে পারবে।
আর ন্যাটো জোটের কোন সদস্য দেশ রাশিয়ার এই সর্বাধুনিক অস্ত্র কিনবে সেটিও পছন্দ নয় পশ্চিমাদের। যে কারণে তুরস্কের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। আর ভারত, সৌদি আরব কিংবা কাতারের মতো দেশগুলো ন্যাটোর সদস্য না হলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে কাছ থেকে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপে পড়তে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা