২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ইস্তাম্বুলের ভোট পুনঃগণনার ঘোষণা : জিতবে এরদোগানের প্রার্থী!

প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিপ এরদোগান - সংগৃহীত

তুরস্কের জাতীয় নির্বাচন বোর্ড ইস্তাম্বুল শহরের আট জেলার ভোট পুনরায় গণনার ঘোষণা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের রাজনৈতিক দল একে পার্টি ওই শহরের সব জেলার ভোট পুনঃগণনার দাবি জানানোর পর দেশটির জাতীয় নির্বাচন বোর্ড এ ঘোষণা দেয়। একেপি জোট ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে পুনঃগণনার দাবি জানায়। 

ইস্তাম্বুলের নির্বাচনে এরদোগানের নেতৃত্বাধীন দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একে পার্টি) সামান্য ব্যবধানে হেরে যায়। এই হার মেনে নিতে আপত্তি জানিয়ে ভোট পুনরায় গণনার দাবি জানায় এ কে পার্টি। পরে বুধবার দেশটির নির্বাচন বোর্ডের প্রধান সাদি গুভেন বলেছেন, ইস্তাম্বুলের আটটি জেলার ভোট আবারো গণনা করা হবে।
প্রাথমিক ফলে এ কে পার্টিকে সামান্য ব্যবধানে হারিয়ে নির্বাচনে জয় লাভ করে প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি। দলটি বলছে, নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে এ কে পার্টি অনৈতিক দাবি করেছে। আঙ্কারায় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে গুভেন বলেন, অবৈধ ভোট বাছাই করতেই পুনরায় গণনা করা হবে। তবে তাদের এই সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি বলছে, তুরস্কের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিপ এরদোগানের এ কে পার্টি স্থানীয় মেয়র নির্বাচনে দেশটির বৃহত্তম তিনটি শহর রাজধানী আঙ্কারা, ইস্তাম্বুল ও ইজমিরে হেরে গেছে; যা দেশটির আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোগানের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ দাখিলের জন্য এ কে পার্টিকে তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিল নির্বাচন বোর্ড; যা শেষ হয় বুধবার।

ভোট পুনঃগণনার সিদ্ধান্তকে সিএইচপির প্রার্থী একরাম ইমামোগলু ইস্তাম্বুলের জনগণের অপমান বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমরা ন্যায় বিচার চাই। জনগণ আমাদের ম্যান্ডেট দিয়েছে। বিশ্ব আমাদের দেখছে। বিশ্ব এই শহরটির নির্বাচন দেখেছে। তিনি অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ে দেশের সম্মানকে ক্ষতিগ্রস্ত না করার আহ্বান জানান।
অন্য দিকে এ কে পার্টির উপপরিচালক আলি ইহসান ইয়ভুজ বলেন, তার দল অবৈধ কিছু করছে না। ভোটের ব্যবধান ২০ হাজারের নিচে নেমে এসেছে। আমরা বিশ্বাস করি পুনঃগণনায় যে ফল আসবে তা সবাই মেনে নেবে।

আনাদোলুর প্রকাশিত বেসরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দেশটির বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলে মেয়র নির্বাচনে রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) কাছে একেবারে সামান্য ব্যবধানে হেরে গেছে এ কে পার্টি। শহরটিতে সিএইচপির প্রার্থী একরাম ইমামোগলু ৪৮ দশমিক আট শতাংশ ভোট পায়। আর এ কে পার্টির প্রার্থী বিনালি ইলদিরিম পান ৪৮ দশমিক পাঁচ শতাংশ। ভোটের ব্যবধান ২৫ হাজার।

সূত্র : আলজাজিরা

তুরস্কের নির্বাচনে ৭ শিক্ষা

তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচনে ১৯৯৪ সালে সূচিত হওয়া একেপির সাফল্য অক্ষুণœ রয়েছে। প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের জোট শতকরা ৫১ ভাগের বেশি ভোট পেয়েছে, যা বিরোধী দলগুলোর সম্মিলিতভাবে পাওয়া ভোটের চেয়ে বেশি। অবশ্য রাজধানীসহ প্রধান দুটি শহরে হেরে গেছে একেপি জোট। এ ঘটনা ক্ষমতাসীন দলটির ওপর মারাত্মক আঘাত বলে বিশ্লেষকদের মত। এই ফল থেকে কী শেখার আছে? নয়া দিগন্তের পাঠকদের জন্য এমনই সাতটি উল্লেখযোগ্য বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে এখানে।

অনিষ্টের মূল অর্থনীতি
এই নির্বাচনে এরদোগানের জোট একেপার্টি ও ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি-এমএইচপি ৫১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। কিন্তু রাজধানী আঙ্কারা, ইস্তাম্বুলসহ বড় শহরগুলোতে হেরে যায়। ফাউন্ডেশন ফর সোশ্যাল ডেমোক্র্যাসি-এসওডিইভি প্রকাশিত জরিপ অনুসারে নির্বাচনে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে হেরে যাওয়ার পেছনে বেকারত্ব ও জীবনযাত্রার খরচ ক্রমবর্ধমান থাকাকে দায়ী করা হয়েছে। সংস্থাটির মতে তুর্কি অর্থনীতি মন্দায় প্রবেশ করেছে। গত জানুয়ারিতে খাদ্যদ্রব্যের দাম আগের মাসের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।

আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলের ক্ষমতা পরিবর্তন
১৯৯৪ সালের পর প্রথমবারের মতো প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি-সিএইচপি তুরস্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি শহর আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলে বেসরকারিভাবে জিতেছে। সরকারিভাবে ফলাফল এখনো ঘোষণা করা হয়নি। তবে ইস্তাম্বুলে জিতেছে আট লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে। আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুল উভয় মহানগর এরদোগানের মেয়রদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এরদোগান নিজে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন। সেখানকার ভূমিকা তাকে প্রেসিডেন্ট হতে সহায়তা করে। এসওডিইভির মতে এই শহর হাতছাড়া হওয়া মানে তুরস্কের সমাজে সম্ভবত নতুন শক্তি তৈরি করা।

কুর্দিরা রাজা বানায়, কিন্তু তারাও কিছু শহরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে
কুর্দিশ পিপলস ডেমোক্র্যাসি পার্টি-এইচডিপি পশ্চিম ও দক্ষিণ তুরস্কে কোনো প্রার্থী দেয়নি। এটি নির্বাচনের ফলাফলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। তারা আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলে কামাল আতাতুর্কের সিএইচপি প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এটি বিরোধী দলকে জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরপরেও এরদোগানের ভূমিকার কারণে কুর্দি-সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের পাঁচটি শহরে এইচডিপি হেরে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, তিন বছর আগে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি-পিকেকে নিষিদ্ধ করা হলে তাদের সাথে এইচডিপির দূরত্ব তৈরি হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এইচডিপি মেয়র দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং মৌলিক পরিষেবা দিতে ব্যর্থ হন।

ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হেরেছেন এরদোগান
শহুরে বনাম গ্রামীণ এটি নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে। এরদোগান হেরেছেন ঘনবসতিপূর্ণ শহরে। বিশেষ করে প্রধান শহর যেমন আনাতোলিয়া, আদানা, মারসিন ও হাতায় শহরে তিনি হেরেছেন। কিন্তু জিতেছেন কম জনবসতিপূর্ণ গ্রামীণ শহরে। বালিকসির ও বিরসার মতো কয়েকটি শহরে সরকারি জোট সামান্য ব্যবধানে জিতেছে। ২০১৭ সালের সাংবিধানিক গণভোটের পর তুর্কি সরকার মহানগরীতে ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে বিরোধী দল দেশের সবচেয়ে ২০ জনবহুল শহরের অর্ধেকের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে।

পূর্বাঞ্চলে কমিউনিস্টদের শক্তি বাড়ছে
সবার নজর যখন ইস্তাম্বুলকে নিয়ে সেখানে ভোটাররা পূর্বাঞ্চলীয় শহর তানসেলিতে দেশের প্রথম কমিউনিস্ট মেয়র নির্বাচিত করেন। তুর্কি কমিউনিস্ট পার্টি-টিকেপি প্রার্থী ফাতিহ ম্যাকাগ্লু ব্যাপক ভোটে তানসেলির মেয়র নির্বাচিত হন। তার জয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তিনি কুর্দি সমর্থক এইচডিপির প্রার্থীকে হারিয়েছেন। ম্যাকাগ্লুর প্রতিশ্রুতি ছিল তিনি নাগরিকদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করবেন না। সিএইচপি থেকে আরেকজন কমিউনিস্ট রাজনীতিক আলপার তাস ইস্তাম্বুলের বায়োগলু জেলার এ কে পার্টির কাছে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হন।

এরদোগানের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন অক্ষুণ্ন
এত কিছুর পরও ভোটাররা প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রার্থীদের ৫১ ভাগ ভোট দিয়েছেন। এই ফলাফলটি গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডাটাগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি প্রমাণ করে যে, একটি অর্থনৈতিক মন্দা ও বাড়তি বেকারত্বের মধ্যেও এরদোগান তার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়। এরদোগান একটি অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির প্রতিশ্রুতি দেয়ার কারণে তার পক্ষে আবার বড় পরিবর্তন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তুরস্কের গণতন্ত্র এখনো স্থিতিশীল
যদিও তুরস্কের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক বিকাশ দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের দ্বারা তীব্র সমালোচিত হচ্ছে। তবুও তুর্কি জনগণ গণতন্ত্রের মৌলিক বিষয় ভোটাধিকার মুক্তভাবে প্রয়োগ করেছে। বিরোধী নেতারা বড় শহরগুলোতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য উপভোগ করেছে এবং দেখিয়েছে যে, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এরদোগানের ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে বিজয়ীকে পরাজিত করা সম্ভব।
সূত্র : মিডলইস্ট আই


আরো সংবাদ



premium cement
সংস্কারের কাজ দৃশ্যমান হলেই নির্বাচন হবে : মাহফুজ আলম সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার প্রাথমিক দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের : ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ‘রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো দল বা গোষ্ঠির নয়’ রোহিঙ্গারা এনআইডি নেয়ার অপচেষ্টা চালালে ইসিকে জানানোর আহ্বান আলিফের পরিবারকে এক কোটি টাকা দেবে শামসুল হক ফাউন্ডেশন জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যারাই যাবে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে : জামায়াত আমির এক সপ্তাহ পর বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচলের সিদ্ধান্ত সমন্বয়কদের ওপর হামলা হালকাভাবে দেখছে না সরকার কমছে ৪৭তম বিসিএসের আবেদন ফি গাজীপুরে কোরআন অবমাননার অভিযোগে কলেজছাত্র গ্রেফতার অযাচিত অস্থিরতা নয়, দায়িত্বশীল হোন

সকল