‘ইসলাম গ্রহণ করবেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো’
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৪ মার্চ ২০১৯, ১১:৪৫
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। এমনটি জানালেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভেনিজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে তার সাথে এক বৈঠকের সময় এ কথা বলেছিলেন মাদুরো।
মেভলুত জানান, গত বছর মাদুরো তাকে বলেছেন তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে পারেন।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ভেনিজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে মাদুরোর সঙ্গে বৈঠক হয়। ওইসময় উসমানিয়া খিলাফতের প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়ে নির্মিত টিভি সিরিজ ‘আরতুগ্রুল’ দেখার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন মাদুরো।
শুক্রবার তুরস্কের আলিনিয়া শহরের আলাদ্দিন কেইকুবাত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেয়ার এক পর্যায়ে এ কথা জানান কাভুসোগলু।
তিনি বলেন, এ সিরিজটির ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন মাদুরো। তিনি বলেন, এতে প্রকৃত ইসলামের কথা বলা হয়েছে। এ সিরিজটির জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে মাদুরো সে সময় বলেছিলেন, তিনি যে কোনোদিন মুসলমান হয়ে যেতে পারেন।
কাভুসোগলু বলেছেন, আমরা মাদুরোর এ ধরনের বক্তব্যে খুশি ও গর্বিত হয়েছি। তবে ঠিক কবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছেন মাদুরো সে সম্পর্কে কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
সূত্র : স্পুটনিক
আরো দেখুন : ভেনেজুয়েলা পরিস্থিতি কী বিশ্বসঙ্কটে পরিণত হচ্ছে?
বিবিসি, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯
ল্যাটিন অ্যামেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতি বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভেনেজুয়েলাকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ক্ষমতাধর দেশগুলো। এই পরিস্থিতি অনেকটাই যেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ‘কোল্ড ওয়ার’ বা স্নায়ু যুদ্ধের ছায়া হিসেবে দেখা দিয়েছে। চলমান আন্দোলনের মধ্যে, বুধবার দেশটির বিরোধী দলীয় নেতা জুয়ান গুয়াইডো নিজেকে নিজেই রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছেন।
আত্মস্বীকৃত রাষ্ট্রপতি গুয়াইডোকে এরই মধ্য রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সমর্থন করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট গুয়াইডোকে কাল বিলম্ব না করেই সমর্থন দিয়েছে কানাডা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও আর্জেন্টিনা।
আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন করে নির্বাচনের দাবী জানিয়েছে। তবে, তাদের সমর্থনও গুয়াইডোর দিকেই গেছে।সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অদ্ভুত ঘোলাটে হয়েছে।
রাশিয়া ও চীনের সমর্থন মাদুরোর দিকে
ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক সংকটের ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে রাশিয়া ও চীনের অংশগ্রহণে। ক্ষমতাধর এই দুই দেশ প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে। রাশিয়া ও চীনের মতই মাদুরোকে সমর্থন দিয়েছে তুরস্ক, ইরান, মেক্সিকো, কিউবা ও অন্যান্য আরো কয়েকটি দেশ।
একদিকে, গুয়াইডো দেশটির আত্মস্বীকৃত রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। অন্যদিকে, তাকে প্রকাশ্যে নিরঙ্কুশ সমর্থন জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবারে এলো রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ায়।
আত্ম-স্বীকৃত রাষ্ট্রপ্রধানের দিকে ইঙ্গিত করে রাশিয়া বলেছে, ‘এর ফলে [ভেনেজুয়েলা] অরাজকতা ও রক্তক্ষয়ের দিকে যাবে’। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এই ঘটনার ‘পরিণতি হবে সর্বনাশা’।
একই দিনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর ‘অনধিকার হস্তক্ষেপ’ বা নাক গলানোর বিষয়ে তারা ঘোর বিরোধী।
ভেনেজুয়েলার ‘জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও স্থিতিশীলতাকে সুরক্ষা দিতে’ চীন ভেনেজুয়ালের পাশে আছে বলেও জানানো হয়েছে।
নিকোলাস মাদুরোকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সমর্থন জানিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান। তিনি তাকে ‘ভাই মাদুরো’ বলে সম্বোধন করে তার পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন।
এমনকি কালিন ইংরেজিতে ‘উই আর মাদুরো’ বা ‘আমরা মাদুরো’ লিখে হ্যাশট্যাগ দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ভেনেজুয়েলা
ভেনেজুয়েলা ও যুক্তরাষ্ট্রের অফিসিয়াল কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে একে অপরকে দোষ চাপানো চলছে। গুয়াইডোকে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকৃতি দেবার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সকল প্রকার কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মাদুরো।
সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়ে মার্কিন সকল কূটনৈতিককে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভেনেজুয়েলা ছেড়ে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এই নির্দেশের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ভেনেজুয়ালার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার্থে তারা আর মাদুরো সরকারের সাথে নয়, বরং গুয়াইডোর মাধ্যমে যোগাযোগ করবে।
‘সকল উপায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে’
ভেনেজুয়েলায় ‘সামরিক উপায়’ গ্রহণের বিষয়ে ২০১৭ সালে প্রথমবার উল্লেখ করেছিলেন মি. ট্রাম্প। এবার এই চলমান সংকটকালে আবারো একই রকম বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এখনি কোনো কিছুর পাকা সিদ্ধান্ত আমরা নিইনি কিন্তু সম্ভাব্য সকল উপায়ের কথাই ভেবে দেখা হচ্ছে।’
মার্কিন গণমাধ্যমগুলোতে এই মর্মে খবর প্রকাশ হচ্ছে যে, ট্রাম্প হয়তো ভেনেজুয়েলার উপরে তেল নিয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছেন। কারণ ভেনেজুয়েলার রাজস্বের প্রধান উৎস তেল ক্ষেত্র।
গত মাসেই রাশিয়ার সাথে বড় অঙ্কের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভেনেজুয়েলা। এই চুক্তিতে রাশিয়া থেকে গম রপ্তানি এবং ভেনেজুয়েলার তেল ও মাইনিং খাতের উপরে জোর দেয়া হয়েছে।
সমন্বিত পদক্ষেপ
ভেনেজুয়েলাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর ক্ষমতাধর দুই পরাশক্তি মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। তবে, ভেনেজুয়েলার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো ভূমিকা নিলে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সরাসরি দ্বন্দ্ব এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গুয়াইডোকে আঞ্চলিক নেতারা যেভাবে সমর্থন জানিয়েছেন তাতে করে এটিকে একটি 'সমন্বিত' প্রচেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন বিবিসির ভ্লাদিমির হার্নান্দেজ। চলমান রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হবার বেশ আগেই যুক্তরাষ্ট্র ও কলম্বিয়ার দিকে সন্দেহের আঙ্গুল তুলেছিলেন মাদুরো। তাঁকে সরাতে এই দুই দেশের প্রচেষ্টার বিষয়ে তিনি প্রকাশ্যেই অভিযোগ এনে এমনকি সুইৎজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের বৈঠকেও কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান ডিকিউ বলেছিলেন, "মাদুরোকে সরিয়ে ভেনেজুয়েলার মানুষকে মুক্ত করার" কথা উল্লেখ করেছিলেন।
কোনো হস্তক্ষেপ নয়
ভেনেজুয়েলার বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করণীয়? সামরিক হস্তক্ষেপই কি উপায়? এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল কলম্বিয়ান প্রেসিডেন্ট ডিকিউয়ের কাছে। উত্তরে, সামরিক হস্তক্ষেপ নয় কূটনৈতিক পদক্ষেপের কথা ভাবছেন বলে জানালেন তিনি। ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যামিলটন মোরাও বলেছেন, তার দেশ কোনো দেশে সামরিক হস্তক্ষেপে অংশগ্রহণ করে না।
তবে, ২০১৮ সালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজের নির্বাচনী প্রচার কাজের সময় তিনি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক শান্তি স্থাপন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ভেনেজুয়েলাতে ব্রাজিলের সেনা মোতায়েন করা উচিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা