এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা
- জর্ডান নিউজ এজেন্সি
- ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:৪৬
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স তুরস্ককে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, আঙ্কারা সরকার যদি রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনে তাহলে ওয়াশিংটন অলসভাবে বসে থাকবে না। তিনি বলেন, তুরস্ক এ কাজ করলে ন্যাটো সামরিক জোটের অন্য সদস্যরা বিপদের মুখে পড়বে।
মাইক পেন্স এ ইস্যুটি জার্মানির মিউনিখ শহরে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সম্মেলনে তুলেছেন। তিনি বলেন, এ চুক্তি বাতিল করার জন্য আমেরিকা তুরস্কের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে। আমাদের মিত্ররা যদি প্রাচ্য থেকে অস্ত্র কেনার বিষয়ে ঝুঁকে পড়ে তাহলে পশ্চিমা মিত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না।
এর আগে আমেরিকা রাশিয়া থেকে এস-৪০০ কেনার বিষয়ে তুরস্ককে দুইবার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে কিন্তু আঙ্কারা তা মানেনি। সর্বশেষ সময়সীমা শেষ হয়েছে ১৫ ফেব্রুয়ারি। এরপর মাইক পেন্স তুরস্ককে সতর্ক করলেন। তুরস্ক আমেরিকার কাছ থেকেও পেট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে আগ্রহী। তবে রাশিয়া থেকে এস-৪০০ কেনার চুক্তি বাতিল করবে না বলে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে।
আরো দেখুন : এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ : বর্তমান বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা
বর্তমানে রাশিয়ার সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির বিমানবিধ্বংসী ও ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী ব্যবস্থা এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ। এস-৪০০ বর্তমানে সবচেয়ে অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এস-৩০০ এর উত্তরসরি ও আপগ্রেড ভার্সন এই এস-৪০০, এই সিস্টেমটা -স্টেলথ, সেমি স্টেলথ, বোমারু বিমান, জনহীন বিমান (ড্রোন), দ্রুত গতির জেট এবং ক্রুজ মিসাইল ধ্বংসে সহায়তা করবে। এ ক্ষেপণাস্ত্র চারশ' কিলোমিটার দূরের বিমান এবং ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশে থাকা অবস্থায় ধ্বংস করে দিতে পারে বলে দাবি করা হচ্ছে। মার্কিন নির্মিত এমআইএম-১০৪ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র থেকে আড়াইগুণ বেশি দূরত্বে আঘাত হানতে পারে এই এস-৪০০ সিস্টেম।
ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে সর্বাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ কিনতে যাচ্ছে। যার মাধ্যমে ভারত চীন ও পাকিস্তানের মতো পরমানু ক্ষমতা সম্পন্ন দেশগুলোর বিপক্ষে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে। এদিকে, ওয়াশিংটন মস্কোর বিরুদ্ধে কাউন্টারিং আমেরিকাস অ্যাডভাসারিস থ্রু স্যাঙ্কশনস অ্যাক্ট (সিএএটিএসএ) আরোপ করেছে। যার একটি ধারায় বলা হয়েছে রাশিয়া থেকে যদি কোন দেশ উচ্চমূল্যের সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করে তবে সেই দেশের উপর অবরোধ আরোপ করা হবে। তবে সিএএটিএসএ অবরোধ ভারতের উপর আরোপ করা হবে কিনা তা নিয়ে নয়া দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে এই ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবস্থা চীন তাদের প্রতিরক্ষায় স্থাপন করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তাদের সামরিক বহরে যুক্ত কতে যাচ্ছে। চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ এর আদ্যোপান্ত:
১. ১৯৯০ সালে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি বিশ্বের অন্যতম এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ তৈরি করে। ২০০৭ সালের ১ লা জুলাই রাশিয়ান আর্মড ফোর্স ইলেকট্রোস্টাল শহরের কাছে সর্বপ্রথম এস-৪০০ মিসাইল স্থাপন করে।
২. এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ কেবলমাত্র একটি ক্ষেপণাস্ত্র নয়। এটি আসলে স্বয়ংসম্পূর্ণ আকাশসীমা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
৩. এতে ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্রের লঞ্চিং প্যাড, ক্ষেপণাস্ত্রবাহী গাড়ি, শক্তিশালী রাডার এবং স্বয়ংক্রিয় আক্রমণে প্রতিপক্ষকে বিপর্যস্ত করার সমস্ত রকমের বন্দোবস্ত।
৪. এর রাডার এতটাই শক্তিশালী যে স্টেলথ্ ফাইটার অর্থাৎ গোপনে আক্রমণকারী যুদ্ধবিমানের হামলাকেও রুখে দিতে সক্ষম এই স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
৫. এর ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৪০০ কিলোমিটার। যে কোনও অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক মিসাইলেরও হামলা রুখে দিতে সক্ষম।
৬. এই বিশেষ ব্যবস্থা একসঙ্গে ৩০০ টি টার্গেটে নজর রাখতে পারে।একসঙ্গে ৩৬ টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ৩৬টি আলাদা আলাদা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
৭. এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের গতি ৪.৮ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড এবং ১৭০০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা।
৮. ভারত ৩৯০০০ কোটি টাকা খরচ করে এই অত্যাধুনিক এয়ারডিফেন্স সিস্টেমের ৫ টি ইউনিট নিতে চাচ্ছে।
৯. ভারতের উত্তর ও পশ্চিম সীমান্তে প্রতিপক্ষের আগ্রাসনের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। সেদিকেই মোতায়েন করা হতে পারে বিশেষ এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ।
১০. এস-৪০০ কে বর্তমানে সবচেয়ে অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা