১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পর্যটকদের ডাকছে চর বিজয়

চর বিজয় - নয়া দিগন্ত

পটুয়াখালীর বিখ্যাত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পুলিশ বক্সের সামনেই হ্যান্ডমাইক হাতে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে আছেন কয়েক ব্যক্তি। তাদের পেছনে ঝুলানো রয়েছে একটি ব্যানার। যেখানে লেখা আছে সুন্দরবন ট্যুর, চর বিজয়, ফাতরার বন ট্যুরসহ একাধিক টুরিস্ট স্পটের নাম। ভ্রমণে আকৃষ্ট করার জন্য এ ধরনের প্রচারণা মোটেই আকর্ষণীয় নয়। তবে যারা এরপরও মনের জোর নিয়ে এবং সাহস দেখিয়ে চর বিজয়ে যাবেন তারা নিশ্চয়ই বারবার ঘুরতে যাবেন এই নতুন পর্যটন স্পটটিতে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরের বুকে এই চর বিজয়।

চর বিজয় এখন পর্যটকদের জন্য নতুন গন্তব্যের স্থান। চারদিকে সাগর-বেষ্টিত ও পরিচ্ছন্ন এই চর বিজয় সব পর্যটককেই মুগ্ধ করেছে। এই পর্যটন স্পটটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর। বিজয়ের মাসে এই পর্যটন স্থানটির আনুষ্ঠানিকতা পাওয়ায় দ্বীপের নাম দেয়া হয়েছে চর বিজয়। আগে এই স্থানটির নাম ছিল হাইলের চর।

সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার জেলেরা জানায়, ২০০৫-৬ সালের দিকে এই চরটি জেগে ওঠে। তবে পর্যটকদের যাওয়া শুরু হয়েছে ২০১৭ সাল থেকে।

গোলাকৃতির এই চর বিজয়ের আয়তন ২২২ একর। বর্ষাকালে দ্বীপটির বেশিভাগই পানির নিচে থাকে।

ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এই নতুন পর্যটন স্পটটিতে যাওয়ার জন্য আদর্শ সময় শীতকাল, অর্থাৎ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ তথ্য জানিয়েছেন নিয়মিত চর বিজয়ে যাত্রী বহন করা স্পিডবোটচালক জাহিদ হোসেন।

যদিও অন্য একজন জানান, মার্চ মাস পর্যন্ত যাওয়া যায় এই চর বিজয়ে। শীতকালে সাগর সবসময় পুরোপুরি শান্ত থাকে না। ফলে এ সময়ও চরটির বিভিন্ন স্থান পানিতে ডুবে থাকে। তবে সে পানির উচ্চতা দুই ইঞ্চি থেকে এক ফুটের বেশি নয়।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের ঘাট থেকে চর বিজয়ে স্পিডবোর্ড অথবা ট্রলারে যাওয়া যায়। স্পিডবোটে যেতে সময় লাগে ২৫ মিনিট। ট্রলারে যেতে সময় নেয় দেড় থেকে দু’ঘণ্টা। স্পিডবোট প্রতিবারে আটজন যাত্রী বহন করে। স্পিডবোটে জনপ্রতি ভাড়া নেয় এক হাজার টাকা করে। ট্রলার সর্বোচ্চ ৩৫ জন যাত্রী বহন করতে পারে। এ জন্য প্রত্যেককে গুণতে হয় ৫০০ টাকা করে। অবশ্য চার হাজার টাকায় স্পিডবোট রিজার্ভ নেয়া যায়।

শীতকালে সাগর উত্তাল থাকলে তখন যাওয়া যায় না। আমরাও প্রথম দিন এই কারণে যাত্রা বাতিল করেছিলাম। শীতকালের যে দিনগুলোতে সাগর শান্ত থাকে তখনই যাওয়া যায় এই নয়নাভিরাম পর্যটন স্পটটিতে। চরে যাওয়ার সময় সাগরের ঢেউ মনের মধ্যে কিছুটা ভয় ধরিয়ে দিলেও পৌঁছানোর পর চরের বিস্তীর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ, অতিথি পাখি এবং স্থানীয় সামুদ্রিক পাখিদের কলকাকলি মুহূর্তেই দূর করে দেবে সেই আতঙ্ককে।

পর্যটকরা ইচ্ছে করলে পুরো চরটাই ঘুরে দেখতে পারেন। এ জন্য ঘণ্টাখানেক সময় লাগবে। পাখিগুলো অবস্থান করে পানি এবং চরের মিলনস্থলে। বিস্তীর্ণচরের বিভিন্ন অংশ-জুড়ে সামান্য পানিতে ভেসে থাকতে দেখা যায় হাজার হাজার ছোট মাছ। জেলেরা এখানে জাল পেতে রাখেন মাছ ধরার জন্য। লাল কাঁকড়ার দেখাও মিলতে পারে। যদিও আমরা লাল কাঁকড়া দেখতে পারিনি।

এই চরের উপস্থিতি প্রায় ২০ বছর। তবে এখনো পর্যন্ত এখানে কোনো গাছপালা উঠেনি। মাঝে বনবিভাগের উদ্যোগে কিছু ঝাউগাছ লাগানো হয়েছিল। যদিও সেই গাছগুলো এখন মরে গেছে। চর বিজয়ে থাকার কোনো পরিবেশ নেই, অর্থাৎ এখানে কোনো লোকালয় বা জেলে পল্লী নেই। তাই রাত্রিযাপনের সুযোগ এখানে নেই। সন্ধ্যার আগেই পর্যটকদের এখান থেকে ফিরে আসতে হয়। ট্রলার বা স্পিডবোটচালকেরা পর্যটকদের সর্বোচ্চ দেড় থেকে দু’ঘণ্টা সময় দেয় দ্বীপটি ঘুরে দেখার জন্য।

এখন পর্যন্ত পরিচ্ছন্ন রয়েছে এই চর বিজয়। কোনো প্লাস্টিক, পানির বোতল কিংবা খাবারের উচ্ছিষ্ট সেখানে দেখা যায় না। তাই পর্যটন স্পটটিতে এখনো প্রাকৃতিক পরিবেশ বিরাজমান। একইসাথে চারপাশ থেকে আসা সাগরের বাতাস পর্যটকদের জন্য আরো উপভোগ্য করে তুলেছে এই স্থানটিকে। যদিও একসময় হয়তো এই পরিচ্ছন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ আর থাকবে না। এমনটাই আশঙ্কা বরিশাল থেকে যাওয়া পর্যটক তন্ময় সাহার।

তিনি জানান, এই স্থানটি এখনো নিরিবিলি এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আছে। কিন্তু যদি মাত্রাতিরিক্ত পর্যটক আসতে থাকেন ও পরিবেশ দূষণ হতে থাকে তাহলে একসময় এখানে এই শীতের পাখিগুলোকে আর দেখা যাবে না।
পর্যটক তৃষ্ণা রানী হালদারের অনুরোধ, কেউ যেন এই চর বিজয়ে এসে কোনো খাবারের উচ্ছিষ্ট কিংবা প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলে না যায়।

তার মতে, এটি সৃষ্টিকর্তার একটি অসাধারণ উপহার।

আরেক পর্যটক রোকসানা আক্তার চর বিজয়ের সৌন্দর্যে অভিভূত। তিনি বলেন, ‘এখানে এসে মনে হচ্ছে আমি একেবারে প্রকৃতির সাথে মিশে গেছি।’

তবে আফসোস করতে দেখা গেল আরেক পর্যটক অভিজিৎকে। কারণ তিনি আশা করেছিলেন এখানে এসে লাল কাঁকড়ার দেখা পাবেন। কিন্তু লাল কাঁকড়ার সাক্ষাৎ তিনি পাননি। তবে অতিথি পাখি দেখার পাশাপাশি জেলেদের কাছ থেকে দু’টি মাছ নিতে পেরে বেশ উৎফুল্ল তিনি। এর একটি ছিল লাক্ষা মাছ, অন্যটি ইলিশ মাছ।
চর বিজয়ে স্পিডবোট বা ট্রলার থেকে নামার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ঘাট নেই। ফলে স্পিডবোট বা ট্রলার থেকে পানিতে নেমে হাঁটুপানি ডিঙ্গিয়ে চরে পৌঁছাতে হয় পর্যটকদের। সাগরের পানি ডিঙ্গিয়ে চরে পৌঁছানোটাকে অনেকে উপভোগ করেন, অনেকেই আবার বিরক্ত হন। তবে সবারই অনুরোধ, কর্তৃপক্ষ ও পর্যটকের সাথে স্থানীয়রা মিলে যেন এই চর বিজয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটাকে ধরে রাখেন।


আরো সংবাদ



premium cement
বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান হলেন জয়নুল আবেদীন পূর্বাচলে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিহত ২ বাশার আল-আসাদের পতনের পর দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে প্রথম বিমান উড়ল জয়পুরহাটে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান বাংলাদেশকে ৬০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে এডিবি ইতালি বা জার্মানিতে হবে নেশন্স লিগের ফাইনাল জলবায়ু বাজেটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : পরিবেশ উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ২৬ শতাংশ রেমিট্যান্স বেড়েছে : আসিফ নজরুল জামায়াতে ইসলামীর সাথে নেজামে ইসলাম পার্টির মতবিনিময় টঙ্গী ইজতেমা ময়দান ছাড়ছেন সাদপন্থীরা অতীতের সরকার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে : ড. রেজাউল করিম

সকল