গহীন পাহাড়ের বুকে দামতুয়া ঝরনা
- মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান)
- ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৫
পার্বত্যাঞ্চলের প্রাচীন জনপদ আলীকদমের সবুজ অরণ্যের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে অসংখ্য ঝিরি, ঝরনা-জলপ্রপাত। এর মধ্যে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি দেশের পর্যটকদের নজর কেড়েছে দামতুয়া ঝরনা ও ব্যাঙ ঝিরি। প্রকৃতির অপরূপ নিদর্শন এ ঝরনার উপচেপড়া ভরা যৌবন দেখার মোক্ষম সময় বাংলা বর্ষপঞ্জির দ্বিতীয় ঋতু-আষাঢ়-শ্রাবণে।
তবে এ দু’মাসে বর্ষাকাল ব্যাপৃত থাকলেও বর্ষার আগের ঋতু রৌদ্রতপ্ত গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষার পরের ঋতু শ্যামল শরৎকালেও এই নান্দনিক ঝরনার প্রবাহ থাকে অটুট। শুধু দামতুয়া ঝরনাই নয়, বর্ষায় দেশের সব ঝরনাই টিকরে পড়ে যৌবনস্রোত! তেমনিভাবে সবুজ পাহাড়ের অন্তর্বিহীন মৌন নিস্তব্ধতায় দামতুয়া ঝরনা যেন আঁচল বিছিয়ে দেয় পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানাতে! সবুজের টানে প্রাণের উচ্ছ্বাসে দেশের নানাপ্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত দামতুয়া দেখতে ছুটে আসে পর্যটকরা।
দামতুয়া ঝরনা নামকরণ
মুরুং ভাষায় দামতুয়া ঝরনা পুরো নাম ‘তুক-অ-দামতুয়া’। ‘তুক’ অর্থ ব্যাঙ এবং ‘অ’ অর্থ ঝিরি। ‘দাম’ অর্থ মাছ আর ‘তুয়া’ অর্থ খাড়া আকৃতির দেয়াল। এ ঝিরিতে একসময় প্রচুর ব্যাঙ পাওয়া যেত। তাই ঝিরির নাম ‘তুক-অ’ বা ব্যাঙ ঝিরি। দামতুয়া ঝরনার পানি একটি খাড়া দেয়াল বেয়ে নিচে নেমে পড়েছে। খাড়া দেয়ালের কারণে ‘দাম’ বা মাছ ‘তুয়া’ অর্থাৎ খাড়া দেয়ালের কারণে ওপরে উঠতে পারে না। তাই এ ঝরনাটির নাম মুরুং ভাষায় ‘তুক-অ-দামতুয়া’। সংক্ষেপে ‘দামতুয়া’।
অবস্থান
আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের গহীন অরণ্যে অবস্থিত দামতুয়া ঝর্না। আলীকদম-থানচি সড়কের ১৭ কিলোমিটার পয়েন্টের আদু মুরুং পাড়া থেকে ছয়-সাত কিলোমিটার দূরে দামতুয়া ঝরনা ও ব্যাঙ ঝিরির অবস্থান।
প্রকৃতির বিস্ময়:
সুবিশাল পাহাড়ি প্রকৃতির মাঝে থাকা এ ঝরনাটি পর্যটকদের নজরে আসে ২০১৭ সালের শেষের দিকে। এর আকার-আকৃতি ও গঠনশৈলী মনোমুগ্ধকর। পার্বত্যাঞ্চলের অন্যান্য নান্দনিক ঝরনা দিক থেকে নিঃসন্দেহে এটি অন্যতম।
দামতুয়া ঝরনার ওপরে ব্যাঙ ঝিরি জলপ্রপাতটিও খুবই মনোহর। এর পাথুরে মাটির ধাপগুলো বিস্ময়কর। যেন সুদক্ষ রাজমিস্ত্রির নিপুন হাতে সৃষ্ট কোনো আল্পনা! এর অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধাপ প্রমাণ করে যে এটি প্রকৃতির খেয়ালে গড়া অসাধারণ একটি স্থাপত্যশৈলী!
দামতুয়া ঝরনায় দু’দিকের খাড়া পাহাড়ি দেয়াল বেয়ে কলকল রবে সুরের অনুরনণ তুলে উন্মাতাল স্রোত গড়িয়ে পড়ছে নিচের গভীর জলাশয়ে। পাহাড়ের নিস্তব্ধতা যেন সেখানে ম্লান। উঁচু থেকে পড়া পানির কিছু অংশ আবার জলীয়বাষ্প হয়ে বাতাসে মিশে সেখানে এক ধোঁয়াশাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এ যেন পাহাড়ের গভীরে মেঘমালা!
দামতুয়ায় পৌঁছার আগে দেখা মিলবে ওয়াংপা ঝরনার। মূল ‘ওয়াংপা ঝরনা দেখতে হলে খাড়া পাহাড় বেয়ে নিচে নামতে হয়। পথের মাঝে অসংখ্য ছোট বড় পাথরের ভাজে শীতল পানি যেন জানান দেয় ওয়াংপা ঝরনার স্রোত কেমন হবে। ওপর থেকে ওয়াংপা ঝরনার পানি গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য আরো মনোহর লাগে।
প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। রাতে যদিও সেখানে অবস্থান করা নিরাপদ নয়। তবে ভরা পূর্ণিমায় তাবু খাটিয়ে অবস্থান করলে বুঝা যাবে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বাসে সহজেই এখন আলীকদম আসা যায়। আলীকদম-থানচি সড়কের ১৭ কিলোমিটারের আদু মুরুং পাড়ায় নেমে দু’-তিন ঘণ্টা হাঁটতে হয়। এরপর দামতুয়ার দেখা মেলে। দামতুয়ায় নামতে হলে খাড়া পাহাড়ের কিছুটা পথ ডিঙ্গিয়ে নিচে নামতে হয়। পাশের জলপ্রপাতের মাটি পাথুরে। সেখানে নামতে তেমন সমস্যা হয় না। ঝরনা ও জলপ্রপাতের নিচে মাঝারি ধরনের জলাশয় আছে।
থাকার জায়গা
আলীকদমে উপজেলা থাকার জন্য দামতুয়া, অর্কিড, মারাইংতং রিসোর্ট, রূপমুহুরী রিসোর্টসহ সরকারি রেস্ট হাউজ রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা