ডাক্তার
- জোবায়ের রাজু
- ১৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০
বাপ্পি যখন দম ফাটানো কাশ মারে, তখন যেন পুরো ঘর কেঁপে ওঠে। রোগ চিকিৎসায় বাপ্পির বরাবরই অনাগ্রহ। কেননা সে অলস প্রকৃতির ছেলে। চিকিৎসা করব করব করেও করা হয় না। ফলে কাশের তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলছে। রফিকুল ইসলাম ছেলের এই কাশের ভয়াবহতা দেখে চিন্তায় পড়লেন। না জানি ছেলেটার কাশ যক্ষ্মার দিকে চলে যায় কি না!
ছেলের রোগ নিরাময়ের জন্য রফিকুল ইসলাম একজন ভালো ডাক্তারের সন্ধান পেলেন। ডাক্তার সেলিম। ইতোমধ্যে ডাক্তার সেলিমের উপযুক্ত চিকিৎসায় অনেক রোগী আরোগ্য লাভ করেছেন। তার চেম্বার একটা মেডিক্যাল হলে। রফিকুল ইসলাম ছেলেকে ডাক্তার সেলিমের শরণাপন্ন হতে উপদেশ দিলেন।
২.
মেডিক্যাল হলে আজ রোগীর আনাগোনা কম। তাই কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই বাপ্পি ডাক্তার সেলিমের চেম্বারে ঢুকে পড়ল। ডাক্তার সেলিমকে দেখে বাপ্পি চমকে ওঠে। গত তিন বছর ধরে সে এই ভদ্রলোককে ফেসবুকে দেখে আসছে। ডাক্তার সেলিমও বাপ্পিকে দেখে সহজে চিনে ফেলল।
‘আরে, আপনি বাপ্পি না?’
‘জী জী। আপনি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড। বাট জানতাম না আপনি একজন ডাক্তার।’
‘হা হা হা। আমি এই মাসেই পোস্টিং নিয়ে আপনাদের এখানে এসেছি।’
‘আচ্ছা।’
‘বসুন।’
বাপ্পি বসল এবং খেয়াল করল ডাক্তার সেলিম খুবই আন্তরিক। বেশ মিষ্টিভাষীও। খুব আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইছে বাপ্পির রোগ বর্ণনা। বাপ্পি তার ভয়াবহ কাশের সারমর্ম শোনায়। ডাক্তার সেলিম নিজ চোখেও দেখেছেন বাপ্পির তীব্র কাশের নমুনা। কাশ ছাড়তে যেন তার জান বের হয়ে যাচ্ছে।
ডাক্তার সেলিম জানতে চাইলেন, ‘আপনি কি সিগারেট খান?’
চোখ কপালে তুলে বাপ্পি বলল, ‘না না। কখনোই না।’
ডাক্তার সেলিম আবার প্রশ্ন ছোড়েন, ‘ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার খান? মানে আইসক্রিম, কোক, সেভেন আপ এসব?’
বাপ্পি মনে মনে বলেÑ বাপরে বাপ, আসতে না আসতে আপ্যায়নের এত প্রস্তুতি!
‘কী হলো মিস্টার বাপ্পি, ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার খান নাকি?’
‘না থাক। লাগবে না এখন ওসব।’
‘কোন সব?’
‘এই যে ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার খাই কি না জানতে চাইছেন। দয়া করে কষ্ট করে এসব এখন আনাবেন না। কিছুক্ষণ আগে বাসা থেকে খেয়ে এসেছি।’
‘হা হা হা।’
‘হাসছেন কেন?’
‘আপনি কিভাবে শিওর হলেন ওসব এখন আনাব?’
‘তাহলে ওসব খাবার খাই কি না, জানতে চাইছেন যে?’
‘চিকিৎসার জন্য জানতে চাইছি। লক্ষ করলাম আপনার প্রচুর কাশি। তাই ভাবলাম ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার খেয়ে এমন কাণ্ড বাঁধিয়েছেন।’
‘ইয়ে মানে!’
ভীষণ লজ্জা পেল বাপ্পি। লজ্জায় ডাক্তার সেলিমের সামনে তার মাথা কাটা পড়ছে।হ