২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পিংক কালারের বই

-

ফেসবুকে লিখতে লিখতে হঠাৎ একদিন নিজেকে লেখক লেখক মনে হতে লাগল। ছড়া, কবিতা, গল্প, জোকস কিছুই বাদ রাখি না। যা মনে আসে হুটহাট করে লিখে ফেলি। আর ফেসবুকে অজস্র লাইক, কমেন্টের বন্যা বয়ে যায়। আহা অনবদ্য, কী চমৎকার, ওয়াও, দারুণ লেখা তো, ভাইয়া আমি আপনার বিরাট বড় ফ্যানÑ এসব তেল মার্কা কমেন্টে বেশ আনন্দ পাই। মনে হয় আমি এক বিরাট সেলিব্রেটি।
একদিন এক প্রকাশক আমাকে ফেসবুকে নক করে বললেন, স্যার আমি উরাধুরা প্রকাশনার মালিক আবুইল্লা, আপনার ফোন নম্বরটা দিন। আমি ফোন নম্বর দিতেই প্রকাশক কল দিয়ে সালাম কালাম দিয়ে বলল, আমি আপনার একটা বই বের করতে চাই। কথা শুনে তো আমি পুরাই থ। আমিও একজন লেখক? আমারও বই হবে? প্রকাশকের কথায় নিজেকে বেশ বড় লেখকই মনে হচ্ছে। এ যুগে প্রকাশকরা নিজের টাকায় নতুন লেখকের বই করবে তা তো ভাবাই যায় না। তার ওপর আবার প্রকাশক নিজেই যেখানে উৎসাহী। অথচ শুনেছি প্রকাশকদের পেছনে ধরনা দিতে দিতে নাকি নতুন লেখকদের জুতার তলা থাকে না। আর এ তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। যাহোক, আমি ভাব নিয়ে বললাম, বই তো আমিও করতে চাই কিন্তু মানুষ কি আমার বই পড়বে? প্রকাশক বললেন, কী বলেন স্যার? ফেসবুকে আপনার হাজার হাজার লাইক, কমেন্ট দেখে কি তা বলার অবকাশ রাখে? বই অবশ্যই বিক্রি হবে। তার পর আমি বললাম, তা বটে। তবে একটা সমস্যা হলো, আমার আসলে এখনো একটা বিষয়ে সে পরিমাণ লেখা হয়নি যে একটা বই করতে পারি। কিছু ছড়া, কিছু কবিতা, কিছু গল্প, কিছু জোকস এমন আছে। প্রকাশক বলল, তাতে কী? সব মিলিয়ে একটা বই করে ফেলব। আপনি অনুমতি দিলে আপনার টাইমলাইন থেকে সবগুলো লেখা নিয়ে বইমেলার আগেই একটা বই বের করে ফেলতে চাই। আপনি একটা পোস্ট করে দিলে বইমেলায় ধুমসে বিক্রি হবে। আমি বললাম, না, না। সব মিলিয়ে আবার বই হয় নাকি? হয় ছড়া-কবিতার, না হয় গল্প বা জোকসের বই হতে পারে। কিন্তু সব মিলিয়ে করলে কেমন জগাখিচুড়ি হয়ে যায় না? প্রকাশক বললেন, গুড আইডিয়া স্যার! বইটা জগাখিচুড়ি নামে করলে মনে হয় আরও বেশি কাটতি হবে। আপনি অনুমতি দিয়ে দিন স্যার। আমি তো এমনিতেই এক পায়ে খাড়া। এতণ তো জাস্ট প্রকাশকের সাথে ভাব নিলাম। আবারো ভাব নিয়ে বললাম, আচ্ছা যদি ভালো মনে করেন তাহলে করেন। প্রকাশক বললেন, জি স্যার, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি একটা আকাশ নম্বর দিন। আপনাকে সম্মানীটা পাঠিয়ে দিই। মনে মনে ভাবলাম, বলে কী? আবার সম্মানীও দেবে? বাহ! আমি বললাম, এটিই আমার আকাশ নম্বর।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আকাশ ব্যালান্সে যোগ হয়ে গেল বিশ হাজার টাকা। আমার মাথা যেন চরকির মতো ঘুরতে লাগল। মনে হলো আমি স্বপ্ন দেখছি। নিজেকে বিশ্বাস করাতে গায়ে চিমটি কাটলাম। না, ঠিকই তো আছে। এটি স্বপ্ন নয়, আলবত সত্যি। টাকা ক্যাশ আউট করে উরাধুরা খরচ করলাম কিছু।
অবশেষে বইমেলা আসল। আমি শুক্রবারে বইমেলায় উড়াধুরা প্রকাশনীর স্টলে গেলাম। কেউ আমার বই কিনছে না। শুধু নেড়েচেড়ে দেখছে। সন্ধ্যা ৭টার পর মোটামুটি বইমেলা ফাঁকা হয়ে গেল। প্রকাশক পুরোই হতাশ। প্রকাশক সকালে আমাকে যে আবেগ আর সম্মান দেখিয়েছেন তার বিন্দুমাত্র এখন চোখে পড়ছে না। আমিও ভুগছি হীনম্মন্যতায়। সারা দিন এত এত পাঠক এলো, ছবি তুলল, কথা বলল কিন্তু বই বিক্রি হলো না একটিও।
এখন অবশ্য পুরো মেলাই ফাঁকা। কিছুণ পর স্টলের পর্দা নেমে যাবে। মনে মনে ভাবছিলাম, অন্তত একটা বই যদি বিক্রি হতো। একটা অটোগ্রাফ কাউকে দিতে পারতাম। ভাবতে ভাবতে অবশেষে একটি মেয়ে এসে স্টলের সামনে দাঁড়াল। মনে হচ্ছে কোনো বিশেষ বই খুঁজছে সে। আমি নিজেই ওঠে দাঁড়ালাম। আমার বইটা দিয়ে বললাম, আপু এই বইটা দেখুন। মেয়েটি বইটা দেখে আবার রেখে দিলো। আমি বললাম, কী ধরনের বই খুঁজছেন আপু? মেয়েটি বলল, দেখছি ভাইয়া। আমি বললাম, গল্প পড়তে চাইলে এটা নিতে পারেন। আমার বইটা আবারো এগিয়ে দিলাম। তিনি ধরলেন না। আমি বললাম, আপনার কী জোকস পছন্দ? মেয়েটি বলল, হ্যাঁ। আমি অতি আবেগের সাথে বললাম, তা হলে এই বইটি নিতে পারেন। মেয়েটি আবারো বই উল্টেপাল্টে দেখে রেখে দিলো। কিছুণ বিরতি দিয়ে আবার বললাম, আপনি কি কবিতা পছন্দ করেন? মেয়েটি বলল, হ্যাঁ করি তো। আমি আবারো অতি উৎসাহে আমার বইটি দিয়ে বললাম, একটু পড়ে দেখুন।
মেয়েটি বড় বড় চোখে অবাকদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এ বইয়ে সবই আছে নাকি? আমি হাসি দিয়ে বললাম, জি আপু আছে? তিনি বললেন, ও এ জন্যই বইয়ের নাম জগাখিচুড়ি? আমি বললাম, জি। এবার মনে হলো মেয়েটি বইটা নেবে। তাই বললাম, বইটা কি দেবো আপু? মেয়েটি মুখ গম্ভীর করে বলল, না ভাইয়া। আচ্ছা, পিংক কালারের কোনো বই নেই? হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। আমি শক্ত আওয়াজে বললাম, স্যরি আপা, নেই। ‘যদি পিংক কালারের বই থাকত তা হলে আমি যেকোনো বই-ই নিতাম’ বলে মেয়েটি চলে গেল। রাগে নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। কিসের লেখক হলাম? শুধু ফেসবুক লেখক? লাভ কী?
সে দিন স্টল থেকে ফিরে আসার পর প্রকাশক আর এক দিনও কল দেয়নি আমাকে। লজ্জায় আমিও দিইনি। ভেবেছিলাম হয়তো, আস্তে আস্তে বই বিক্রি হচ্ছে। পরে শুনি ওই দিনের এমন অস্বাভাবিক জটলার কারণে প্রকাশকের স্টলই বন্ধ করে দিয়েছে বইমেলা কর্তৃপ।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
সশস্ত্র বাহিনী বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে : অধ্যাপক ইউনূস কুবিতে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন ব্যাংক খাত সংস্কারে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা সোমবার ঢাকায় আসছেন আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-বেনাপোল ট্রেন চলাচল শুরু ২ ডিসেম্বর ব্রাজিল সফরকালে ইউক্রেনে শান্তি ও গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান শি’র রাষ্ট্রপতির সাথে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ নরসিংদীতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে যুবকের আত্মহত্যা ঈশ্বরগঞ্জে টিসিবির পুরনো তালিকা, সাধারণ মানুষের ক্ষোভ যুক্তরাজ্যের প্রায় আড়াই শ’ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ করছে : এইচএসবিসি আবারো বাড়ল স্বর্ণের দাম

সকল