অন্যরকম ভালোবাসা
- আমজাদ হোসেন বাপ্পি
- ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
সেলিম আড্ডাবাজ ছেলে। সারা দিনই বন্ধুদের সাথে আড্ডায় পড়ে থাকে। তাদের মূল আড্ডা জমে এলাকার তিন রাস্তার মোড়ে সাদেক কাকুর সবজি দোকানের ঠিক সামনে। ইতোমধ্যে বেচারা কাকুর ব্যবসা লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে। কাকু ইশারা ইঙ্গিতে বুঝাতে চায় এটা আড্ডার জায়গা নয়! ব্যবসার জায়গা। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
সবজি দোকানের উল্টো পাশে লাল বাড়িটা অবন্তীদের। প্রকাণ্ড বাড়ি। চারপাশ উঁচু দেয়ালে ঘেরা। অবন্তীরা থাকে দোতলায়। উত্তর দিকে আমড়া গাছের পাশের রুমটা অবন্তীর। রুমের সাথে লাগোয়া ছোট্ট বারান্দা। এখানে মাঝে মাঝে অবন্তী এসে দাঁড়ায়। এই দাঁড়ানোটা পরিষ্কার দেখা যায় ঠিক সাদেক কাকুর সবজি দোকানের সামনের রাস্তা থেকে। এই হলো সেলিমের এখানে আড্ডা দেয়ার মূল কারণ।
২.
সেলিম অনেক দিন থেকেই অবন্তীকে মনে মনে ভালোবাসে। তাকে একনজর দেখার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে সে। এ ব্যাপারটা অবন্তীও জানে। কিন্তু তার দিক থেকে তেমন কোনো উচ্ছ্বাস দেখা যায় না। সেলিম হতাশ হয়ে বন্ধু রিয়াদকে বলে, ‘দোস্ত অনেক দিন তো হলো। মেয়েটা তো তেমন পাত্তা-তাত্তা দিচ্ছে না ! কী যে করি, মন তো আকুপাকু করে!’
‘আজকের তারিখ কতরে সেলিম?’
‘হু... ১৩ তারিখ!’
‘হ আজকে ১৩ তারিখ। তাইলে কালকে হবে ১৪ তারিখ! অর্থাৎ আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে!এটা তোর জন্য একটা ভালো সুযোগ!’
‘যেখানে প্রেমই নাই! ভ্যালেন্টাইন দিয়া কি আমি খাট্টা খামু?’ মুখ বাঁকিয়ে বলে সেলিম।
‘প্রেম থাকবে কেমন করে! তুই এখন পর্যন্ত তাকে প্রপোজই করিস নাই! আগে তাকে প্রপোজ তো করতে হবে নাকি! শুন দোস্ত তাকে পটাতে একটা ভালো আইডিয়া আসছে আমার মাথায়!’
‘কি সেটা জলদি বল!’
‘বলছি! বলছি! একটু ধৈর্য ধরো। তার আগে আমাকে অনেক ফুল আর হাজার খানেক মোমবাতির ব্যবস্থা করে দেয়া লাগবে।’
‘মনে করো ব্যবস্থা হয়ে গেছে!’
‘তাইলে যা। এখন নাকে তেল দিয়া ঘুমা। আজকে রাইতে আমাদের মিশন শুরু হবে!’
৩.
রিয়াদ ও সেলিম পরিকল্পনা মতো রাত ১১টায় অবন্তীদের ছাদে অবস্থান নেয়। পুরো ছাদে তাদের কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে। টানা এক ঘণ্টা চলে তাদের এই কর্মযজ্ঞ! কাজ শেষে দু’জনে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। রিয়াদ শীতে কাঁপছে। কাঁপা গলায় সেলিমকে বলল, ‘বন্ধু কাজ হয়ে গেছে! যা এবার নায়িকাকে ছাদে নিয়ে আসার দায়িত্ব তোর!’
হাড় কাঁপুনি শীতে বন্ধুর জন্য রিয়াদের নিঃস্বার্থ পরিশ্রম দেখে সেলিম মুগ্ধ হয়। রিয়াদের এ ঋণ শোধ করা যাবে না। এসব ভাবতে ভাবতে সাবধানী পায়ে নিচে নামে সে। তার এখন চিন্তা যেকোনোভাবে অবন্তীকে ম্যানেজ করে ছাদে নিয়ে আসা।
একটু পর অবন্তীকে সাথে নিয়ে ছাদে ফিরে আসে সেলিম। পুরো ছাদ তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। অবন্তী বিরক্ত ভাব নিয়ে বলে উঠল, ‘হ্যাঁ, আপনার রিকোয়েস্টে এত রাতে ছাদে এসেছি! কী দেখাবেন দেখান!’
ঠিক সে মুহূর্তে পুরো ছাদ মোমবাতির আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে। আশ্চর্য হয়ে চেয়ে থাকে অবন্তী। পুরো ছাদের চার পাশ নানান কালারের বেলুন দিয়ে সাজানো। কিছু একটাকে ঘিরে জ্বলছে হাজার খানেক মোমবাতি!
অবন্তীর বিস্ময়ের সীমা নেই! কৌতূহলী চোখ নিয়ে সামনে এগোয়। বড় বড় অরে ‘অবন্তী ভালোবাসি তোমাকে’ ফুল দিয়ে তৈরি একটি লেখা স্পষ্ট দেখতে পায় সে। আনন্দে হেসে ওঠে অবন্তী। ব্যতিক্রমী এ আয়োজন দেখে অবন্তীর মন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। দ্রুত সে সেলিমের সামনে এসে দাঁড়ায়। ভালোবাসাযুক্ত কণ্ঠে বলে, ‘ভাইয়া আমি আপনাকে এতদিন ভুল বুঝেছিলাম। বিরক্তি ভাব দেখিয়েছি, তাই অনেক সরি। আপনি যে রিয়াদের পিওন হিসেবে আমাকে ফলো করতেন তা আমি জানতাম না!’
এই বলে অবন্তী দৌড়ে রিয়াদকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে বলে, ‘আমিও তোমাকে ভালোবাসি !’
রিয়াদও দুই হাত দিয়ে অবন্তীকে শক্ত করে ধরে বলে, ‘আমিও!’
এ দিকে বেচারা সেলিম ছাগলের মতো করুণ দৃষ্টি করে তাকিয়ে থাকে হা করে।