বইমেলায় পা ঠক ঠক
- রবিউল ফিরোজ
- ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
লাজুক কবি মদনদার বই এসেছে বইমেলার স্টলে। প্রকৃতিপ্রেমী মদন কবি বইমেলা উপলক্ষে আপাতত প্রকৃতিপ্রেমের ঝাঁপি তুলে রেখেছে। তার ভেতর খুবই টেনশন কাজ করছে বইমেলায় তার কবিতার বই বিক্রি হবে তো? তার এত ভালোমানের কবিতার বইটি বিক্রি না হয়েই পারে না। প্রয়োজনে সে স্টলের সামনে কবিতার তুবড়ি ছোটাবে। পাবলিক সেটা না গিলে পারবে না। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয় কবি মদন। ঝোলানো ব্যাগ কাঁধে ফেলে বইমেলায় গিয়ে উপস্থিত হয় কবির। তার গোপন বাসনা ছিল তাকে দেখেই টিভিওয়ালারা ছুটে আসবে তার পুরো হাল হকিকত জানার জন্য। কিন্তু অনেক অপেক্ষার প্রহর গোনার পরও কেউ এগিয়ে এলো না। তাতে বেশ মনোক্ষুণœœ হয়ে পড়েছে আর মনে মনে বলছে দেশে কবির সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। ছোট্ট একটা দেশে এত কবি হলে তার বই ক্যামনে চলে? তার মনে হলো, এই সম্প্রদায়কে খানিক ছাঁটাই করা উচিত। ভাবনার মধ্যেই তার মোবাইলটা চিৎকার করে উঠল। বিশ্রি আওয়াজে মদনদার বিরক্তি লাগল বটে, কিন্তু মোবাইলে আশা নামের মেয়েটির নাম ভেসে উঠতেই তার মন ভালো হয়ে গেল। মেয়েটার সাথে তার ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয়। তারপর ফোনালাপের মাধ্যমে বন্ধুত্ব। মদনদা খুশি হয়Ñ যাক তাহলে বন্ধু আসছে তার বইটা কিনতে। কিন্তু কবিবর বন্ধু আশা বলল, ভাইয়া আপনি মেলা থেকে বের হয়ে আসুন। টিএসসির মোড়ে আমরা চা খাই, ওখানকার চা খুবই ভালো। আমরা রেগুলার ওখান থেকেই চা খাই। আমার বন্ধুরাও এসেছে আপনাকে দেখবে বলে।
মদনদা প্রথমদিকে আমতা আমতা করল। কিন্তু মেয়েটি যখন আবার বলল, ভাইয়া আসেন না... ভাইয়া...। তখন আর সে নিজেকে সামলাতে পারল না। যাক এক কাপ চা-ই তো খাবে। খাক। তারপর মেলাতে নিয়ে এসে আমার কবিতার ‘অমূল্য রতন’ বইটি হাতে হাতে ধরিয়ে দেবো।
মদনদা খুশি মনে হাজির হয় সবার সামনে। একদল মেয়ে দেখে তার মুখ থেকে শুধু কবিতাই বের হতে থাকে। পকেটের কথা না ভেবেই সে খুশি হয়ে যায়। আশা বলে ওঠে, ভাইয়া আমার বন্ধুদের কী খাওয়াবেন?
আশার আশা করা মুখের কথাকে আর না করে না মদনদা। বলে, যা খেতে চাও খেতে পারো।
আশা বলে উঠে, দেখলি কবি ভাইয়ার মনটা কত উদার! খাওয়ার মাঝেই কেউ বলে ওঠে কবিরা এমনই হয়। অবশেষে বিল দিতে গিয়ে মদনদার মাথাটা সত্যি সত্যি ঘুরে উঠল। ঘটনার পর ফাঁকা পকেটে হাত ঢুকিয়ে যেন অসহায় হয়ে উঠল কবিবর। এবার একটা আশা অবশ্য অবশিষ্ট আছে। সেটা ভেবে মনকে সান্ত্বনা দিলো কবি মদন। এদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে বই ধরিয়ে দিলেই বেদনাভার লাঘব হবে তার। নইলে একদম মাঠে মারা।
সবাইকে সাথে নিয়ে পুনরায় বইমেলায় এসে হাজির কবি মদন। আশ্চর্য হয়ে কবিবর লক্ষ করল, কেউ তার বই ছুঁয়ে দেখছে না। সুতরাং সে বলেই ফেলল, বই-টই কিনবে না? আমার বইটা দ্যাখো দ্যাখো। নিজেই তাদের হাতে তুলে দিলো। সবাই নেড়েচেড়ে দেখে আবার রেখে দিলো। আশা বলল, ভাইয়া, আমাদের সৌজন্য কপি দেবেন না? আমি তো ওদের বলেছি... তা ছাড়া আমাদের হাতে অত টাকাও নেই। লজ্জা পেলো কবি মদন। টাকা নেই বলে কি বই নেয়া যাবে না। খচখচ করে অটোগ্রাফসহ বইগুলো তুলে দিলো কবি মদন। তারপর পাঠকদের সে কি হাসি! আহা! অবশেষে কবি মদন কান ধরে কাব্যরাজ্য থেকে বাস্তবে ফিরে এসে বলল, শালার গোষ্ঠী কিলাই।