মিহির চাচার কাণ্ড
- মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
- ৩০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
মিহির চাচা ঊনষাট পেরিয়ে আজ ষাট-এ পা দিয়েছেন। গত দু’দিন আগে তার বড় মেয়ের ছেলের অর্থাৎ নাতির জন্মদিন ছিল। চোখ ধাঁধানো আয়োজন। নাতির জন্মদিনের অনুষ্ঠান দেখে মিহির চাচার ভীষণ জিদ হলো। একটা পিচ্চি ছেলের প্রথম জন্মদিনে এত আয়োজন! অথচ তিনি ঊনষাটটি জন্মদিন পার করেছেন কোনো আয়োজন ছাড়াই। সুতরাং ষাটতম জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে তিনি বিশাল আয়োজন করলেন। বিশাল!
আমরা অনেকেই উপস্থিত হলাম নৈশ্যকালীন এ অনুষ্ঠানে। মিহির চাচার ছোট ছেলেকে বছরখানেক আগে বিয়ে করিয়েছেন। সে সস্ত্রীক ঢাকা থাকে। মিহির চাচা আমাকে বললেন, ‘ভাতিজা, আমি এহন কেক কাটব। এই খুশির খবরটা পোলারে জানানো দরকার। দেও। ছোট পোলার নাম্বারে একটা কল দেও।’
মিহির চাচার ছোট ছেলের নাম সুমন। আমি সুমনকে কল দিলাম। চাচা বললেন, ‘কথা যেন বড় করে শোনা যায়Ñ সিস্টেম করে দেও।’
বুঝলামÑ লাউড স্পিকার দিতে বলেছেন। মোবাইলে লাউড স্পিকার দিয়ে চাচার হাতে ফোন দিলাম। চাচা কানে ফোন ধরে চোখ বন্ধ করলেন। অপর প্রান্তের কথার অপেক্ষায় রইলেন। ওপাশ থেকে মহিলার কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, ‘আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছে। একটু পর আবার চেষ্টা করুন। ধন্যবাদ।’
মিহির চাচা চোখ খুললেন। দাঁতে দাঁত কেটে কষে এক ধমক দিলেন, ‘এই বেক্কল বেডি, আমি এহন কেক কাটব। পরে কথা কইয়া কী অইব? আমার পোলার কাছে মোবাইল দেও।’
কিন্তু হায়! কল কেটে গেল। মিহির চাচা আবার কল দিলেন। ওপাশ থেকে মহিলার কণ্ঠস্বর, ‘আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছে। একটু পর আবার চেষ্টা করুন। ধন্যবাদ।’
চাচা ইনিয়ে বিনিয়ে বললেন, ‘আরে বেডি, আমার পোলাডার সাথে একটু কথা কইবার দেও। মাত্র কয়েক মিনিট কথা কই। কেক কাটার শুভ সংবাদটি তাকে জানাই।’
কিন্তু না, আবার ফোন কেটে গেল। চাচা হতাশ হলেন। তার চোখেমুখে স্পষ্ট হতাশার ছাপ। তিনি পকেটে ফোন ঢুকাতে ঢুকাতে বললেন, ‘ভাতিজা, ভাবছিলাম পোলারে বিয়ে করালে সুখ আইবে। তা আর কপালে জুটল না। এরকম বেত্তমিজ বউ কারো কপালে জোটে? গ্রামের সহজ-সরল মাইয়্যা দেখে বিয়ে করালাম। আর শহরে গিয়ে কত বেয়াদব হয়ে গেল ছেলের বউটা। পোলার লগে কথা কইতেই দিলো না। বলে কিনা, আপনার ছেলে ব্যস্ত। একটু পরে ফোন করুন।