২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আঁধার রাতের গল্প

-

সন্ধ্যায় বাজারে আসার সময় আব্বা ১০০ টাকার একটি কচকচে নোট হাতে ধরিয়ে দিলেন তার জন্য পাউরুটি আনার জন্য। বাজারে এসে বন্ধু মহলে আড্ডা দিতে দিতে কখন যে রাত ১০টা বেজে গেল টের পাইনি। পকেটে হাত দিয়ে দেখি বাসা থেকে মানিব্যাগটা আনতে ভুলে গেছি। শুধু তা-ই নয়, মোবাইলটাও আনতে ভুলে গেছি। আজকাল ভুল রোগটি আমাকে পেয়ে বসেছে। মন মেজাজও দিন দিন উগ্র হয়ে যাচ্ছে। তুচ্ছ ব্যাপারেও আমার রাগ চরমে ওঠে যায়।
পাউরুটি কিনতে এক দোকানে এসেছি। মূল্য এসেছে ৫০ টাকা। মূল্য পরিশোধ করতে পকেট থেকে আব্বার দেয়া ১০০ টাকার নোটটি বের করে দোকানি ছেলেটাকে দিলাম। কিশোর বয়সের ছেলে। পাউরুটির দাম ৫০ টাকা রেখে আমার পাওনা ৫০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিতেই দেখি নোটটি খুব পুরনো আর ছেঁড়া।
‘এটা কী নোট দিলে, একেবারে ছেঁড়া।’
‘চালিয়ে নিয়েন ভাই।’
‘না। নতুন টাকা দাও।’
‘নেন না ভাই।’
‘না। দাও। দাও।’
‘কষ্ট করে চালিয়ে নিয়েন গো ভাই।’
মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। এই ছেলে রীতিমত আমার সাথে তর্ক করছে। এত ফাজলামো করবে কেন? আমি তো টাকা খয়রাত চাচ্ছি না। তা ছাড়া ওর ক্যাশের ড্রয়ারে ৫০ টাকার কচকচে অনেকগুলো নোট দেখেছি। তা হলে আমাকে দিয়ে বিদায় দিতে অসুবিধা কী!
পুরনো ছেঁড়া নোটটি চালিয়ে দিতে সে দ্বিতীয় দফায় আমাকে জ্ঞান দিচ্ছে দেখে মেজাজটা দ্বিগুণ খারাপ হয়ে গেল। ঠাস করে কষে মারলাম এক চড়। অবশেষে চড় খেয়ে সে ঠিকই আমাকে নতুন কচকচে ৫০ টাকার নোট দিল গোমড়া মুখে।
২.
হাতে পাউরুটি আর পকেটে ৫০ টাকার কচকচে নোট নিয়ে অন্ধকার পথে বাড়ি ফিরছি। বটতলার মোড়ে আসতেই কারা যেন পথ আগলে দাঁড়ায়। মুখোশধারী চারজনের পরিচয় বুঝতে পারলাম। এরা ছিনতাইকারী।
আমাকে অভিযান চালাতে শুরু করল তারা। অভিযান চালিয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু পেল না হাতের পাউরুটি আর পকেটের ৫০ টাকার নোটটি ছাড়া।
‘পকেটে মাত্র ৫০ টাকা নিয়ে ঘুরিস কেন? ফকির কোথাকার। দেখে তো মনে হয় বড়লোকের পোলা!’ বলেই একজন ঠাস করে আমার গালে কষে একটি চড় বসিয়ে দিলো।
আরেকজন কড়া গলায় বলল, ‘আর যদি কখনো আমাদের কবলে পড়িস, সে দিন মানিব্যাগ ভরা টাকা না পেলে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে পেলব।’ বলেই সে আমার শার্টের কলার ধরে ঝাঁকড়া মারল।
৫০ টাকা নিয়ে ওরা আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি বাড়ি ফিরছি। চড়টা খুব জোরেই পড়েছে। ব্যথায় গাল টনটন করছে। নিশ্চয়ই এটা অভিশাপ।
পাউরুটি বিক্রেতা ওই ছেলেটাকে যে ৫০ টাকার নতুন নোটের জন্য চড় মেরেছি, সেই অভিশাপ। অভিশাপে আল্লাহ ছিনতাইকারী দিয়ে আমাকে চড় খাইয়ে দিলেন। যে ৫০ টাকা নোটের জন্য ছেলেটার সাথে তর্ক করেছি, অথচ সেই ৫০ টাকার মালিক হলো ওই ছিনতাইকারীরা। ধুর!
মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল।

 


আরো সংবাদ



premium cement