২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

এক মাসের বেতন

-

আতিক সাহেব এক গোপন সূত্রে খবর পেলেন তার মিরপুরের ফ্যাক্টরিতে যে শ্রমিকরা কাজ করে, তারা সবাই ফাঁকিবাজ। ঠিকমতো ফ্যাক্টরিতে আসে না। অথচ মাস শেষে ঠিকই বেতন নিয়ে যায়। গোপন সূত্রে পাওয়া এসব তথ্য শুনে আতিক সাহেবের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একদিন কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ করে ফ্যাক্টরি পরিদর্শনে মিরপুরে যাবেন। কাজকর্মে যাকেই হেলাফেলা করতে দেখবেন, তাকেই সাথে সাথে পানিশমেন্ট দেবেন।
আজ বুধবার। দুপুরে আতিক সাহেব কাউকে কিছু না জানিয়ে তার মিরপুরের ফ্যাক্টরিতে হাজির হলেন। এই তিনতলা ফ্যাক্টরির নাম সানজিদা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি। সানজিদা আতিক সাহেবের স্ত্রী। স্ত্রীকে তিনি জীবন দিয়ে ভালোবাসেন বলে স্ত্রীর নামে ফ্যাক্টরি খুলেছেন। এই ফ্যাক্টরিতে সাধারণত জুতা, ব্যাগ, প্লাস্টিক সামগ্রী বানানো হয়।
এই পড়ন্ত দুপুরে ফ্যাক্টরিতে উল্লেখযোগ্য শ্রমিক আসেনি দেখে আতিক সাহেবের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ফ্যাক্টরির নিচতলায় ম্যানেজার সেলিম খন্দকার বসেন। আতিক সাহেব ফ্যাক্টরিতে এসে সেলিম খন্দকারকে তার কাজে নিবেদিত থাকতে দেখেননি। সেলিম খন্দকার কাজকর্ম ফেলে একমনে ফেসবুকে ডুবে আছেন দেখে রাগে ক্ষোভে আতিক সাহেবের নাক ঘেমে গেল। তবুও কিছু না বলে তিনি ফ্যাক্টরির দোতলায় চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে দেখেন মালামাল সব এলোমেলো। অগোছালো পরিবেশ থেকে বিশ্রী দুর্গন্ধ নাকে আসতেই তিনি দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলেন।
২.
ফ্যাক্টরির নিচতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন আতিক সাহেব। মনে মনে ভাবছেন ম্যানেজার সেলিম খন্দকারকে দু’চার কথা শুনিয়ে দেবেন। এই ফ্যাক্টরির এই হাল কেন, সব শ্রমিক উপস্থিত নেই কেন, কাজে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবেÑ এসব তথ্য সেলিম খন্দকারকে জানানো দরকার।
হঠাৎ আতিক সাহেব দেখতে পেলেন ফ্যাক্টরির গেট অতিক্রম করে এক ছেলে ভেতরে আসছে। ছেলেটির হাতে কিসের এক বাক্স। ছেলেটি খুব ধীর গতিতে ফ্যাক্টরির দিকে আসছে দেখে আতিক সাহেব মনে মনে বললেন, ‘খুব আস্তে আস্তে হেঁটে সময় ফাঁকি দেয়া হচ্ছে, না! যত্তোসব!’
আতিক সাহেবের সামনে চলে এলো ছেলেটি। তার হাতে একটি বাক্স। আতিক সাহেব বাক্সের দিকে তাকালেন।
‘কী নাম তোমার?’
‘বাপ্পি।’
‘এত আস্তে হেঁটে কাজ ফাঁকি দিচ্ছ, না?’
‘ইয়ে মানে!’
‘এই কাজের জন্য তুমি রোজ কত টাকা করে পাও?’
‘৩০০ টাকা।’
আতিক সাহেব পকেট থেকে টাকা বের করে ছেলেটির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এই নাও তোমার ত্রিশ দিনের বেতন ৯ হাজার টাকা। এখনই এই ফ্যাক্টরি ছেড়ে চলে যাবে। আর কোনো দিন যেন তোমার ছায়াও এখানে না দেখি।’
ছেলেটি আতিক সাহেবের দেয়া ৯ হাজার টাকা নিয়ে বাক্স রেখে দ্রুত চলে যাচ্ছে। আতিক সাহেব সেলিম খন্দকারকে ডেকে বললেন, ‘ ছেলেটি যে এতক্ষণ বাক্স সরানোর কাজ করেছিল, সে কতদিন যাবৎ এখানে কাজ করে?’
সেলিম খন্দকার চুপ করে রইলেন।
‘কী হলো, কথা বলছেন না কেন? ছেলেটি কত দিন ধরে এখানে কাজ করে?’
‘ইয়ে স্যার!’
‘বলেন।’
‘ছেলেটি তো এই ফ্যাক্টরির কেউ না।’
‘মানে?’
‘সে একজন ডেলিভারিম্যান। কুরিয়ারের মাল ডেলিভারি দিতে এসেছিল।’
‘হায় হায়, আমি তো তাকে এই ফ্যাক্টরির শ্রমিক ভেবে পুরো এক মাসের বেতন ৯ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় ...!’
‘সর্বনাশ! ৯ হাজার টাকা?’
‘চলেন চলেন, আমরা ছেলেটিকে ধরে আনি।’
আতিক সাহেব আর সেলিম খন্দকার গেটের কাছে ছুটে এলেন। ততক্ষণে বাপ্পি নামের ডেলিভারিম্যান ছেলেটি হাওয়া হয়ে গেল। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement