২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পশুর ডাক্তর মানুষের লাহান

-

আলুটিলা একটি দরিদ্র গ্রামের নাম। আধুনিকতার ছোঁয়া নেই বললেই চলে। পুরো গ্রাম কৃষিনির্ভর। শিেিতর হার ২ শতাংশ হবে কি না তাতেও সন্দেহ আছে। শহর থেকে বড্ড দূরে সে গ্রাম। গ্রামের দুই-চারজন মানুষ আছে যারা শহরে চাকরি করে। প্রত্যেক ছুটিতে তারা আসার সময় একেকটা আধুনিক জিনিস কিনে নিয়ে আসে। আর তা দেখতে পুরো গ্রাম ভেঙে পড়ে। শহরে তাদের যাতায়াতের কারণে অবশ্য পুরো গ্রামই নতুন নতুন কিছু দেখছে, জানছে, শিখছে।
এক ছুটিতে মাহফুজ বাড়িতে আসে। সে অনেক কষ্ট করে উচ্চশিতি হয়েছে। তাই শহরে চাকরি করতে পারছে। আর তার বাবা আর ভাই গ্রামে কৃষিকাজ আর গরু-ছাগল লালন পালন করে। মাহফুজ বাড়িতে এসে দেখল তাদের একটা গরুর অবস্থা খুব খারাপ। কয়েকজন মিলে গরু জবাই করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে কাঁধের ব্যাগটা রেখে এসে জিজ্ঞেস করল, বাবা কী হয়েছে গরুর?
তার বাবা বলল, কী হইছে সেইডা তো কইবার পারুম না। কিছুই খাইতে চায় না। বারবার খালি শুইয়া পড়ে।
মাহফুজ বলল, তাই বলে জবাই করতে হবে?
তার বাবা বলল, তয় কী করুম? সব সময় তো এইডাই করি। নাইলে তো গরুডা মইরা যাইব।
মাহফুজ বলল, না মরবে না। যেমন অসুখ আছে, তেমন তার চিকিৎসাও আছে।
তার বাবা বলল, কস কী? গরুর আবার চিকিস্যা? হুনছি মাইনষের অসুখ হইলে ডাক্তরে চিকিস্যা করে। গরুর চিকিস্যা কেডা করে?
মাহফুজ বলল, পশুর চিকিৎসার জন্যও ডাক্তার আছে, ওষুধ আছে।
তার বাবা বলল, তাই নাকি? কত কিছু যে আছে দুনিয়ায়।
মাহফুজ বলল, আমার এক বন্ধু সদরে আছে, তাকে ফোন করে দিচ্ছি। সে একজন পশুর ডাক্তার পাঠিয়ে দেবে।
এ দিকে পশুর ডাক্তার আসবে শুনে উৎসুক জনতার মধ্যে যেন হইচই পড়ে গেল। সবাই একে-অপরকে জানিয়ে দিচ্ছে পশুর ডাক্তারের আগমনের কথা। মুহূর্তেই খবর ছড়িয়ে গেল গ্রামকে গ্রাম। সদর থেকে পশুর ডাক্তার আসতে আসতে কয়েক ঘণ্টায় লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল মাহফুজদের বাড়ি। নানা জনে নানা গুঞ্জন করতে লাগল। কেউ কেউ বলল, পশুরাও আজকাইল শিতি হওন শুরু করছে। তাদেরও ডাক্তর, কবিরাজ আছে। আরেক জায়গায় শোনা গেল একজন বলছে, আইচ্ছা মাইনসের ডাক্তর তো দেখছি চোখে চশমা লাগায়। পশুর ডাক্তর চশমা কেমনে লাগায়। অপর একজন বলল, কেমনে আর লাগাইব, দড়ি টরি দিয়া বাইন্ধা রাখে মনে কয়।
এসব হাসি-তামাশা করতে করতে একসময় ভ্যানে করে ডাক্তার এসে উপস্থিত হয়। সাদা এপ্রোন পরা চোখে চশমা লাগানো একজন ডাক্তার। মানুষের ডাক্তার আর পশুর ডাক্তারের মধ্যে দেখতে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো তফাৎ নেই। জাস্ট পড়াশোনা আর কর্মেেত্রর তফাৎ। ভিড় ঠেলে ডাক্তার ভেতরে ঢুকলেও লোকজনের চোখ অন্য দিকে। তারা তাকিয়ে আছে রাস্তায় রাখা ভ্যানটার দিকে। তারা যেন অন্য কিছু খুঁজছে। এরই মধ্যে মাহফুজও এসে দাঁড়াল ডাক্তারের পাশে। লোকজনের চোখাচোখি দেখে মাহফুজ বলল, কী গো মিয়ারা এতণ একেবারে পশুর ডাক্তার দেখার জন্য উতলা হয়েছিলেন আর এখন ডাক্তার রেখে অন্য দিকে কী খুঁজছেন? একজন বলল, আমরা তো পশুর ডাক্তার খুঁজতাছি, উনারে দেইখা তো মনে হইতাছে উনি মানুষের ডাক্তার।
মাহফুজ বলল, উনিই পশুর ডাক্তার।
কয়েজন একসাথে বলে উঠল, হায় হায়! পশুর ডাক্তর দেখি মানুষের লাহান।
তাদের কথা শুনে জোরে হেসে উঠল মাহফুজ এবং ডাক্তার দুইজনেই। তারপর মাহফুজ সবাইকে বুঝিয়ে বলল, আপনার যা ভেবে এখানে জটলা বেঁধেছেন আমি তা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। তারপরও আপনাদের কিছু বলিনি। ভাবলাম স্বচে পশুর ডাক্তার দেখেই আপনাদের ভুল ধারণাটা ভাঙুক। আসলে পশুরা তো আর বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী নয়। তাদের জ্ঞান বলতে তেমন কিছুই নেই। তাদের কথা বলা বা বোঝার মতাও নেই। তাই পশু কখনও ডাক্তার হতে পারে না। পশুর ডাক্তারও মানুষই হয়। সেই থেকে আলুটিলা গ্রামের মানুুুষ পশুর ডাক্তার চিনেছে। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement