শীতযাত্রা
- রুহুল আমিন রাকিব
- ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
শীতের দিন। কনকনে শীতের কারণে আশপাশের সব কিছু ঝাপসা দেখাচ্ছে।
কী যেন একটা কাজে আমি ঢাকা শহরে এসেছি। কাজ শেষে বাড়ি ফিরছি। অনেক রাত হয়ে গেছে। বাস থেকে নেমে প্রায় দুই কিলো রাস্তা রিকশায় চড়ে যেতে হয় আমাদের গ্রামে।
যাই হোক বাস থেকে নেমে আশপাশে তাকিয়ে দেখি মাত্র তিনজন লোক রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কনকনে শীতের কারণে সমস্ত শরীর জমে বরফ প্রায়! আমি একটু এগিয়ে রিকশা ডাকতে যাব। এমন সময় পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি, আমাদের এলাকার মফিজ ভাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্না করছে!
আমি কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম, কাঁদছ কেন মফিজ ভাই! আর এত রাতে তুমি এখানে কেন?
মফিজ ভাই বলল, ওনার এক বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিল, ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে এসেছে।
আমি বললাম, তো কান্নার কী আছে এখানে? বাড়ি যাও নাই ক্যান! তোমার কি কোনো কিছু হারিয়ে ফেলছ?
মফিজ ভাই বলল, আরে নাহ আমার কিছু হারায় নাই। কান্না করছি অন্য কারণে।
আমি বললাম, কী হইছে এইটা বলো।
মফিজ ভাই বলল, তুই তো জানিস আমি এমনিতে মোটা! এর উপরে কনকনে ঠাণ্ডার কারণে আমি ৪টি মোটা জামা গায়ে পরছি, যাতে করে শীত কম লাগে। এই চারটি জামা পরার কারণে এখন আমাকে নাকি হাতির মতো মোটা দেখাচ্ছে। এই কারণে কোনো রিকশা ওলা আমাকে নিতে চাচ্ছে না। সবাই আমাকে দেখে বলতেছে ওরে বাবা এই ড্রাম মার্কা লোকরে নিয়ে রিকশা চালান যাবে না। রিকশার টায়ার পাংচার হবে, নয়তো রিকশা ভেঙে পড়বে।
মফিজ ভাইয়ের এমন কথা শুনে হাসতে হাসতে কনকনে শীতের কথা ভুলে গেছি।
শেষে আমি বললাম, চলো আমার সাথে, এক রিকশায় উঠে বাড়ি যাবো।
মফিজ ভাইকে সাথে নিয়ে রিকশায় উঠতে যাবো। ঠিক ওই সময় রিকশাওলা বলল, ভাই এই লোককে নিয়ে আমি রিকশা চালাতে পারব না।
অনেক বুঝিয়ে তবেই রিকশাওলাকে রাজি করেছি। তবে ভাড়া দিতে হয়েছে তিন ডবল।
সেদিন মফিজ ভাই রিকশা থেকে নেমে আমাকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে বলছে, এই জীবনে আর কখনই এতগুলো জামা পরব না।
শীত তো আবার এলো। আপনারাও একটু ভেবেচিন্তে শীতের জামা গায়ে পরবেন। নয় তো মফিজ ভাইয়ের মতো বিপদে পড়তে হবে। হ