ব্যবসা
- জোবায়ের রাজু
- ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
জীবিকার জন্য রফিকুল ইসলাম শেষ পর্যন্ত স্বর্ণের ব্যবসা শুরু করলেন। এর আগে তিনি কাপড়ের ব্যবসা করে প্রচুর মার খেয়েছেন। শেষে বন্ধু আবদুল জলিলের পরামর্শে তিনি স্বর্ণের ব্যবসায় নাম লেখান। দোকানের নাম দেনÑ টুম্পা জুয়েলার্স। টুম্পা রফিকুল ইসলামের মেয়ে। ছেলেও আছে তার। এক ছেলে। নাম আমজাদ। পড়ালেখায় একেবারে কাঁচা আর ভীষণ রকমের বোকা। এই ছেলেকে আর লেখাপড়া শেখাবার পক্ষে নন রফিকুল ইসলাম। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমজাদকে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বানাবেন।
বাবার সিদ্ধান্তে দ্বিমত করেনি আমজাদ। যে লেখাপড়াকে আমজাদের কখনো ভালো লাগত না, সে লেখাপড়াকে গুডবাই জানিয়ে বাবার ব্যবসার কর্ণধার হতে আমজাদ একবাক্যে রাজি। তাইতো স্কুল থেকে নাম কেটে দিয়ে সে বাবার ব্যবসায় মন দিলো।
রফিকুল ইসলাম ছেলেকে ব্যবসার নিয়মকানুন শেখাতে গিয়ে বেশ বিপাকে পড়লেন। ব্যবসার সূক্ষ্ম সব টেকনিক মাথায় ঢোকে না আমজাদের। সঠিকভাবে টাকা গুনতেও অজ্ঞতার পরিচয় দেয়। আর যোগ-বিয়োগে বরাবরই ভুল করে। ফলে কাস্টমারের সাথে দরকষাকষির পর কাস্টমারের প্রাপ্য পয়সা থেকে কখনো কখনো বেশি পয়সাও দিয়ে দেয়।
২.
স্বর্ণের বাজারে হঠাৎ স্বর্ণের দাম বেড়ে গেল দেখে স্বন্তির নিঃশ্বাস পড়ল রফিকুল ইসলামের। খবরের কাগজেও বড় করে ছাপানো হলÑ ‘স্বর্ণের ডাবল দাম বেড়েছে।’ আহা, এমন নিউজ দেখে আনন্দে বুক ভরে যায় রফিকুল ইসলামের। এখন তিনি যেটাই বিক্রি করবেন, পকেটে ডাবল পয়সা আসবে। আহা শান্তি। আমজাদকে তিনি শেখালেনÑ ‘স্বর্ণের দাম বেড়েছে। এখন লাভ আর লাভ। কেউ দোকানে এসে দাম জানতে চাইলে বলবিÑ ডাবল দাম। ২০ হাজার টাকা চাইলে বলবি ৪০ হাজার টাকা। মনে থাকবে?’
আমজাদ ফেসবুকে রোদেলা নামের এক মেয়ের ছবিতে লাইক দিতে দিতে বললÑ ‘জি আব্বা। মনে থাকবে।’
রফিকুল ইসলাম পানের খিলি মুখে ভরতে ভরতে বললেন, ‘শাব্বাশ বেটা। ভুল যেন না হয়।’
আমজাদ বলল, ‘কখনো না।’
রফিকুল ইসলাম বললেন, ‘আমি একটু হাসপাতালে যাচ্ছি। আমার বন্ধু অসুস্থ। দেখে আসি। তুই দোকানদারি কর। মনে রাখবিÑ স্বর্ণের এখন ডাবল দাম।’
রফিকুল ইসলাম তার অসুস্থ বন্ধুকে হাসপাতালে দেখতে চলে যাবার কিছুক্ষণ পর দোকানে এক ভদ্রলোক এলেন কাস্টমার হয়ে। স্বর্ণ কিনতে নয়, তিনি এসেছেন স্বর্ণ বিক্রি করতে। ভদ্রলোক টাকার প্রয়োজনে স্ত্রীর গয়না বিক্রি করতে এসেছেন। গয়নার বাক্স বের করে তিনি আমজাদের কাছে দাম চাইলেন ৫০ হাজার টাকা। আমজাদের তখন বাবার কথা মনে পড়ল। বাবা বলেছেনÑ স্বর্ণের দাম বেড়েছে। সঠিক দাম থেকে ডাবল দাম।
ভদ্রলোক আমজাদের কাছে ৫০ হাজার মূল্য চাইতেই সে ক্যাশবাক্স খুলে এক লাখ টাকার বান্ডিল বের করে দিলো ভদ্রলোকের হাতে।
Ñসেকি বাবা! এত টাকা!
Ñজি চাচা। স্বর্ণের দাম বেড়েছে। ডাবল দাম এখন।
Ñইয়ে মানে...
Ñইয়ে ইয়ে করবেন না তো! বাজারে কখন কোন পণ্যের দাম বাড়ে, তার খবর রাখেন না? এই নিন এক লাখ।
ভদ্রলোক থ হয়ে গেলেন। এদিক সেদিক তাকিয়ে আমজাদের দেয়া এক লাখ টাকার বান্ডিলটি পকেটে ভরে দ্রুত প্রস্থান করলেন।
৩.
রাতে রফিকুল ইসলাম দোকানে এসে ছেলের মুখে এমন ঘটনা গুনে আকাশ থেকে পড়লেন। তারপর রাগে ক্ষোভে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে আমজাদের দুই গালে ঠাস ঠাস করে চড়...। বাবার চড় খেয়ে আমজাদ কেঁদে বলল, ‘আমার কী দোষ! আপনিই তো বললেন স্বর্ণের ডাবল দাম।’
‘চুপ থাক গাধা!’ বলে রফিকুল ইসলাম ছেলের বাম গালে আরেকটা চড় মারলেন। চড় খেয়ে আমজাদ ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে লাগল।