পাগল ছাগলের গল্প
- জোবায়ের রাজু
- ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
সেলিম খন্দকার একজন মানসিক রোগের ডাক্তার। কত পাগল যে তার চিকিৎসায় ভালো হয়েছে। গত মাসে তিনি ফেনী জেলা থেকে নোয়াখালীর প্রাইম হাসপাতালের এসেছেন পোস্টিং নিয়ে। এখানে এসে তিনি লক্ষ করেছেন এই নোয়াখালীতে ফেনীর তুলনায় পাগলের সংখ্যা কম। সপ্তাহে দুই-চারটা পাগল এখানে চিকিৎসার জন্য আসে। অথচ ফেনী থাকাকালীন হাসপাতালে রোজ আট-দশটা পাগলের চিকিৎসা তাকে করতে হতো। এই পরিস্থিতিতে তিনি বুঝতে পেরেছেন নোয়াখালীর চেয়ে ফেনীতেই পাগলের সংখ্যা বেশি।
হাসপাতালে পাগল রোগীর আগমন কম বলে ডাক্তার সেলিম বেশির ভাগ সময়ে চেম্বারে বসে বসে মশা মারেন নয়তো মোবাইল গুতান। রোজ তিনি চেম্বারে বসে ভাবেন আজ নিশ্চয়ই পাগল রোগীর সিরিয়াল লম্বা হবে!
২.
পড়ন্ত বিকেলে মাঝ বয়সের এক ভদ্রলোক চেম্বারে এলেন ইয়ং বয়সের এক ছেলেকে সাথে নিয়ে। ছেলেটির হাবভাব দেখে ডাক্তার সেলিম বুঝতে পারলেন সমস্যা ছেলেটিরই। ভদ্রলোক ডাক্তার সেলিমকে সালাম দিয়ে বললেন, ‘আমি রফিকুল ইসলাম। ও আমার ছেলে আমজাদ। ও গত দুই বছর ধরে পাগল।’
ডাক্তার সেলিম আমজাদের দিকে তাকালেন। বেশ স্মার্ট আমজাদ। আহারে, এই বয়সে ছেলেটি পাগল হলো কেন কে জানে! ডাক্তার সেলিম রফিকুল ইসলামকে বসতে বললেন।
Ñতো আপনার ছেলেতো বেশ সুপুরুষ। এই বয়সে পাগল হলো কিভাবে?
Ñসে অনেক বড় কাহিনী। রোদেলা নামে এক মেয়েকে ভালোবাসতো। মেয়েটি ওর সাথে প্রেমের নাটক করে টাকা-পয়সা খেয়ে আলাউদ্দিন নামে এক গাঁজাখোরের সাথে ভেগে গেছে। তার পর থেকে আমজাদ রোদেলার শোকে পাগল।
Ñ ইশ! খুব প্যাথেটিক।
Ñ ওর পাগলামিটা দিন দিন বাড়ছে ডাক্তারবাবু। উল্টা পাল্টা খুব বকাবকি করে। গতকাল থেকে ওর নতুন একটা পাগলামি শুরু হয়েছে।
Ñ কী সেটা?
Ñ ও বলতে চাচ্ছে, ও আস্ত একটা জ্যান্ত ছাগল গিলে খেয়ে ফেলেছে।
Ñ হা হা হা। তাই নাকি?
রফিকুল ইসলাম কিছু বলতে যাবেন, তাকে থামিয়ে দিয়ে আমজাদ ডাক্তার সেলিমকে বলল, ‘বিশ্বাস করুন ডাক্তার বাবু, আমি সত্যি একটা ছাগল গিলে খেয়ে ফেলেছি।’
ডাক্তার সেলিম দম ফাটানো হাসি চেপে রেখে বললেন, ‘তাই নাকি! জ্যান্ত ছাগলটা কী খুব টেস্ট ছিল?’
মুখ বেজার করে আমজাদ বলল, ‘না। টেস্ট ছিল না। আমাকে অপারেশন করে ছাগলটা বের করেন ডাক্তার। আপনার পায়ে পড়ি। কেন যে খেতে গেলাম।’ বলেই আমজাদ ডাক্তার সেলিমের পা ধরতে গেল।
এই ফাঁকে রফিকুল ইসলাম ডাক্তার সেলিমকে ফিসফিস করে বললেন, ‘একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দেন। ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে।’
ডাক্তার সেলিম তাই করল। কড়া পাওয়ারের একটা ঘুমের ইনজেকশন মারতেই অতল ঘুমে তলিয়ে গেল আমজাদ। তাকে শোয়ানো হলো কেবিনে। আজকের রাতটা এখানেই থাকতে হবে বলে আশ্বস্ত করলেন ডাক্তার সেলিম।
আমজাদ অঘোরে ঘুমাচ্ছে। রফিকুল ইসলাম ডাক্তার সেলিমকে বললেন, ‘ও সুস্থ হবে তো! ঘুম ভেঙে যদি আবার বলে ওর পেটে ছাগল আছে!’
ডাক্তার সেলিম মুচকি হেসে বললেন, ‘তাহলে এক কাজ করুন। একটা ছাগল নিয়ে আসুন। খাটের সাথে ছাগলটাকে বেঁধে রাখব। ঘুম ভাঙলে আমজাদকে জানানো হবে যে অপারেশন করে ওর পেট থেকে ছাগলটি বের করে এখানে বেঁধে রাখা হয়েছে।’
রফিকুল ইসলাম স্বস্তির দম ফেলে বললেন, ‘দারুণ বুদ্ধি তো।’ বলেই তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেলেন ছাগলের সন্ধানে।
৩.
সকাল ১০টায় ঘুম ভাঙল আমজাদের। ঘুম ভেঙেই সে দেখল তার শিয়রে বাবা বসে আছেন এবং পাশে একটি ছাগল খাটের সাথে বাঁধা। ছেলের ঘুম ভেঙেছে দেখে রফিকুল ইসলাম ডাক্তার সেলিমকে ডাকলেন।
ডাক্তার সেলিম এসে আমজাদকে বললেন, ‘কেমন লাগছে তোমার? এই দেখো ছাগলটা। তোমার পেট থেকে অপারেশন করে বের করেছি। বাপরে, তুমি এত বড় ছাগল জ্যান্ত খেয়ে ফেললে? শাব্বাশ।’
আমজাদ বড় বড় চোখে ছাগলটাকে দেখছে। তারপর উৎকণ্ঠে ডাক্তার সেলিমকে বলল, ‘সর্বনাশ ডাক্তারবাবু। এটাতো সেই ছাগল নয়। আমি যে ছাগলটা খেয়েছি, সেটা ছিল কালো। এটা তো সাদা ছাগল এবং সাইজেও অনেক ছোট। আপনাকে তো আবার আমাকে অপারেশন করাতে হবে।’
ডাক্তার সেলিম আমজাদের কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইল। রফিকুল ইসলামেরও একই দশা। তারা দুইজনে এখন কী করবেন বুঝতে পারছেন না।