২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

তাবিজ বশীকরণ!

-

আফসু ভাই সহজ-সরল মানুষ! সহজ-সরল হলেও তার মাঝে বিশেষ কিছু গুণ রয়েছে। এই যেমন, অত্র দুই-চার গ্রামে একজন প্রখ্যাত কবিরাজ হিসেবেও তার বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। হাড় ভাঙা, হাড় ব্যথা, পা মচকানো, পা চুলকানো, পা জ্বালাপোড়া করা থেকে শুরু করে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের নানাবিধ সমস্যা এবং বিচিত্র সব গোপন রোগের চিকিৎসা করে থাকেন তিনি। একদিন তার ঘরসংলগ্ন প্রতিবেশী ছোটভাই রানার মারফত জানতে পারলাম ইদানীং তিনি নাকি গোপন টোটকাপাতি এবং তাবিজ-কবচও করতে শুরু করেছেন!
এ দিকে আফসু ভাইয়ের এহেন চিকিৎসার ওপেন সিক্রেট বিশেষত্ব হলো, রোগীরা যেকোনো সমস্যা নিয়ে এলেই প্রথমে তিনি তাকে তার বাড়িসংলগ্ন পুরনো গাব গাছকে ধরে জড়িয়ে থাকতে বলেন! অতঃপর তার ঘাড়, পিঠ ও গাল বরাবর ক্রমান্বয়ে চটাচট একাধিক থাপ্পর মারেন! থাপ্পর মারতে মারতে রোগীকে হয়রান করে জিজ্ঞেস করতে থাকেন তার সমুদয় সমস্যা। অতঃপর সমস্যার ধরন এবং রকম অনুযায়ী চলে চিকিৎসা!
পাঠক, ঘটনা কিন্তু সেটি নয়। ঘটনা অন্যখানেÑ আমাকে নিয়ে। তখন আমি প্রেমে পড়েছিলাম। বিলকিস নামের ওই সুদর্শনা মেয়েটি থাকত আমাদেরই পাশের গ্রাম হরিণধরায়। কোনো মতেই তাকে বশে পারছিলাম না। বলতে পারছিলাম না আমার মনের কথা। আগত্যা একদিন বাধ্য হয়েই শরণাপ্নন হলাম আফসু ভাইয়ের। তার মোমবাতি-আগরবাতি জ্বালানো ধোঁয়াচ্ছন্ন দরবার ঘরে বসে একান্তে খুলে বললাম সব। কথা শেষে হঠাৎ তিনি আমার পিঠ চাপড়ে জোরছে কয়েকটি থাপ্পড় মেরে অভয় বাণী শোনাতে শুনাতে বলতে লাগলেন, কোনো চিন্তা করিস না রে পাগলা। যাহ্ এইবার হয়ে যাবে! দে, এইবার ৫০০ টাকা দে! আমার হাদিয়া!
তবে তাবিজ দেবার পূর্বশর্ত হিসেবে তিনি আমার ওপর আরো বেশ কয়েকটি কঠিন দায়িত্বও অর্পণ করলেন। প্রথমত কোনো অমাবস্যার রাতে বিলকিসদের বাড়ির আশপাশের যেকোনো ডোবানালার পানির তলদেশ থেকে একটি শাপলাফুলের শিকড় সংগ্রহ করতে হবে। সেই সঙ্গে বিলকিস যেই ঘরে রাতিযাপন করে কোনো এক পূর্ণিমার মধ্যরাতে সেই ঘরের বারান্দা থেকেও এক চিমটি মাটি আনতে হবে! এই দুইয়েই সংমিশ্রণ এবং আফসু ভাইয়ের আরো কিছু নিজস্ব গোপন ফর্মুলায় তৈরি হবে আমার স্বপ্নপ্রেয়সী বিলকিসকে পাওয়ার একটি আদর্শ বশীকরণ তাবিজ! তবে সবচেয়ে দুরূহ কাজটি হলো, এটি আবার পরের যেকোনো অমাবস্যার গভীর রাতে মাটি আনার সেই একই জায়গায় এক নিঃশ্বাসে পুঁতে আসতে হবে! সফল হলে কার্যসিদ্ধি নিশ্চিত; অন্যথায় সব দায়দায়িত্ব নিতে হবে নিজের! অর্থাৎ ধরা খেলে কখনোই তাবিজ দাতার নাম বলা যাবে না! বললে অমঙ্গল হবে এবং আমার ওপর থেকে নাকি প্রেমদেব ভীষণ অসন্তুষ্ট হবেন! আমাকে অভিশপ্ত করে সারাজীবনের জন্য একঘরে করে বাজা রাখবেন।
সে দিন ঘোর অমাবস্যার গভীর রাত। আমি পুরো শরীরে পাতিলের কালো কালি মাখিয়ে দুরুদুরু পায়ে বিলকিসদের বাড়ির উঠোন সম্মুখে এগিয়ে যাচ্ছি। পরে কঠিন এক দম নিয়ে বারান্দায় দরজার কাছে শাবল চালাতেই সেটি সঠিক জায়গায় না গেঁথে খট করে গিয়ে লাগলো কাঠের চৌকাঠে।
মুহূর্তেই উঠোন চতুর্দিকের ঘর থেকে লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে বেরিয়ে এলো। কারণ সময়টা ছিল তখন কোরবানির ঈদের পূর্বমুহূর্ত! গৃহস্থ পরিবারের সমস্ত লোকজন সারারাত আধঘুমে পাহারায় রাখত তাদের গোয়ালের গরু।
যাই হোক, দৌড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেও অবশেষে কোনো লাভ হলো না। ধরা খেয়ে গেলাম। পরে আমাকে বাঁধা হলো তাদের উঠানের সবচেয়ে বয়স্ক ছাতিম গাছটায়। এরই মধ্যেই কিন্তু পেট এবং পিঠে যেখানে যেটা দরকার সেটা পড়ে গেছে! আমি ব্যথার চোটে এক সময় জ্ঞান হারালাম।
ধীরে ধীরে পূব আকাশ ফর্সা হলো। আমি কোনো মতে আমার ফোলা চোখদুটো ট্যারা করে চেয়ে দেখি উঠোন ভর্তি মানুষ। তারা চোখ বড় বড় করে দাঁত মিটমিটিয়ে আমাকে মারতে তেড়ে আসতে চাইছে। দিলদরিয়া কিছুলোক সেই উত্তেজিত জনতাকে দুই হাত প্রসারিত করে থামানোর চেষ্টা করছে। এ দিকে সামান্যতম নড়াচড়ায়ও আমি অনুভব করছি আমার সমস্ত শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা! নাকে-মুখে হাত দিয়ে দেখি স্বাভাবিকের চেয়েও অস্বাভাবিক স্থূলকায়!
পরে উৎসুক জনতা আবার যখন আমার আগমনের প্রকৃত হেতু জানতে পারলেন, তখন আরেক প্রস্থ উত্তম-মধ্যম চলতে লাগল আমার ওপর। কিন্তু সব কিছু আশ্চর্য করে দিয়ে একটু পরেই দেখি আমার সেই প্রিয় আফসু ভাই চুপি চুপি আমার সামনে এসে বসলেন। শান্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন! অতঃপর সামনের চুলগুলো বা হাতের মুঠোয় নিয়ে টাসটাস কয়েকাটি থাপ্পড় মেরে বলতে লাগলেন, এই ব্যাটা! এমন ফাইজলামি শুরু করছস কবে থাইক্যা?

 


আরো সংবাদ



premium cement
মিরপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শিশুসহ দগ্ধ ৭ সাবেক প্রধান বিচারপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ সুপ্রিমকোর্টের বিচারকাজ বন্ধ ফিরছেন শান্ত, অপেক্ষা বাড়ছে মুশফিকের জন্য পিক‌নিকের বা‌সে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু : পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাসহ বরখাস্ত ৭ কুয়াশায় ঢাকা কুড়িগ্রাম, তাপমাত্রা ১৫.৬ ডিগ্রি ‘স্বৈরাচার ও ফ্যাসীবাদমুক্ত দেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ রাশিয়ায় শিক্ষার্থীদের ‘নির্মমভাবে’ গ্রেফতারের বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিবাদ সাবেক প্রধান বিচারপতি রুহুল আমিন আর নেই তাজরীন ট্র্যাজেডির এক যুগ : পুনর্বাসনের দাবি আহতদের সিইসিসহ নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনারদের শপথ আজ জর্ডানে ইসরাইলি দূতাবাসের কাছে গুলি, বন্দুকধারী নিহত

সকল