গিট্টুবাজ মফিজ ভাই
- রুহুল আমিন রাকিব
- ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আমাদের মফিজ ভাই সব সময় এক লাইন বেশি বোঝে। গিট্টু লাগানো আর গিট্টু খোলায় মফিজ ভাইয়ের জুড়ি মেলা ভার। এই কারণে গ্রামের উঠতি বয়সের ছেলেদের কাছে মফিজ ভাইয়ের কদর সব সময় একটু বেশি। সেদিন দুপুর বেলা আমার রুমে শুয়ে আছি। ভালো লাগছে না। এই কারণে হাত-পা ছড়িয়ে দেই। শাওমিকে বুকের ওপর লইয়া ইয়ার ফোন কানে দিয়া গান শুনতাছি খাটের ওপর শুয়ে।
এমন ভর দুপুরে হঠাৎ করে কই থেকে যেন মফিজ ভাইয়ের আগমন। আমারে দেখে বলল, কী রে তুই এই দুপুর সময় এমন করে শুয়ে আছিস! ওই দিকে তোর জন্য আমরা সবাই বসে আছি।
আমি বললাম, কেন বসে আছে সবাই?
মফিজ ভাই বলল, ওরে বাবা মনে হচ্ছে একে বারে কচি খোকা! কিছু মনে রাখতে পারস না?
আমি বললাম, আরে এত আজাইরা প্যাঁচাল বাদ দিয়া বলত কেন বসে আছে সবাই।
আমার কথা শুনে মফিজ ভাই বলল, তোর না আজ আমাদের সাথে উত্তরের মাঠে খেলতে যাওয়ার কথা।
আমি বললাম, হ। যাওয়ার কথা ছিল তবে আজ আমি যাইতে পারছি না ভাই। কারণ আমার শরীরটা বেশি একটা ভালো নয়। কেমন যেন লাগতাছে!
আমার কথা শুনে মফিজ ভাই বলল, আচ্ছা ঠিক আছে তোরে যাইতে হবে না। তবে মনে রাখিস, আজ আমার সাথে আসলি না। এর জন্য তোরে চরম মূল্য দিতে হবে।
এই কথা বলে রুম থেকে চলে গেল মফিজ ভাই।
মনের সুখে গান শুনতে শুনতে আমি ঘুমিয়ে পড়ছি। সন্ধ্যার সময় ঘুম থেকে উঠে আমার পুতুল বউ তানিয়াকে মেসেস করলাম। অনেকবার ফোন কল করলাম। নাহ্, আমার ফোন ধরার বা মেসেসের রিপ্লাই করার কোনো নাম নেই। মনে মনে ভাবলাম পুতুল বউ কী মরে গেল! ওর তো ফোন ধরার কথা, নয়তো মেসেস করার কথা। এক সময় রাগের চোটে আমার ফোনটা ভেঙে ফেলতে মন চাইল। তবে ভাঙতে পারলাম না কারণ পকেটের যে অবস্থা! এই ফোন ভাঙলে আর ফোন কেনা হবে না।
কয়েক শ’ মেসেস আর ফোন কল করার পরে পুতুল বউ ফোন ধরল। আমি হ্যালো বলার আগেই কর্কশ কণ্ঠে বলল, আমার কাছে ফোন করছ কেন? তোমার মতো ছেলের সাথে আমি রিলেশন করতে চাই না। আমার ভাবতেও ঘৃণা করছে, তোমার মতো বাজে একটা ছেলেকে এত দিন ধরে লাভ করি। এই শোন আজকের পর থেকে তোমার সাথে আমার ব্রেকআপ! ভুল করেও আর কোনো দিন আমার ফোনে কল দিবে না। মেসেস করবে না। আমি এখনি তোমাকে আমার সব কিছুতেই ব্লক করব। তুমি শুয়ে থাক তোমার শাওমিকে বুকে জড়িয়ে ধরে।
পুতুল বউয়ের কথার সামন পিছন আমি কিছু বুঝে ওঠার আগে ফোন কেটে দিলো। এর পরে অনেক কবার চেষ্টা করেও কথা বলতে পারলাম না।
মনে মনে ভাবতাছি, হঠাৎ করে কী থেকে কী হয়ে গেল! শাওমিকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে ছিলাম এই কথা কেমনে জানল পুতুল বউ? আর শাওমি তো হলো আমার ফোনের নাম। অথচ এই কথা বলার মতো কোনো সুযোগ দিলো না আমাকে।
যাই হোক মনটা খুব খারাপ! বাড়ি থেকে বের হয়ে পুকুর পাড়ে বসে আছি। এমন সময় মফিজ ভাইয়ের দেখা।
আমাকে বসে থাকা দেখে বলল, কী রে এখানে এমন করে বসে আছো কেন? মন খারাপ মনে হয়!
আমার ঘটনা শুনে মফিজ ভাই বলল, শোনÑ এমনে এমনে এই গ্রামের সব ছেলেরা আমাকে বড় ভাই বলে না। আমি যেমন, গিট্টু লাগাতে জানি তেমনি গিট্টু খুলতেও জানি। বুঝেছ খোকা? দুপুর বেলা খেলতে না যাওয়ার মজাটা এবার হাড়ে হাড়ে বুঝেছ তো?
মফিজ ভাইয়ের কথা শুনে আমি ওপর নিচে মাথা ঝাকিয়ে বললাম, হ বুঝেছি। পুতুল বউকে গিট্টু বাজাই দিছ তুমি। মোবাইল ফোন শাওমিরে মেয়ে মানুষ বানায়া বুঝাইছ আমার বউরে।