২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দু’জনার সংসার

-

শুভকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছে তামান্না। বিয়ের শুরুর দিকে শুভ আর তামান্না নিজ নিজ ফ্যামিলিতে বেশ স্ট্রাগল করেছে। কারণ, উভয়েরই বাবা-মায়ের শুরুতে এই বিয়েতে মত ছিল না। শুভর সমস্যা হলো, সে সুদর্শন কিন্তু অকর্মা। আর তামান্নার সমস্যা হলো, সে সুন্দরী কিন্তু বেঁটে। এই বেঁটে ব্যাপার নিয়ে জীবনে কম ঝামেলায় জড়ায়নি সে। সাইজে অতিমাত্রায় ছোট হওয়ার কারণে ক্লাসের দুষ্ট ছেলেরা আড়াল থেকে তামান্নাকে ‘হাফ টিকিট’ নামে ব্যঙ্গ করত।
যা হোক, অনেক লড়াই-বিগ্রহের পর দুই পরিবার এই বিয়ে মেনে নিলেও মূল সমস্যা শুরু হয় শুভ আর তামান্নার মধ্যেই। দাম্পত্য জীবনে এসে কেন জানি ওরা দু’জন দু’জনকে সহ্য করতেই পারে না। এই সহ্য করতে পারা-না পারার মধ্য দিয়ে কেটে গেল একটি বছর। তত দিনে মা হয়ে গেছে তামান্না। একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তানের জনক-জননী হয়ে ওঠে শুভ-তামান্না। পুত্রের নাম রাখা হয় রকি।
২.
শুভ আর তামান্নার মনোমালিন্য দিন দিন বাড়তেই থাকে। তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে ওরা একে অন্যের সাথে দা-কুমড়ো সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। তামান্না সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে আর এই স্বামী নামের অমানুষের সাথে এক ছাদের তলে থাকবে না। শুভও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে এই বজ্জাত বউয়ের সাথে সংসার করবে না। দু’জনেই চায় ব্রেকআপ।
কিন্তু সমস্যা দেখা দিলো রকিকে নিয়ে। তামান্না চায় বিচ্ছেদ হলে সে রকিকে নেবে, কারণ সে রকির মা। শুভ চায় বিচ্ছেদের পর সে-ই রকিকে নেবে, কারণ সে রকির বাবা। এই নিয়ে মহা গ্যাঞ্জাম। এই মহা গ্যাঞ্জাম খতম করতে দুজনেই একদিন সকালে গেল এনায়েত উল্লার কাছে।
এনায়েত উল্লা এলাকার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি। যেকোনো সামাজিক অপরাধের বিচার-সালিসে এনায়েত উল্লাকে ডাকা হয়। তিনি তার সুস্থ বিচার করে দেন।
এনায়েত উল্লা শুভ আর তামান্নার বক্তব্য শুনে বললেন, তার মানে তোমরা দু’জনেই সন্তানটাকে পেতে চাও। তাই না?
শুভ ও তামান্না এক বাক্যে বলল, হ্যাঁ।
এনায়েত উল্লা কিছুক্ষণ কী যেন ভেবে তারপর বললেন, তোমরা আরো একটি বছর একসাথে সংসার করো। এই এক বছরে তোমাদের আরো একটি সন্তান হলে সমস্যার সমাধান হবে। দু’জনেই তখন একটি করে সন্তান পাবে।
শুভ আর তামান্না এনায়েত উল্লার এমন পরামর্শে প্রথমে দ্বিমত প্রকাশ করলেও পরে ভেবে দেখেছে পরামর্শটিতে যুক্তি আছে।
৩.
ঠিক এক বছর পরের ঘটনা। একদিন দুপুরে এনায়েত উল্লার মোবাইলে একটি কল এলো।
‘হ্যালো কে বলছেন?’
‘চাচা, আমি তামান্না।’
এনায়েত প্রথমে চিনতে পারেননি। পরে তামান্নার বিস্তারিত ব্যাখ্যা শুনে মনে পড়ল। এই এক বছরে তামান্না আবার মা হয়েছে। এনায়েত উল্লাকে সে জানাল তারা এবার আলাদা হতে চায়।
যেহেতু তোমরা আবার বাবা-মা হয়েছ, দু’জনে দু’টি বাচ্ছা নিয়ে যে যার রাস্তা ধরো।
কিন্তু চাচা, সমস্যা হচ্ছে এবার আমি যমজ সন্তানের মা হয়েছি। মোট তিনটি বাচ্চা থেকে আমি চাইছি দু’টি নেবো, আর শুভ নেবে একটি। কিন্তু সে মানছে না।
মানছে না কেন?
শুভ চাইছে সে নেবে দু’টি বাচ্চা, আর আমি তা মানছি না। এখন কী করা যায় চাচা?
এনায়েত উল্লা কী জবাব দেবেন, বুঝতে পারছেন না। তার দুনিয়া কাঁপানো হাসি আসছে।


আরো সংবাদ



premium cement