২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

থাপ্পড়

-

ভাবছি মতি ভাইকে নিয়ে কিছুই লিখব না; কিন্তু মতি ভাই আমার মেজাজ গরম করে দিয়েছে।
রাত ১০টার দিকে চা খেতে গেলাম মিরপুর-১০ এ। মনের সুখে চায়ে চুমুক দিয়ে যাচ্ছি। পাশেই দেখি চোখ লাল করে দাঁড়িয়ে আছে মতি ভাই। এর জ্বালায় তো দেখি ঢাকা শহরে চলা মুশকিল। যেখানে যাই সেখানেই মতি ভাইয়ের সাথে দেখা হয়। মতি ভাই রাগ করে তার হাতের চায়ের অবশিষ্টাংশ আমার গায়ে নিক্ষেপ করে; কিন্তু সে চা আমার গায়ে না পড়ে ইয়া মোটা এক লোকের গায়ে পড়ে। লোকটা তৎক্ষণাৎ মতি ভাইয়ের পেছনের যে ক’টা চুল আছে তার মুঠি চেপে ধরে। উত্তম-মধ্যম দেয়ার পর আমি গিয়ে থামাই। আমিও একটু ওয়েট করছিলাম, মতি ভাই কিছু উত্তম-মধ্যম খেয়ে নিক। মতি ভাই ঘেমে গেছে। বুদ্ধি করে একটা সেভেনআপ নিয়ে তার হাতে ধরিয়ে দিলাম। সে দেরি না করে পুরোটাই আমার মাথায় ঢেলে দেয়। আমি কিছু না বলে দাঁড়িয়ে আছি। আমার প্রতি মতি ভাইয়ের এত ক্ষোভ কেন আমি নিজেও বুঝি না।
Ñ আচ্ছা মতি ভাই, কী হয়েছে তোমার?
Ñ আবার কথা কস! কী হয় নাই বল?
Ñ আমার ওপর এত রাগ কেন?
Ñ রাগ মানে, তোরে বানামু দাঁড়া।
এ কথা বলেই দৌড়ানো শুরু করল মতি ভাই। শাহ আলী মার্কেটের পেছনে এসে আমাকে বেশ শাসিয়ে গেল।
Ñ মতি ভাই, তুমি আসলেই অনেক ভালো।
মতি ভাই আনমনা হয়ে গেল। আমার কথা শোনে তার বিশ্বাস হচ্ছে না।
Ñ স্যরি তারেক, তোকে অনেক কথা বলেছি। তুইও অনেক ভালো।
আমি মনে মনে বলি, ভালোর কী দেখছো। একটু পর বুঝবা।
Ñ আচ্ছা, তারেক আমাকে তুই হঠাৎ ভালো বললি কেন?
Ñ না আসলে, তোমাকে দেখতে আমার এক দাদার মতো লাগছে। তিনি অনেক ভালো তো, তাই তোমাকে ভুলে-ভালে বলে ফেলেছি।
Ñ ভুলে মানে? আর দাদার মতো মানে কী?
Ñ না মানে, মোটা লোকটা তোমার চুল যে ক’টা ছিল সেগুলোও টেনে তুলে নিয়ে গেছে। এখন দেখতে একদম দাদাদের মতো লাগে।
মতি ভাই আমার কথা শোনে ঠাস করে নিজের গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন। পরের চড়টা অবশ্য আমাকেই...
রাগে-ক্ষোভে মতি ভাইকে একটা উচিত শিক্ষা দেয়ার অপেক্ষায় থাকলাম। মতি ভাইকে বললাম,
Ñ মতি ভাই, তোমার মাথায় যে ক’টা চুল আছে; এগুলো একটু কেটে ঠিকঠাক রাখতে পারো না?
Ñ তোর সমস্যা কী?
Ñ আমার কোনো সমস্যা নেই। সমস্যাটা তোমার?
Ñ আমার আবার কিসের সমস্যা?
Ñ এই যে টাক মাথাটা আছে, তার পেছনে তো দু-চারটা চুল আছে। ওগুলো না কাটাতে কাটাতে কেমন যেন উসকো-খুসকো হয়ে আছে। একটু কেটেকুটে রাখলে সুন্দর দেখাত।
Ñ ভালো একটা কথা বলছিস।
Ñ এখন চলো চুল কেটে আসবে।
Ñ আমার কাছে টাকা নেই।
Ñ আচ্ছা টাকাটা আমিই দেবো।
Ñ তোকে বিশ্বাস করা মুশকিল।
মতি ভাইকে বিশ্বাস করালাম টাকাটা আমি দেবো। আমি অবশ্য কথা দিয়ে কথা রাখার চেষ্টা করি। এ কারণে অনেকেই আমাকে পছন্দ করে। মতি ভাই মুখে যাই বলুক, অন্তর থেকে সে আমাকে পছন্দ করে।
সেলুনে বসে আছি আমরা দু’জন। মতি ভাই চুল কাটাবে আর আমি বসে বসে দেখব, এমন হতে পারে না। নরসুন্দরকে বললাম, চুল কাটা শেষ হলে মালিশের নাম দিয়ে মতি ভাইকে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে দিবা। নরসুন্দর আমার কথায় রাজি হয়ে গেল। ছেলেটা একধাপ বেশি এগিয়ে গিয়ে মতি ভাইকে থাপড়ানো শুরু করে দেয়। এই দৃশ্য দেখে আমি হাসছি। আমার হাসি দেখে মতি ভাই ঘটনা বুঝে ফেলে। সে কালবিলম্ব না করে আমাকে তাড়া করতে লাগল। এ দিকে নরসুন্দর পেছন থেকে চিৎকার করতে লাগল, ভাই টাকাটা দিয়ে যান।
কে শোনে কার কথা। আমার আর মতি ভাইয়ের ম্যারাথন চলতে থাকে।

 


আরো সংবাদ



premium cement