প্রশংসা
- জোবায়ের রাজু
- ১০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
আমাদের সংসার জীবনের পাঁচ বছর হতে চলছে। এই পাঁচ বছরে প্রশংসা করার মতো রুহির কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য কিছুই পাইনি; অথচ ঘটক এনায়েত উল্লা বিয়ের আগে ঠিকই বারবার বলেছেন, ‘এই মেয়ে রূপে-গুণে অতুলনীয়।’
ঘটকের কথা অনুযায়ী রুহি রূপে অতুলনীয় হলেও তার গুণ বলতে একটাইÑ রূপচর্চায় পারদর্শী। সকাল-সন্ধ্যা আয়নার সামনে বসে বসে রূপচর্চার যাবতীয় কেমিক্যাল প্রসাধনী মুখে ঘষাঘষি করার বেলায় রুহির হিম্মত বড়ই দেখার বিষয়। এসব দেখে হিংসায় আমার গা ঘ্যান ঘ্যান করে। সংসারে তার ততটা মন নেই, যতটা মন রূপচর্চায়।
ঘর পরিপাটি রাখা, উঠোন-ভিটা ঝাড়– দেয়া, হাঁড়িপাতিল মাজা, টয়লেটের কমোড ক্লিন রাখাÑ এসব কর্মসাধনে রুহি কখনোই দায়িত্বশীল নয়। এতসব দায়িত্বহীনতার মধ্যে তার সবচেয়ে নিন্দিত কাজ হচ্ছে রান্নাশিল্প। রান্নায় রুহি এতটাই আনাড়ি যে, তরকারিতে আজ লবণ বেশি দিলে কাল মসলা কম দেয়। দাম্পত্যজীবনের এই পাঁচ বছরে শান্তিমতো একবেলা আনন্দে খেতে পারলাম না। তরকারি রান্না রুহির এতটাই ফালতু হয় যে, সেটা মুখেই দেয়া যায় না। না দিয়েও উপায় নেই। বিয়ে করে ঠেকেছি যে।
২. আমি ঠিক করলাম, রুহির প্রশংসা করব। তাতে যদি কোনো কাজ হয়; কিন্তু রুহির মধ্যে প্রশংসা করার মতো কোনো যোগ্যতাই দেখছি না। প্রশংসা করার মতো তার একটাই গুণÑ ভালো রূপচর্চা করতে পারে।
দুপুরে খেতে বসেছি। আজো যথারীতি রুহির রান্নায় গরমিল। ডালে লবণ বেশি। খাওয়ার মাঝামাঝি অবস্থায় এক বাটি চিংড়ি মাছ পাতে ঢেলে দিলো রুহি। চিংড়ি মাছ মুখে দিতেই অবাক হয়ে গেলাম। এত টেস্ট হয়েছে। পাঁচ বছরের সংসারে এটাই আজ রুহির রান্না করা কোনো ভালো খাবার। আমি তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে রান্নার প্রশংসা করে বললাম, ‘মারহাবা মারহাবা। চিংড়িগুলো এতই ভালো যে আরো খেতে ইচ্ছে করছে। আর আছে! দাও তো!’
চেঁচিয়ে ওঠার মতো কোনো কথা বলিনি। তবুও রুহি চেঁচিয়ে উঠে আমার গায়ে একগ্লাস পানি ঢেলে দিলো।
‘একি! এ পাগলামির কারণ কী?’
‘পাঁচ বছরে আমার রান্না খেয়ে কোনো দিন একটু প্রশংসা করেনি। আজ পাশের বাসার সালমা ভাবীর পাঠানো এই চিংড়ি খেয়ে এত এত মিঠাকথার ফুলঝুরি!’
‘এটা সালমা ভাবী পাঠিয়েছে?’
‘হ্যাঁ।’
‘এ জন্যই এত টেস্ট। আমি তো অবাক, তুমি কিভাবে এত ভালো রাঁধতে পারলে!’
‘কী! আমি ভালো রাঁধি না?’
‘না।’
‘মুখে লাগাম দিয়ে কথা বলো।’
আমি চুপসে গেলাম। জানি কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। ঝগড়া বাড়বে। জীবনে কখনো রুহির কোনো গুণের প্রশংসা করতে পারব কি না কে জানে!