২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভদ্রলোক ও বস্তির ছেলে

-

হইচই করে ঘুরে বেড়ানো বেকার জীবন থেকে অব্যাহতি নেয়ার প্রতিবাদ করে আব্বা বললেন, ‘আর টো টো করে ঘুরে বেড়াসনে। এবার ব্যবসা নিয়ে কর্মজীবন শুরু কর।’
আব্বাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, ‘ব্যবসা করতে টাকা লাগে। টাকা দেবে কে?’
আব্বা জোর গলায় বললেন, ‘টাকা আমি দেবো।’
আব্বার কথায় ফাইনালি চিন্তা করলাম যে এবার সত্যি সত্যি আমার কর্মজীবনে প্রবেশ দরকার। আর কতদিন বাপের ঘাড়ে বসে বসে খাবো।
রাতে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করলাম কী
ধরনের ব্যবসা শুরু করা যায়। মুদি, কাপড়, ফার্মেসি, না জুয়েলারি! কিন্তু কোনো ব্যবসাই আমার মনের মতো
হলো না।
হঠাৎ মনে হলো জেন্টস পার্লার খুলে বসলে মন্দ হয় না। মহল্লার ইয়ং পোলাপানগুলো বেশ মর্ডান আর স্টাইলিশ হয়ে উঠেছে। ওদের চুল কাটার ধরন দেখলে মনে হয় ইয়ং জেনারেশন কত আপডেট। চিন্তা করে দেখলাম আমাদের বাজারে কোনো জেন্টস পার্লার নেই। একটা জেন্টস পার্লার খুললে ওসব স্টাইলিশ পোলাপান দলবেঁধে লাইনে দাঁড়াবে।
আব্বা প্রথমে আমার পরিকল্পনার
কথা শুনে নাক আসমানে তুলে বললেন, ‘গাঁও গেরামে এসব চলবে না।’
আব্বাকে বুঝিয়ে বলার পর অবশেষে তিনি রায় দিলেন। সাত দিনের মাথায় আমিশাপাড়া বাজারে খুলে ফেললাম আমার স্বপ্নের জেন্টস পার্লার।
শুরুতেই আমার জেন্টস পার্লার মার্কেট পেলেও দিন দিন তা জনপ্রিয়তা
হারাতে থাকে। শুধু হেয়ার স্টাইল
করার জন্য পোলাপান আসে বটে,
তাও ন্যূনতম কম। দিনে দুই-তিনটার বেশি কাস্টমার আসে না বলে আমি বসে বসে মশা মারি।
২.
আজ একজন ভদ্রলোক একটা শিশু ছেলেকে নিয়ে আমার জেন্টস পার্লারে ঢুকলেন। বেশ সুপুরুষ তিনি। টল ফিগার। অমিতাভ বচ্চনের চেহারার সাথে তার চেহারার খানিক মিল আছে। ভদ্রলোক তার সাথে আনা ছোট্ট শিশু
ছেলেটিকে পাশের সিটে বসতে বলে আমাকে হুকুম করলেন তার চুল কাটা এবং সাদা চুলে কলপ করে দেয়ার জন্য। দায়িত্বের দায় থেকে আমি তাই করে দিলাম প্রায় বিশ মিনিট ধরে। বিশ মিনিট পর তিনি তার সাথে আনা বাচ্চা ছেলেটিকে চুল কাটতে বসিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ওর চুলগুলো ভালোভাবে কেটে দিন।’
শিশু ছেলেটির চুল কাটাতে মনোযোগী হলাম। ভদ্রলোক ছেলেটিকে বললেন, ‘তুমি বসে থাকো বাবা। আমি পেপার কিনতে যাচ্ছি। পাঁচ মিনিট পর ফিরে আসব।’
কিন্তু শিশু ছেলেটির চুল কাটার এক ঘণ্টা পার হওয়ার পরও ভদ্রলোকের ফেরার নাম নেই। ব্যাপার কী! এতটুকু শিশু ছেলেকে একা রেখে কেউ এতক্ষণ বাইরে থাকে!
‘এই খোকা, তোমার নাম কী?’
‘রনি।’
‘তোমার চুল কাটা পছন্দ হইছে?’
‘খুব হইছে।’
‘তোমার বাবা সম্ভবত তোমার কথা ভুলে বাড়ি চলে গেছেন!’
‘উনি আমার বাবা নন।’
‘মানে! কে উনি?’
‘চিনি না।’
‘ফাজলামো করছো কেন রনি?’
‘সত্যি বলছি। আমি বস্তির ছেলে। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি আমাকে ডেকে বললেনÑ তোমার চুল বেশ বড় হয়েছে। চলো ফ্রিতে চুল কাটিয়ে আনি। আমিও ফ্রিতে চুল কাটাব।’
‘হোয়াট? কী বলছ এসব?’
‘জি। সত্যি বলছি।’
কয় কী রনি! ভদ্রলোক, ধুর কিসের ভদ্রলোক! ওই হারামজাদা আমাকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে নিজেও ফ্রিতে চুল কেটে পেপার কেনার নাম করে ভেগে গেল, সাথে ওই বস্তির ছেলেকেও...! জীবনে এমন বোকা আর কখনো হয়েছি বলে মনে পড়ে না।


আরো সংবাদ



premium cement
বান্দরবানের গহীন জঙ্গলে কেএনএ’র গোপন আস্তানার সন্ধান হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে ডিসি মশিউর ও এডিসি জুয়েল বরখাস্ত গাজীপুরে আরো এক মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান রাজশাহীর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে আইসিইউ ইউনিট উদ্বোধন ডেঙ্গুতে এক দিনে বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৭৯ পার্থ টেস্টে জয়ের সুবাস পাচ্ছে ভারত ব্যবসায়ী জালাল উদ্দীন হত্যা : শেখ হাসিনাসহ ১২৯ জনের নামে মামলা ডিসেম্বর থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে ঢাকা-নড়াইল-খুলনা রুটে নারায়ণগঞ্জে ১৬ কোটি টাকার ভারতীয় কাপড় উদ্ধার গলাচিপায় জালে ধরা পড়ল ২০০ বছরের জলপাইরঙ্গা কাছিম আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার হলেন পান্ত

সকল