২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

প্রেমিক হিমু

-

বিশেষ একজনের সাথে দেখা হওয়ার কথা ছিল। হলো না। তাই টিএসসির মোড়ে একটি চায়ের দোকানে শীতের রাতে কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে রইলাম। দোকানিকে বললাম, ‘চাচা, চট জলদি এককাপ চা দিন।’
চা দিলেন। চায়ের কাপটা বেশ বয়স্ক টাইপের মনে হলো। গায়ে হলদে হলদে ভাব। মন পাখিটা ডানা ঝাপটে চলে গেল ভাবনার রাজ্যে। আমি কাপটির দিকে তাকিয়ে আনমনা হয়ে গেলাম। এ সুযোগে দুষ্টু কাপটি মুচকি হেসে বলল, ‘জানেন?’
আমি খানিকটা বিচলিত হলাম, ‘আরে! চায়ের কাপ দেখছি কথাও বলতে পারে।’
যাই হোক, আমি তার প্রশ্নের উত্তর দিলাম। বললাম, ‘না’।
‘ওহ, জানবেন কী করে, আমি তো বলিইনি। শোনেন, আমি হলাম হিমু। দেখছেন না আমার সারা গা হলদে।’
‘হিমু মানে?’
‘জনাব মনে হয় হিমু সমগ্র পড়েননি?’
‘পড়েছি। কিন্তু তুমি হিমু হলে কেমনে?’
এবার চায়ের কাপ চোখ মিটমিট করে বলল, ‘আপনি কি জানেন?’
‘না। জানি না।’
‘ওহ, জানবেন কী করে, আমি তো বলিইনি। একখান ইন্টারেস্টিং কথা বলি। তার আগে বলুন, লাইনি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রোমিও-জুলিয়েটের প্রেম কাহিনী জানেন?’
‘না।’
চায়ের কাপ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল, ‘আরে! আপনি তো দেখছি কিছুই জানেন না। ইতিহাস একটু পইড়েন। যেহেতু জানেন না সেহেতু কান খাড়া করে শোনেন। লাইলির একনজর দর্শন পাওয়ার জন্য মজনু বারো বছর বড়শি ফেলে বসেছিল। শিরিকে পাওয়ার জন্য বেচারা ফরহাদ বারো বছর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন। আর রোমিও-জুলিয়েটের কথা? সে কথা আমি আর এ মুহূর্তে বলতে চাচ্ছি না। আপনি একসময় পড়ে নিয়েন। এবার ডিজিটাল যুগের প্রেমিকদের কথাই বলি। ডিজিটাল যুগের প্রেমিকরা মানে আপনারা তীব্র শীতকে পাশ কাটিয়ে পার্কে কিংবা লেকের পাড়ে বসে প্রেয়সীর মন পাওয়ার বৃথা চেষ্টা করেন। বসে থাকতে থাকতে বসার স্থান গরম হয়, স্থান থেকে ধোয়া উঠে মাগার প্রেয়সীর মন গলে না। বাদাম টিপতে টিপতে হাতে দাগ পড়ে মাগার প্রেয়সীর মনে এতটুকু দাগ কাটে না। আরামের ঘুম হারাম করে রাতের পর রাত কথা বলেন। তাই তো চায়ের দোকানে এসে রোগা মোরগের মতো পাখনা ফেলে ঝিমান।
অথচ ওই সব রমণী ঘুরতে ঘুরতে একসময় কোনো এক অভিকর্ষজ ত্বরণের প্রভাবে ছুটে আসে এই চায়ের দোকানে। পরম যতেœ আলতো হাতে আমাকে স্পর্শ করে, মধুর চুম্বনে আমার ঠোঁটে এঁকে দেয় ভালোবাসার তিলক। আমি লিপস্টিকের রঙ মুছতে মুছতে বলিÑ এত ভালোবেসো না আমায় বিনিময়ে কি দেবো...।’
তখন যুবতীরা কী বলে জানেন? বলে, ‘এই পাগলা, আমি তোমার কাছে কিছু চেয়েছি? তোমার ছোঁয়ায় আমার প্রাণ সতেজ হয়, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী আছে?’
সুন্দরীদের এত ভালোবাসা পেয়ে নিজেকে চযরষধহঃযৎড়ঢ়রংঃ মনে হয়।’
‘চযরষধহঃযৎড়ঢ়রংঃ মানে?’
‘আপনি তো দেখছি ইংরেজিও জানেন না। চযরষধহঃযৎড়ঢ়রংঃ মানে হলো বিশ্বপ্রেমিক।’
আমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। ‘একে ঘায়েল করা দরকার।’
বললাম, ‘তোমাকে তো অনেক বৃদ্ধ মানুষও চুমু দেয়।’
চায়ের কাপ মুখ কালো করে বলল, ‘তখন আমি খোলসবন্দী হয়ে যাই।’
‘খোলসবন্দী হয়ে যাও মানে?’
‘কেন, কচ্ছপ দেখেননি, কচ্ছপ কোনো প্রতিকূল পরিবেশে যেমন তার মাথা খোলসের ভিতর নিয়ে যায়। আমিও ঠিক তেমনি করি। আবেগের ধার ধারি না।’
‘কেন?’
‘বারে, ওই যে বললাম, আমি হিমু। হিমুদের আবেগপ্রবণ হলে কি চলে?’
একটু থেমে কাপ আবার বলল, ‘একটা কথা বলি?’
‘বলো।’
‘আমার মন বলছে আপনি চাটুকু খাবেন না।’
‘যেহেতু নিজেকে বিশ্বপ্রেমিক দাবি করো তার মানে তুমি পুরুষ। একজন সুপুরুষ হয়ে একটি পুরুষ চায়ের কাপে চুমুক দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’
‘এবার শেষবারের মতো একটি কথা বলি?’
‘বলো।’
‘আমার মনে হয় আমার আয়ু দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
দেখলাম চা ঠাণ্ডায় জমে গেছে। এই চা খাওয়ার চেয়ে ফেলে দেয়াই ভালো। আমার মাথায় রক্ত ওঠে গেল। বললাম, ‘নিজেকে বিশ্বপ্রেমিক মনে করো, না? ইবলিশ কোথাকার।’
বলেই কাপটিকে আছড়ে ফেললাম মাটিতে। চিং করে কাপটি ভেঙে গেল। সম্বিত ফিরে পেলাম। দেখলাম চার দিকে মানুষজন মিটমিট করে তাকাচ্ছে আমার দিকে।
দোকানদার বলল, ‘কাহা, আন্নে হাগল হয়ে গেলেননি?’
আমি কথা না বাড়িয়ে পঞ্চাশটা টাকা দোকানদারের হাতে দিয়ে বললাম, ‘একটি কাপ কিনে নিয়েন।’
আমি হন হন করে চলে এলাম। একবারও পেছন ফিরে তাকালাম না। পাছে লোকে যা বলে বলুক।


আরো সংবাদ



premium cement
সিলেট সীমান্তে ৬৩ লাখ টাকার চোরাই পণ্যসহ আটক ২ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নিয়োগ করা হবে অবসরপ্রাপ্তদের : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ মৃত্যু : ভাংচুর পুরান ঢাকার ২ কলেজে পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের লেনদেন স্থগিত সাগর থেকে টুনা মাছ আহরণে সহযোগিতা দেবে মালদ্বীপ সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কেন আলোচনায় ২৩ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বান্দরবানের গহীন জঙ্গলে কেএনএ’র গোপন আস্তানার সন্ধান হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে ডিসি মশিউর ও এডিসি জুয়েল বরখাস্ত গাজীপুরে আরো এক মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান রাজশাহীর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে আইসিইউ ইউনিট উদ্বোধন

সকল