মোকলেস ভাইয়ের লন্ডন বিড়ম্বনা
- কৌশিক সূত্রধর
- ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
মাধ্যমিক পাস করে মোকলেস ভাই বেকার হয়ে বাড়িতে বসে আছে। সারাদিন শুধু ঘোরাঘুরি আর বন্ধুদের সাথে চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়া ছাড়া কোনো কাজ কর্মেই তার হাত পড়ে না।
মোকলেস ভাই এরই মধ্যে তার মা-বাবার কাছে রোজই গালাগালি শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এর জন্য গ্রামের সবাই তাকে নিয়ে বেশ কটূক্তি করত। সবাই বলত, এ কী কাণ্ড! এত বড় দামড়া ছেলে কিনা পড়াশোনা বাদ দিয়ে বেকার হয়ে ঘুরছে।
অবশ্য মোকলেস ভাই এসব কথায় কোনো ভ্রƒক্ষেপই করত না। মোকলেস ভাইয়ের শুধু খেয়ে দেয়ে ঘুম আর স্বপ্ন দেখাটাই যেন বড় একটা চাকরি।
মোকলেস ভাইয়ের বন্ধুরা প্রায় সময় বলত, বন্ধু একটা চাকরি বাকরি কর। এভাবে আর কত দিন চলবি।
মোকলেস ভাই বলত, সময় আসুক দেখবি আমি জীবনে অনেক বড় কিছু কইরা দেখামু।
এ দিকে মোকলেস ভাইয়ের যত বন্ধু-বান্ধব আছে সবাই চাকরি-বাকরি করে মোটামুটি সেটেল হয়ে গেছে। এক রয়ে গেছে আমাদের মোকলেস ভাই।
একদিন মোকলেস ভাই দুই হাতে দুইটা মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে দৌড়ে চায়ের দোকানে হাজির হলো। তাকে দেখে বেশ আনন্দিত মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, সে হিমালয় পর্বত জয় করে দেশে ফিরেছে।
মোকলেস ভাইয়ের বন্ধুরা সবাই আগ্রহের সাথে বলল কী রে মোকলেস, হঠাৎ মিষ্টির প্যাকেট নিয়া চায়ের দোকানে হাজির হইলি, কারণটা কী? কোনো সুখবর আছে নাকি?
মোকলেস ভাই বলল, সুখবর তো অবশ্যই আছে। আমি আজ অনেক হ্যাপি রে বন্ধু।
কী ব্যাপার খুইলা বল? মোকলেস ভাইয়ের বন্ধুরা বলল।
বন্ধু তোদের আমি বলছিলাম না একদিন আমি অনেক বড় কিছু কইরা দেখামু। আজ সেটা করতে পারছি। সামনের সপ্তাহে লন্ডন চইলা যাইতাছি বিমানে কইরা। লন্ডনের এক বড় কোম্পানিতে আমার চাকরি ফাইনাল হইয়া গেছে। সামনের সপ্তাহে লন্ডন পৌছিয়া চাকরিতে জয়েন করুম।
তাই শুনে মোকলেস ভাইয়ের বন্ধুরা বড় বড় চোখ করে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল।
বলিস কি রে, কিভাবে এতসব করলি? কোনো স্বপ্নটপ্ন দেখছিস না তো?
মোকলেস ভাই বলল, আরে না লন্ডনে আমার এক দুঃসম্পর্কের মামা থাকে। সেসব কিছু ফাইনাল করে দিছে। তাই সামনের সপ্তাহে চলে যাইতে হইব।
এই কথা বলতে বলতে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতে লাগল মোকলেস ভাই। বন্ধুরা রীতিমতো অবাক হয়ে একে অপরকে বলতে লাগল, এত দিন মোকলেসরে নিয়া কত কটূক্তি করছি কোনো কাজকর্ম করে না দেইখা। আজকে ওই নাকি বিদেশে যাইব চাকরি করবার।
বন্ধুরা আমি বাড়ি যাই। অনেক কাজ আছে সবাইরে খবরটা দিতে হইব। এই বলে মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে সবার থেকে বিদায় নিলো মোকলেস ভাই।
ধীরে ধীরে মোকলেস ভাইয়ের লন্ডন যাওয়ার তারিখ এসে হাজির হলো। সকাল ১০টায় ফ্লাইট। সকালে উঠেই মোকলেস ভাই একদম রেডি হয়ে ফিটফাট। বাড়ির সামনে ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে। সরাসরি এয়ারপোর্ট যাবে। মোকলেস ভাই বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়স্বজন সবার উপস্থিতিতে ট্যাক্সিতে চরে। সবার থেকে বিদায় নিলো মোকলেস ভাই।
বাড়ি থেকে প্রায় তিন ঘণ্টার রাস্তা। এ দিকে প্রায় আট বেজে গেছে। মোকলেস ভাই বেশ উত্তেজিত হয়ে বলছে, একটু জোরে চলেন ভাই। দেরি হইয়া যাইতাছে।
ড্রাইভার তা শোনে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিলো। হঠাৎ ব্রেক কসে গাড়ি থেমিয়ে দিলো ড্রাইভার। ভাই কী হইছে গাড়ি থামাইলেন কেন? মোকলেস ভাই রাগান্বিত হয়ে বলল।
সামনে চেয়ে দেখেন রাস্তায় বিশাল জ্যাম। গাড়ি আর এগোনো সম্ভব না। জ্যাম ছুটতে ছুটে প্রায় এগারোটা বেজে যাবে।
মোকলেস ভাই সে কথা শোনে মাথায় হাত দিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে মালপত্র বের করে হাঁটতে শুরু করল। হাঁটতে হাঁটতে প্রায় ৯টা বেজে গেছে। এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাইট ছাড়তে মাত্র এক ঘণ্টা বাকি। এ দিকে কোনো গাড়িও নেই। সামনে একটা রিকশা দেখা যাচ্ছে। মোকলেস ভাই দৌড়ে গিয়ে রিকশায় উঠে বসল।
রিকশাওয়ালাকে বলল, ভাই জলদি কইরা এয়ারপোর্ট চলেন। দশটায় ফ্লাইট আছে।
অবশেষে মোকলেস ভাই রিকশায় করে এয়ারপোর্ট পৌঁছাল। এ দিকে সব শেষ। ঘড়িতে প্রায় সাড়ে দশটা বেজে গেছে। মোকলেস ভাই দৌড়ে বিমানের দিকে ছুটতে লাগল। হঠাৎ একজন এয়ারপোর্টের কর্মকর্তা বলল, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
মোকলেস ভাই বলল, আমার লন্ডনের ফ্লাইট আছে, তাই বিমানে উঠতে যাচ্ছি। এয়ারপোর্টের কর্মকর্তা বলল, সে ফ্লাইট প্রায় আধ ঘণ্টা আগে ছেড়ে দিছে।
মোকলেস ভাই এ কথা শোনে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে এয়ারপোর্ট এ বসে হা-হুতাশ করতে লাগল। এমন সময় কে যেন তার মাথায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে বলল, মোকলেস বাবা সকাল হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠে বাজারে যা। বেশি দেরি করলে বাজার ভেঙে যাবে। জলদি যা।
তা শোনে মোকলেস ভাই বিছানা থেকে উঠে থ হয়ে বসে রইল।