অটোচালক মফিজ ভাই
- রুহুল আমিন রাকিব
- ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
সেদিন দেখলাম মফিজ ভাই বহুত খুশি মনে দুর্গাপুর বাজারের দিকে যাইতাছে। আমারে দেখে ফাটা বাঁশের মতো গলা ছাইড়া দিয়া এক খান গানও ধরল। মফিজ ভাইয়ের এত খুশির কারণ কী! কাছে ডাক দিয়া বললাম, মনে রঙ লাগল কেমনে?
আমার কথা শোনে মফিজ ভাই বলল, এহন আমার কথা বলার সময় নাইকা! তুই আমার লগে অবসর সময় যহন দেখা করস তহন তোর লগে জমাই আড্ডা দিমু।
মফিজ ভাইয়ের এমন কথা শোনে মনটা বেশ খারাপ হইল! পরের দিন মফিজ ভাইরে দেখি এক খান অটো রিকশা চালাই যাইতাছে। আমি বললাম, কী ব্যাপার ভাই অটো দেখতে নতুন নতুন মনে হইতাছে! আপনি কিনছেন মনে হয়?
মফিজ ভাই এক গাল হেসে বলল, হ। ঠিক কথা কইছ। এই অটো রিকশা আমি কালকে কিনে আনছি বন্দর থাইকা। এহন থেকে আমি অটো চালামু।
এ কথা শোনে মফিজ ভাইকে বললাম তাহলে তো ভালোই হলো! আমরাও মাঝে মধ্যে বাজার সদাই করতে যাবো আপনার অটোয়।
আমার মুখের কথা শেষ না হতেই মফিজ ভাই বলল, আরে বোকারাম চুপ কর। তোর মতো পল্টি বাজ পোলাপানরে উঠামু আমার অটোয়? এ কথা তুই কেমনে ভাবলি বলত?
মফিজ ভাই আমারে মুখের ওপর বলে দিলো, হোনÑ আমি কোনো ছেলে মানুষকে আমার অটোয় উঠাব না। আমি সব সময় মেয়ে মানুষকে আমার অটোয় উঠাব।
আমি বললাম, এমন কঠিন সিদ্ধান্তের কারণ কী?
এবার মফিজ ভাই বলল, শোন দেশের যে অবস্থা! পত্রিকার পাতায় চোখ পড়লে দেখা যায়, আজ এখানে তো কালকে ওখানে। ওমুক মেয়ে বাসে, অটোয়, সিএনজিতে ধর্ষিত হয়েছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার এই অটোয় সব সময় শুধু মেয়ে মানুষ উঠাব। এতে আমি সব সময় টেনশন মুক্ত থাকব।
মফিজ ভাইয়ের এমন কথা শোনে আমি বললাম, হ। ঠিক কথা কইছেন। আপনার কথায় যুক্তি আছে। তবে সাবধানে অটো চালাইয়েন দেশের যা অবস্থা বলা ত যায় না! এই অটোর লোভে কেউ আপনারে খুনও করতে পারে।
এ কথা বলে আমি মফিজ ভাইয়ের থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। ক’দিন ধরে বেশ ভালোই চলল। মফিজ ভাইয়ের ইনকাম। এখন আর আগের মতো মফিজ ভাইকে আমাদের আড্ডায় পাওয়া যায় না। অনেক অনেক মিস করি সবাই। তবুও বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে মফিজ ভাইকে আমরা এখন আর তেমন একটা আমাদের সাথে আড্ডায় ডাকি না।
হঠাৎ করে একদিন রাতে মফিজ ভাইকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। সাথে ওনার অটোও নেই! সে দিন সারা রাতে মফিজ ভাই বাড়ি আসেনি।
পরের দিন আমাদের গ্রাম থেকেও তিন গ্রাম পরে। একটা ব্রিজের নিচে মফিজ ভাইকে অজ্ঞান অবস্থায় খুঁজে পাওয়া যায়। ধরাধরি করে মফিজ ভাইকে হাসপাতালে নেয়া হয়। তিন দিন পরে মফিজ ভাই একটু সুস্থ হলে ওনার কাছে সে দিন রাতের ঘটনার বিষয় জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে মফিজ ভাই বলল, বোরকা পরা তিনজন মেয়ে আসে। সে দিন সন্ধ্যার সময় আমাকে বলল ওমুক জায়গায় যাবো কি না? আমি উত্তরে বললাম, অবশ্যই যাবো। কারণ আমার অটোয় আমি সব সময় মেয়ে মানুষকে ওঠাই। এ কথা বলেই মফিজ ভাই কান্নাভেজা কণ্ঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল। কিছু পথ যাওয়ার পরে হঠাৎ করে ওই তিনজন আমার গলায় ছুরি ধরে। আমাকে ভয় দেখিয়ে বলে, ভালোয় ভালোয় অটো দাও। নয়তো জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে না। অটোও হারাবে। আমি ওদের কথা শোনে অনেক জোরে চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। ওরা আমাকে অনেক মারধর করে! একপর্যায়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ব্রিজের নিচে ফেলে দেয়। বাকিটা আমি কিছু জানি না রে ভাই। মফিজ ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে আমার মনে খুব মায়া হলেও সান্ত্বনা দেয়া আর কিছুই দিতে পারলাম না। শেষে মফিজ ভাইকে বললাম, আপনি যদি শুধু মেয়ে মানুষ না উঠিয়ে অটোয় ছেলে মেয়ে সবাইকে উঠাতেন তবে আজ হয়তো আপনার এই পরিণতি হতো না।
আমার কথা শোনে, মফিজ ভাই শুধু মাথা ঝাকায় আর বলে, আসলে আমি ভাবছিলাম কী, মেয়েমানুষরে অটোয় উঠালে ওদের সাথে নানা রকম গল্প করতে পারুম। আমার অটো চালানও হবে ওদের লগে টাংকিও মারা হবে। কিন্তু আমি কখনো ভাবতে পারিনি, ছেলে ছিনতাইকারী বোরকা পইরা আমার অটোয় উঠতে পারে।