২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জগলুর বেহায়া খোঁজা

-


নিতান্ত সাধারণ ঘরের সাধারণ ছেলে জগলু। বাপে মরার আগে জগলুকে এক অসাধারণ দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে যায়। জগলুকে বাপে জানাল তার কিছু জরুরি কথা আছে। সে কথা শুনে জগলু তার বাপের কাছে-কুলেই থাকত। সে আশা করেছিল, বাপে অন্তত কিছু টাকাকড়ি বা ধনসম্পত্তির খোঁজ দেবে। অথচ মরার আগে বাপ তাকে বললÑ বেটা জগলু, আমার মরার পর বেশি ট্যাকা-পয়সা খরচা করিস না।
দশ গাঁয়ের লোক দাওয়াত কইরা খাওয়ানোর দরকার নেই। যদি পারিস তাইলে কয়েকজন বেহায়াকে দাওয়াত কইরা খাওন-দাওন দিস।
তারপর বাপ মরে গিয়ে বাঁচল আর জগলু চিন্তায় চিন্তায় মরতে বসল। বেহায়া কাকে বলে, দেখতে কেমন, বেহায়ার গুণাগুণ কিছুই জানে না জগলু। সে মহাফাঁপড়ে পড়ল। এখন সে কোথায় খুঁজবে? কোথায় পাবে কাক্সিক্ষত বেহায়াকে? বিষয়টি ব্যাখ্যা করে যায়নি তার বাবা, তাই মাঝে মাঝে মরা বাপের ওপর রাগও করে। কিন্তু বাপের শেষ কথাটা রাখতেই হবে। এরপর ধীরেসুস্থে জগলু বের হয়ে পড়ে বেহায়া খুঁজতে।
রাস্তা দিয়ে একটি লোক যাচ্ছে। চিন্তিত জগলু তার পিছু নেয় এবং গল্প শুরু করে। তারা দু’জন গল্প করে আর হাঁটে। লোকটার হাতে এক হাঁড়ি তরতাজা জিওল মাছ। হাতের ব্যাগে নানারকম ফলফলাদি। জগলু কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে, ভাই আপনে কই যাইবেন?
উত্তরে লোকটি বলে, আর কইয়েন না ভাই, বিয়া করিছিন, সেই বউ আমারে তালাক দিয়া আরেকজনরে বিয়া করিচে। সেই ঘরে একটা ছাওয়াল হচে। তাই আমি জিনিসপত্র লিয়া যাচ্চি ছাওয়ালেক দেকতে।
এত কিছুর পরও যে ব্যাটা অন্যের বউ-ছাওয়ালেক দেখতে যেতে পারে, তার চেয়ে বেহায়া আর কে হতে পারে? জগলু তাকে অনুনয়-বিনয় করে দাওয়াত দেয়। লোকটিও খুশিমনে কবুল করে। কিন্তু কেবল একজন হলো। তার কমপক্ষে আরো তিনজন দরকার।
জগলুর বাড়িতে ভোট চাইতে আসে আলমাস আলী। লোকটা মেম্বারি ভোটে চার-চারবার ফেল মেরেছে। তবুও তার শখ মেম্বার সে হবেই। অথচ জনগণ তাকে ভোট দেয় না। ভোট না পেয়ে তার জনসেবা করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাই জনসেবা করার জন্য সে আবার বাড়ি বাড়ি এসেছে ভোট চাইতে। জগলু মিয়া মিলিয়ে দ্যাখে, এইডাও একখান বেহায়া। জগলু তারেও দাওয়াত দেয়। এখনো যে আলমাস আলীর মূল্য একবিন্দু কমেনি তা ভেবে লোকটি খুবই পুলকিত হয়।
দুশ্চিন্তায় ভোগা জগলু পরের দিন রাস্তায় বের হতেই দেখতে পায় তারই বন্ধু জগাই দাঁড়িয়ে আছে হাইস্কুলের গেটে। জগাই একটা বিশ্বপ্রেমিক এবং প্রেমের মাঠে জগাখিচুড়ি পাকাতে ওস্তাদ। জগলুর চোখের সামনে দিয়ে প্রেম করেছে কমপক্ষে ২০টা মেয়ের সাথে। কিন্তু কয়দিন যেতে-না-যেতেই বোল্ডআউট হয়ে যায় বন্ধু জগাই। তবে হার স্বীকার করে বসে থাকার পাত্র নয় জগাই। সে পুনরায় জুটিয়ে ফেলে নতুন প্রেমিকা। ওপরওয়ালা ওরে এতই পাওয়ার দিছেÑ কথাটা ভেবে অবাক হয় জগলু। সে জিজ্ঞেস করে, কী খবর রে বন্ধুÑ ইসকুল গেটে ক্যান?
জগাই ডানে বামে তাকিয়ে ইতস্তত করে ফিসফাঁস উত্তর দেয়, ওই যে মিয়্যাডা...
কুন মিয়্যাডা?
লোতুন একখান মিয়্যা, সুন্দরী ফুলমতি।
এই ইসকুল গেটেই বেশ কয়েকবার অপমানিত হয়েছে জগাই। তবু তার খাসলত বদলায়নি। স্থানে-অস্থানে অকাতরে প্রেম বিলিয়ে যাচ্ছে। জগাইকে মনে ধরে জগলু মিয়ার। তার বাপের কথামতো দাওয়াত পাওয়ার উপযুক্ত একটা লোক। তিন নম্বর বেহায়া।
এলাকায় আছে ঘরজামাই মফিজ। লোকটার সীমাহীন ধৈর্য। ক’দিন বেড়াতে এসে গেঁড়ে বসে শ্বশুরবাড়িতে। শালী ক্ষেপায়, শালা ক্ষেপায় তবু মফিজ মিয়া অনড়। বছরের পর বছর গড়ায়। শাশুড়ি-মেয়ে ঝগড়া হয়, শ্বশুর-জামাই মান-অভিমান হয় তদুপরি মফিজ ছাড়ে না তার শ্বশুরবাড়ি মধুর হাঁড়ি। জগলু পাড়াতো জামাই মফিজ মিয়াকে দাওয়াত করে। খুশি হয়ে জামাই বলে, বুঝলা জগলু মিয়া, তুমিই একটা মাত্র লোক যে আমার কদর বুঝল। জগলু মনে মনে বলে, তুমার মুতো বেহায়ারেই তো আমি খুঁজিচ্চি।
পথ চলতে চলতে মনে পড়ে টিভিতে দেখা মেয়েটার কথা। জগলু মিয়া কয়, যে মিয়্যাডা দ্যাশের খায়্যা, দ্যাশের পইরা পরদ্যাশে যায়্যা লিজের দ্যাশের ইজ্জত রক্তাক্ত করি ফালায়, তারে দাওয়াত দেওন লাগবি। আপনেরা যুদি তার খোঁজ জানেন তালে এই জগলু মিয়ারে এট্টু জানায়েন। তালে বাপের কথাখান রক্ষা হয়।
মোটামুটি দাওয়াতি লোকের খোঁজ পেয়ে এবার খুব আরাম বোধ করে জগলু মিয়া।

 


আরো সংবাদ



premium cement