২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

চা

-

রনি তার ফেসবুক আইডির নাম দিয়েছে এনায়েতউল্লাহ। চার মাস আগে তার সাথে পরিচয় আমার। প্রথমে আপনি, পরে সম্পর্ক গভীর হতে হতে আপনি থেকে আমাদের সম্পর্ক ‘তুমি’তে গড়ায়। কুমিল্লার রনি চাকরির পোস্টিং নিয়ে আমাদের জেলা সদরে এসেছে। কী একটা কোম্পানিতে সে কর্মরত। জেলা সদরে আসার তিন দিনের মাথায় একদিন অনলাইনে বলল, ‘আমি তো তোমাদের এখানে চলে এসেছি। একদিন দেখা করো।’
আমি রাজি হলাম। একদিন খাড়া দুপুরে জেলা সদরে গিয়ে রনিকে কল দিলাম। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে দারুণ স্মার্ট এক সুপুরুষ আমার সামনে এসে দাঁড়াল রনির পরিচয় নিয়ে। সাক্ষাৎ-মোলাকাত হয়ে গেল ফেসবুকের কাক্সিক্ষত মানুষটার সাথে। প্রথম সাক্ষাতেই বুঝে গেলাম আমার এই বন্ধুটির ভিতরে এক আন্তরিক মানুষ বাস করে। তা না হলে আমাকে নিয়ে পাশের অভিজাত রেস্টুরেন্টে বিশাল এক ভোজ দেবে কেন? বিরিয়ানি, খাসি, মুরগির বিশাল বিশাল রানের দিকে তাকিয়ে আমি হাজার হাজার মাইল দূরের আমেরিকা শহরের জাকারবার্গকে ধন্যবাদ দিই। বেচারা ফেসবুক আবিষ্কার না করলে আজকের কুমিল্লার কোথাকার রনি আমাকে এই রেস্টুরেন্টে এত এত খানাপিনা...। ওহ মাই গড! রনি বলল, সে নাকি এই রেস্টুরেন্টে রোজ রোজ এগুলো খায়। ও আল্লা গো, এ কোন ধনীর দুলালের সাথে পরিচয় হলো!
বিদায় নেয়ার সময় রনি বেশ দরদি কণ্ঠে বলল, ‘ফ্রেন্ডস্, মাঝে মাঝে এসে আমার সাথে দেখা করবে। দেখা না করলে কিসের বন্ধুত্ব! হা হা হা।’
রনির অট্টহাসির রেশ আকাশে বাতাসে মিশে গেল। ধন্যবাদ মাই ফেসবুক আইডি। তুমি না থাকলে কোথায় পেতাম এমন সোনার মানুষ!
বিদায় নিয়ে বাড়ি চলে এলাম। কিন্তু মন পড়ে রইল রনির কাছে। ও আমাকে এত এত খাওয়াল যে আমি মনে মনে লোভী হয়ে উঠলাম।
লোভ সামলাতে না পেরে দু’দিন পর আবার খাড়া দুপুরে সদরে গেলাম রনির কাছে। ওমা! এবারো একই রেস্টুরেন্টে নিয়ে উচ্চমার্গীয় ভোজ। আবারো মুরগির রান, বিরিয়ানিÑ ঝাক্কানাক্কা অবস্থা। বাপরে বাপ!
২.
এই ভোজের তিন দিন পর আবারো সেই উন্নত রেস্টুরেন্টের খানাপিনার কথা মনে আসতেই জিবে পানি এসে গেল। আবারো খাড়া দুপুরে রনির মুখোমুখি হতে গেলাম। আবারো একই রেস্টুরেন্টে আহ্বান। কিন্তু পরিবর্তন এলো খাবারের ম্যানুতে। সামান্য সবজি আর মুগডাল দিয়ে আপ্যায়ন করে রনি বিদায় দিয়ে দিলো আমাকে।
ঠিক সাত দিন পর একই লোভে খাড়া দুপুরে সদরে গেলাম রনির কাছে। আমি এত ঘন ঘন খানাপিনার লোভে এখানে আসি, সেটা বোধহয় রনি খানিকটা টের পেয়েছে। তা না হলে আমাকে নিয়ে ওই রেস্টুরেন্টে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকবে কেন?
আমি আর রনি মুখোমুখি বসে আছি। সে খাবারের অর্ডার দিচ্ছে না। এদিকে ক্ষুধায় আমার পেট চোঁ-চোঁ করছে। রেস্টুরেন্টের একজন বয় এসে বলল, ‘কী খাবেন স্যার? কাচ্চি বিরিয়ানি দেবো?’
কাচ্চি বিরিয়ানির কথা শুনে আমার জিভে পানি চলে এলো। রনি ক্ষীণ গলায় বলল ‘না, দু কাপ চা দিন।’

বয় হাসি মুখে চা আনতে চলে গেল। রনি নিচু স্বরে বলল, ‘ফ্রেন্ডস্, আমি এখন দুপুরে এক কাপ চা খাই কেবল। শরীর কমাতে এই সিদ্ধান্ত।’
আমি গলা নামিয়ে বললাম, ‘ও আচ্ছা।’
উন্নত রেস্টুরেন্ট থেকে খাড়া দুপুরে শুধু এক কাপ চা খেয়ে দু’জনে বের হয়ে এলাম। কিসের লোভে এলাম আর কি খেলাম! ধুর!
রনি আমার চালাকি বুঝে গেছে বলে গা থেকে ভূত তাড়াতে এক কাপ চা নীতি অবলম্বন করেছে। হায়! ভাবলাম আমিই দুনিয়ার সেরা চালাক। এখন দেখছি আমার চেয়েও দুনিয়ায় আরো বড় চালাক আছে।
এর পর থেকে ফেসবুকে রনির সাথে আমার সম্পর্কে ভাটা পড়ল। আমার কোনো পোস্টে সে আর আগের মতো লাইন কমেন্ট দেয় না। অনলাইনেও নক করলে ম্যাসেস সিন করে না। সিন করলেও রিপ্লাই দেয় না।

 


আরো সংবাদ



premium cement