২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সালেক টি স্টল

-


গ্রামের রাস্তাগুলো এখনো পাকা হয়নি। বহু আগে রাস্তার মধ্যে কিছু ইট বিছানো আছে। তার উপর দিয়েই মানুষ চলাচল করত। গাঁয়ের মেঠোপথ পেরিয়ে ইটের রাস্তা যেখানে শুরু, সেখানে অল্প কয়েকটা দোকান রয়েছে। বেচাকেনা তেমন না হলেও সবসময় মানুষের জট লেগেই থাকে। দোকানগুলোতে সব সময় সিনেমা চলে। সিনেমার দর্শকের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে শুরু করল। রাস্তার মুখে সালেক টি স্টল। এই দোকানটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলছে। এখন যারা এ গ্রামে মুরুব্বি হয়ে গেছে তারা ছোটবেলা থেকেই এই দোকান দেখে আসছে। এখন দোকান চালায় সালেক। এর আগে চালাত তার বাবা, তার আগে চালাত তার দাদা। এভাবে বংশপরম্পরা চলে আসছে। দোকানে মালপত্র তেমন না থাকলেও বিড়ি, সিগারেট সব সময় পাওয়া যায়। দোকানের সামনে লাল কালিতে সালেক টি স্টল লেখা। আগে এই দোকানের কোনো নাম ছিল না। সালেক এসে এ নাম দিয়েছে। সে নিজে বহু কষ্টে লাল রঙ দিয়ে লিখেছে। সকাল থেকে শুরু করে রাত অবধি এই দোকানে সিনেমা চলে। তার দোকানে কেউ সিনেমা দেখতে চাইলে তাকে চা বনরুটি খেতে হবে। না হয় টিভি বন্ধ করে দেয়া হয়। গ্রামের ছোট থেকে শুরু করে বুড়া লোকটাও এখানে বসে সিনেমা দেখে। সিনেমা দেখার ফাঁকে নানান গালগল্পে ব্যস্ত থাকে সবাই। গ্রামের এসব চা দোকান যেন গুজবের আখড়া। অনুমান করে কিছু একটা বানিয়ে সেটা ছড়িয়ে দেয়াই এখানকার মানুষের কাজ। আর এসব গুজবে সালেক হলো অগ্রগামী। এই তো কিছু দিন আগে সফিক মাস্টারের মেয়ে নিধি তার এক কাজিনের সাথে পালিয়ে ঢাকা চলে যায়। সালেক এই খবর ছড়িয়ে দেয় চার দিকে। কেউ এলেই তাকে বলে, সফিক মাস্টারের মেয়ে কাজটা ভালো করছে?
- কী করছে?
- আরে আপনি খবর রাখেন না?
- কী খবর?
- আরে মাস্টার সাবের মাইয়া তার খালাতো ভাইয়ের সাথে ভাইগা গেছে।
- মানে কী?
- হ, ঢাকা পালিয়ে গেছে।
এই কথা বলার মধ্যেই সফিক মাস্টার এসে হাজির। তিনি রেগে বললেন, সালেক, তুই নাকি আমার মাইয়ারে লইয়া বদনামি করোস।
- না স্যার, কী যা-তা বলেন। আমি কেন বদনামি করুম।
- শোন, ভালো হইয়া যা। না হয় তোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিমু।
- কেন স্যার?
- কেন মানে? আমার মেয়েকে আমিই ঢাকা পাঠাই পড়াশোনার জন্য আর তুই কি না যা-তা বলোস।
- স্যার ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দেন।

আজ দোকানে বেচাকেনা ভালো না। সবাই সিনেমা দেখে কিন্তু কেউই কিছু খেতে চায় না। কিছু না খেলে টিভি বন্ধ করে দেয়া হবে বলার পরও কেউ কিছু খাচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে সালেক টিভি বন্ধ করে দেয়। তখন সিনেমা মাত্র কাহিনীর গভীরে প্রবেশ করছে। তার দোকানে বসে টিভি দেখছিল গ্রামের ত্যাড়া যুবক ইকবাল। সবাই তাকে ত্যাড়া ইকবাল বলে। টিভি বন্ধ করে দেয়ায় ত্যাড়া ইকবাল খুব গরম হয়ে যায়। টিভি না চালালে পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ হবে। অবস্থা বুঝে সালেক টিভি আবার চালু করে।
গ্রামের এক বয়স্ক লোক মফিজ। তিনি সালেকের দোকানে প্রায়ই বাকি করেন। আবার টাকা দিয়ে দেন। বেশ কিছু দিন হলো কিছু টাকা বাকি করে সেগুলো দিচ্ছেন না। সালেকের দোকান পার হওয়ার সময় খুব দ্রুত চলে যান। আজ সালেক তাকে ধরে ফেলছেÑ কাকু, আপনি যেভাবে চোরের মতো দৌড় মারেন তা দেখতে খুব খারাপ লাগে।
- কী যা-তা বলোস। চোরের মতো হমু কেন। আমিতো এমনিতেই একটু জোরে হাঁটি।
- যাই হোক, টাকা-পয়সার কী খবর?
- কিসের টাকা?
- যেভাবে কথা বলেন মনে হয় আপনি কিছুই জানেন না। আমার দোকানে বাকি করছেন যে, ওগুলো দিবে কে?
কতাবার্তার মাধ্যমে টাকাগুলো উদ্ধার করে সালেক।
সালেক টি স্টলে প্রতিদিন শত শত গল্প জমা হয়। বেশির ভাগই গুজব হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এখান থেকে।


আরো সংবাদ



premium cement
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে : প্রেস উইং ব্যর্থ টপ অর্ডার, মুমিনুলের ফিফটির পর পথ দেখাচ্ছেন লিটন তেজগাঁওয়ে বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেলজিয়ামের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’ গুমের ঘটনা তদন্তে কাউকে বরখাস্ত করা হয়নি : কমিশন প্রধান দায়মুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিশেষ তদারকি শুরু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সাহস ও অভিজ্ঞতা আমার আছে ইমরানের দলের বিক্ষোভ ঠেকাতে ইসলামাবাদ লকডাউন ডেঙ্গুতে ১ দিনে সর্বোচ্চ ১১ জনের মৃত্যু ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সকল