আজিকে স্বপ্নের দিন
- মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
- ১৮ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম থেকে উঠলাম। ঘড়িতে দেখি সকাল ৮টা বাজে। নিয়ত করেছিলাম, আজ খুব সকালে উঠব। কিন্তু গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে কখন যে উঠতে বেলা হয়ে গেল, টের পাইনি। দিনের শুরুটাই হলো কুফা, জানি না কপালে কী আছে আজ! আজ আমার স্বপ্ন পূরণের দিন। আমাদের এইচএসসির লেজাল্ট বের হবে। ভাবতেই শরীরটা আচমকা মোচড় দিয়ে উঠল। ভোর রাতে স্বপ্নে চায়না ডিম দেখলাম কেন- এর তরজমা জানতে পরিচিত এক জ্যোতিষীর কাছে ফোন দিলাম। জ্যোতিষী বলল, ‘নিজ দিয়ে দেখলে পর দিয়ে যায়। যেহেতু তুমি স্বপ্নে ডিম দেখেছ সুতরাং তুমি রেজাল্ট হিসেবে ডিম পাবে না- এ ব্যাপারে আমি সিউর। ডিম পাবে এটাও সত্যি কথা। তবে তুমি না, অন্য কেউ।’
শুনে মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। একটা ব্রাশ হাতে নিয়ে কামালদের বাড়ি চলে গেলাম। গিয়ে দেখি কামাল অনবরত দৌড়াচ্ছে। পূর্ব থেকে পশ্চিম, পশ্চিম থেকে পূর্বে। বললাম, ‘কামাল, তুইও সকালে ব্যায়াম করিস নাকি।’
কামাল হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ‘আরে না, আমি কখনো ব্যায়াম করি না।’
আমি বললাম, ‘তাহলে এই যে দৌড়াচ্ছিস?’
কামাল বলল, ‘আরে বেটা, আজ আমাদের রেজাল্ট দিবে না? যদি এ প্লাসটা পেয়েই যাই। তাহলে মনের ফুর্তিতে যে দৌড়টা দেবো, তার গতি হবে অন্তত ঘণ্টায় ২০০ মাইল। এই যে এত গতিসম্পন্ন একটা দৌড় দেবো, এটার জন্য প্র্যাকটিস করা দরকার না? কেন তুই প্র্যাকটিস করিসনি?’
মেজাজ গরম হয়ে গেল। ‘বলদ’ বলে চলে গেলাম রাফিদের বাড়ি। রাফির মা আমাকে বললেন, ‘বাজান আহো, রাফি হের রুমেই আছে।’
রাফির রুমে ঢুকে আমি তাজ্জব। রাফি ক্ষণে ক্ষণেই লাফ দিয়ে উঠছে আর হি হি করে হাসছে। বললাম, ‘রাফি তুরে কি ভূতে আছর করছে?’
রাফি বলল, ‘দিলি তো মুডটা নষ্ট কইরা। আরে বেটা আবুল। গোল্ডেন জিপিএ ৫ পাওয়ার পর কিভাবে সেলিব্রেট করব, তার একটা মহড়া আগেই দিয়ে নিচ্ছি।’
‘না, কি সব পাগলদের পাল্লায় পড়লাম’ বলে রাফির রুম থেকে চলে এলাম। আসার রাস্তায় মর্জিনাদের বাড়ি। তার রুমটাও রাস্তার ধারেই। এক চোখ বন্ধ করে আরেক চোখে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি, ওমা! মর্জিনা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মুখ বাঁকিয়ে ডান হাতের দুই আঙুলে ইংরেজি ‘ভি’ দেখাচ্ছে। বিভিন্ন এঙ্গেলে দাঁড়িয়ে সে হাতের দুই আঙুলে ইংরেজি ‘ভি’ দেখাচ্ছে এবং মুখে ভেংচি কাটছে অনবরত। আমি ডাকলাম, মর্জিনা, কী করছ?’
ভূত দেখার মতো চমকে উঠল মর্জিনা। আমায় দেখে মিষ্টি হেসে বলল, ‘বারে, আজকে যদি এ প্লাস পেয়েই যাই, তাহলে কত টিভি চ্যানেল আমাদের ছবি তুলতে আসবে। ভেবেই আমার নাচতে ইচ্ছে করছে, জানো? কত কত খবরের কাগজে আমাদের ছবি ছাপবে। তো একটা সুন্দর পোজ দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া দরকার না? তাই একটু প্রস্তুতি নিচ্ছি আরকি।
‘ঢং’ বলে তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে এলাম। এবার গেলাম রকিদের বাসায়, দেখলাম রকি বসে বসে কী যেন লিখছে। বললাম, ‘কিরে রকি, কী লিখছিস?’
রকি বলল, ‘দোস্ত, আমার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। তাই রেজাল্টের আগেই কোথায় কোথায় যাওয়া যায়, তার একটা তালিকা তৈরি করছি। রেজাল্ট খারাপ হলে বাসায় জায়গা হবে না রে।’
রকির জন্য মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমার স্বপ্নে দেখা ডিমটা নিশ্চয়ই রকি পাবে। রকির পিঠ চাপড়ে বললাম, ‘চিন্তা করিস না, আমরা আছি না। আমাদের বাড়ি চলে আসিস।’
২টা বাজার আর মাত্র কয়েক মিনিট বাকি। আমার প্রেসার আপ-ডাউন করতে লাগল। বুকটা ধুকধুক করতে লাগল। আমি লেফট-রাইট করে পায়চারি করতে লাগলাম। প্রকৃতির ডাকে টয়লেটে গেলাম। না, কিচ্ছু হলো না। ওটা মনে হচ্ছে টেনশনে উপরের দিকে উঠে গেছে। ২টা ৩০ মিনিট বাজে। বাবা গামছা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে এলেন বাড়ি ঢুকলেন। টেনশনে আমার প্যান্ট ভিজে যাওয়া অবস্থা। তিনটা শুকনা ঢোক গিলে বললাম, ‘বাবা আ-মি?’
বাবা বললেন, ‘গোল্ডেন এগ পেয়েছ!’
মনে মনে আওড়ালাম, ‘কী, গোল্ডেন! আমি গোল্ডেন পেয়েছি!!’
নিজের কানেই বিশ্বাস করতে পারছি না। শালিক পাখির মতো ছোট্ট একটি লাফ দিলাম। ‘ইয়াহু’ বলে আবার লাফ দিতে যাবো, এমন সময় বাবা মুখ কালো করে বললেন, ‘চার পায়া ব্যাঙের মতো এত লাফাচ্ছ কেন?’
আমি থমকে দাঁড়ালাম। বাবা চোখ দু’টি গোলগোল করে, মুখখানি চোঙার মতো চোখা করে গদগদ করতে করতে বলল, ‘ডিম পেয়েছ, ডিম! যত্তসব, পড়াশোনা নেই, আবার পাস...’
আমি থ বনে গেলাম, ‘তার মানে স্বপ্নে দেখা সেই চায়না ডিম আমিই পেলাম। তাহলে জ্যোতিষী ব্যটা যে বলল...’